প্রখর রোদ,তার ওপর নেই বৃষ্টির দেখা। প্রচন্ড তাবদাহ আর ভ্যাপশা গরমে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে,হাসপাতালে বড়েছে রোগীর চাপ।
বইছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপ্রবাহ। এতে অনেকে জ্বর, নিউমেনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এদের মধ্যে বেশি অসুস্থ হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এই গরমে তাদের বাড়তি যতœ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,হাসপাতালে বেড ফাঁকা নেই। জরুরী বিভাগ এবং বহিরবিভাগে রোগীর ব্যাপক চাপ। চিকিৎসকদেরও সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কয়েক দিনের ভ্যাপসা গরমে অসুস্থ হয়ে সর্দি-জ্বর,ডায়রিয়ায়সহ অনন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছেন অনেকেই।
চিকিৎসকেরা বলছেন,তীব্র গরমে পানির চাহিদা বেড়েছে। এসময় তাপ এড়িয়ে ঠান্ডা স্থানে থাকতে হবে। তরল এবং ঠান্ডা জাতীয় খাবার খেতে হবে।
পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন কর্মজীবী মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তাপদাহ বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বেড়েছে ঠান্ডা পানীয় গুলোর। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে শরবত,ডাবের পানি,আখের রস খেয়ে শরীর জুড়িয়ে নিচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ ছায়াযুক্ত স্থানে বিশ্রাম করছেন। প্রচন্ড তাপদাহের কারণে শহরের সড়কগুলোতেও মানুষের উপস্থিতিও ছিল কম।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানাগেছে,বুধবার দুপুর দুইটা পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিরবিভাগে বিভিন্ন রোগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৮৭জন রোগী। জরুরী বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬০জন। ডায়রিয়া রোগে ভর্তি রয়েছেন ১০জন রোগী।
কথা হয় জরুরী বিভাগে দায়ীত্বরত উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা.আব্দুর রউফ এর সাথে। তিনি বলেন,প্রচন্ড গরমে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। অনেকে পেটের নানা সমস্যা নিয়ে আসছেন। তীব্র গরমে গুরুপাক খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। বেশি করে পানি পান করতে হবে। ঠন্ডা জাতীয় পানীয় বিশেষ করে লেবুর শরবত,ডাবের পানি বেশি করে পান করতে হবে। এসময় তাপ এড়িয়ে ঠান্ডা স্থানে থাকতে হবে,সেইসাথে শিশু এবং বয়স্কদের বাড়তী খেয়াল রাখতে হবে।
আবহাওয়া অফিস বলছে,আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই,তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে,সামনের দিনগুলোতে মাঝারি থেকে তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন, বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল ৩টা পর্যন্ত দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দুপুর ১২টা পর্যন্ত ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি বলেন,বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকার কারনে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহে তাপপ্রবাাহ আরও বাড়তে পারে। এরমধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।
পৌর শহরের নিমতলা মোড় এলাকায় ভ্যান-রিকশা মাসুদ রানা,রফিকুল ইসলাম ও ভুট্রু বলেন, ‘ভ্যাপসা গরমে রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। যাত্রীও তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। রোদের কারণে রাস্তায় থাকাই মুশকিল। তারা বলেন, কি আর করবো আমরা গরিব মানুষ,রোজগার না করলে খাবো কি? এটা দিয়েই আমাদের সংসার চালাতে হয়। তার উপর আবার প্রতি সপ্তাহে কিস্তি আছে।
বাসুদেবপুর গ্রামে জমিতে কাজ করা শ্রমিক ফজলু মিঞা বলেন, ‘কড়া রোদ, তিব্র গরমে কাজ করতে পারছি না। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে গাছের নিচে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। আমরা তো গরিব, কাজ না করলে পুরো পরিবার না খেয়ে থাকবে।