রসালো ও সুস্বাদু ফল লিচুর কথা আসলেই প্রথমেই চলে আসে দিনাজপুরের নাম। কেবলমাত্র জ্যৈষ্ঠ মাস শুরু হয়েছে এরই মধ্যে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর বাজারে দেখা মিলছে লিচুর। প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। এসব অপরিপক্ক লিচু ঝুকি নিয়েই কিনছেন ক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগাম লিচু বিক্রি করলে দাম একটু বেশি পাওয়া যায়। তাই তারা লাভের আশায় আগেভাগে বাগান থেকে এই লিচু সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন।
কৃষি অধিদপ্তর বলছে, লিচুর প্রকৃত সময় আসতে এখনো দুই সপ্তাহ বাকি। আর বর্তমানে বাজারে যেসব লিচু উঠেছে সেগুলো অপরিপক্ক হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি। এদিকে চিকিৎসক বলছেন, অপরিপক্ক লিচু খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ মারাত্মক শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
ফুলবাড়ী পৌর শহরের কালিবাড়ি বাজার এবং নিমতলা মোড়ে এসব লিচু বিক্রি করতে দেখা যায়। এই লিচু দেখে অনেকেই আগ্রহ করে কিনছেনও। অনেকে হাতে নিয়ে দেখছেন, দামও করছেন। কেউ কেউ মুখে দিয়েই, না কিনে ফিরে যাচ্ছেন। কেউ আবার অল্প হলেও কিনছেন।
ক্রেতাদের অনেকেই বলছে, এই লিচুর স্বাদও নেই আবার টক, লিচুগুলো এখনো কাঁচা। রোদের তাপে ওপরে একটু লাল রং ধারণ করেছে। বছরের প্রথম ফল তাই অল্প করে হলেও তারা কিনছেন।
ফুলবাড়ী পৌর শহরের লিচু বিক্রেতা স্বাধীন ও হেলাল জানান, বছরের প্রথম বাজারে লিচু নিয়ে এসেছি। এসব মাদ্রাজি জাতের স্থানীয় লিচু । আগাম লিচু বিক্রি করলে দাম একটু বেশি পাওয়া যায়,লাভ বেশি হয়। তাই তারা বিভিন্ন এলাকায় লিচুর বাগান কিনে লিচু সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘আমরা প্রতি বছর চুক্তিতে বাগান কিনে পরিচর্যা করি। তারপর সেখান থেকে ফল পেড়ে এনে বিক্রি করি। এবছর অতিরিক্ত তাবদাহের কারনে লিচুর ফলন কম,তাই দামও বেশি।
আগাম লিচুর বিষয়ে কথা হয় ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, উপজেলায় ৬৮ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। অল্টারনেট বেয়ারিং এর কারনে আম ও লিচু এক বছর উৎপাদন বেশি হলে প্রাকৃতিকভাবইে পরের বছর ফলন কিছুটা কম আসে। তবে অতিরিক্ত দাবদাহের কারণে কিছুটা ফলন কমেছে।
রুম্মান আক্তার আরও বলেন, ‘লিচু পুরোপুরি পরিপক্ক হতে এখনো ৭ থেকে ১০ দিন সময় লাগবে। এখন বাজারে যেসব লিচু বিক্রি হচ্ছে তা অপরিপক্ক (কাঁচা)।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান এর সাথে কথা হয়। ‘অপরিপক্ব লিচু খেলে ক্ষতি হবে কি না ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে পড়াশুনা করিনি,তাই আমার কিছু জানা নেই। এটি কৃষি কর্মকর্তা বলতে পারবেন।
দিনাজপুর সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম বোরহান-উল ইসলাম সিদ্দিকী জানান,এই লিচুতে যে এনজাইম গুলো দেয়া থাকে,এই এনজাইম গুলো যদি খালি পেটে খায় কেউ,অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় লিচু খেয়ে বাচ্চা মারা যাওয়ার যে খবর আমরা পাই,লিচু থেকেই এই সমস্যাটা হয়।
তিনি আরও বলেন,লিচুতে যে কিটনাশক প্রয়োগ করা হয়,এই কিটনাশকটা সলুশন হওয়ার জন্য একটা সময় দেয়া লাগে। লিচু যদি কিটনাশক যুক্ত অবস্থায় থাকে, তবে এটি মানব দেহের জন্য ভয়ঙ্কর ব্যাপার। এ কারনে কিডনি বিকল হতে পারে,লিভার ডেম্যাজ হতে পারে,ক্যান্সার হওয়ার ঝুকিসহ মারাত্মক শারীরিক সমস্যা হতে পারে। অপরিপক্ক লিচু না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে শিশুদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির।
দিনাজপুর ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগম বলেন,এবিষয়ে আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি বিপনন অধিদপ্তরের সাথে কথা বলে বাজার মনিটরিং করবো।