Can't found in the image content. ৫১ বছরে বিলীন সুন্দরবনের প্রায় ৩ শতাংশ অঞ্চল | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪ |

EN

৫১ বছরে বিলীন সুন্দরবনের প্রায় ৩ শতাংশ অঞ্চল

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১৪, ২০২৪

৫১ বছরে বিলীন সুন্দরবনের প্রায় ৩ শতাংশ অঞ্চল
বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের দিকে গড়ে ৩টি করে ঘূর্ণিঝড় এগিয়ে আসছে। একটি ঝড়ের ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই সমুদ্রে সৃষ্টি হচ্ছে আরেকটি ঝড়। ফলে পাওয়া যাচ্ছে না প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ও। মানুষের পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে ওঠা এসব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সবসময় বুক চিতিয়ে রক্ষা করে আসছে সুন্দরবন। কিন্তু সেই সুন্দরবন কেমন আছে? 

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবনে বনাঞ্চলের ঘনত্ব কমে যাচ্ছে এবং পানির উৎসগুলিতে বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে আবাসস্থল বিভক্ত হয়ে পড়ছে এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। 

‘রাইজিং টাইডস, রোরিং ফিউচার্স: দ্য সুন্দরবন স কোয়েস্ট ফর সার্ভাইভাল’ শিরোনামে সম্প্রতি পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের করা গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সুন্দরবনের ভূমি আবরণে পরিবর্তন ঘটেছে। ঘন বনের পরিমাণ কমে গেছে, আর জলাভূমির আয়তন বেড়েছে। এটি আবাসস্থল হারিয়ে যাওয়া এবং বিভাজনের ইঙ্গিত দেয়। 

গবেষণাটি আরও জানায়, ১৯৭৩ সালে সুন্দরবনের ৯৪.২% এলাকা ঘন বনাঞ্চলে আবৃত ছিলো, যা ২০২৪ সালে কমে ৯১.৫% হয়েছে। এর অর্থ হলো, কার্বন আত্তীকরণ থেকে উপকূল রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সেবা প্রদানকারী এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতান্ত্রিক এলাকার আয়তন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

গত ৩০ বছরে সুন্দরবনের বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের ক্ষতি হয়েছে ৩.৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যার ৮০% এরও বেশির জন্য ম্যানগ্রোভ অবক্ষয় দায়ী বলে অনুমান করেছেন গবেষকরা।

গবেষণা প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, একই সময়ে সুন্দরবনের জলাভূমির আয়তন ৪.৮% থেকে ৭.৬% বেড়েছে, যা আবাসস্থল বিভাজন এবং জীববৈচিত্র্য হ্রাসের মতো পরিবেশগত উদ্বেগ জন্ম দিচ্ছে। স্যাভানা বনাঞ্চলের পরিমাণ সামান্য কমে ১.০% থেকে ০.৯% হয়েছে, যা মানবসৃষ্ট অভিবাসন বা প্রাকৃতিক বনের গতিশীলতার কারণে বনের সহনশীলতা কমে যাওয়া এবং সম্ভাব্য অবনতির ইঙ্গিত দেয়। তবে বনের জলাভূমির আয়তন বাড়লেও, এই অঞ্চলের ২১০ প্রজাতির মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, মলাস্কা এবং ঝিনুক, ব্যাপকভাবে বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও গবেষণায় তুলে ধরা হয়।

গবেষকরা জানান, সুন্দরবন বর্তমানে যে সমস্ত হুমকির সম্মুখীন সেগুলোও সত্ত্বর বিবেচনা করতে হবে, যেমন বাঘের জনসংখ্যা হ্রাস, সুন্দরী গাছের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, সুন্দরবনের মধু' এর জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি এবং রামপালে কয়লা চালিত তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ।

এ বিষয়ে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জলবায়ু ও পরিবেশ নীতি বিশেষজ্ঞ এম জাকির হোসেন খান বলেন, ‘সুন্দরবন রক্ষা জরুরি এবং এর জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি একটি সীমান্তবর্তী সমস্যা, তাই ক্ষতি ও ক্ষয়পূরণ তহবিলের আওতায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এছাড়াও, স্থানীয়ভাবে দূষণরোধে কাজ করতে হলে, স্থানীয় পরিবেশ ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্তকারী ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানগুলিকে বিকল্প আয়ের উৎস সরবরাহ করতে হবে এবং এলাকায় দূষণকারীদের সরকারি সুবিধা বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবন অঞ্চলে বহুমাত্রিক সমন্বয়ের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, এর মধ্যে রয়েছে সুরক্ষিত এলাকা যৌথভাবে পরিচালনা, সমন্বিত সংরক্ষণ প্রচেষ্টা এবং যৌথ গবেষণা উদ্যোগ। অবৈধ কার্যকলাপ ও বন্যপ্রাণী চলাচল ট্র্যাক করতে ড্রোনসহ ডিজিটাল মনিটরিং এর ব্যবহার করা যেতে পারে। সেন্সর- ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে লবণাক্ততার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা যায় এবং অবৈধ মাছ ধরার বিরুদ্ধে পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও, সুরক্ষিত এলাকা ও বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বিস্তার করা অতীব জরুরি। 

ঐতিহাসিক প্রশাসনিক মডেলগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০% ভূমি ও সমুদ্র রক্ষার জন্য আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলিকে খুব দ্রুত নবায়ন করা উচিত বলেও পরামর্শ দেন এই জলবায়ু ও পরিবেশ নীতি বিশেষজ্ঞ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ও স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও মানুষ্যসৃষ্ট নানান কারণে সুন্দরবন যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এতে বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি বাড়ছে। কারণ সুন্দরবন প্রতিটি দুর্যোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। এখন সেই সুন্দরবন হুমকির মুখে। রক্ষা কবচ নিজেই যদি হুমকির মুখে থাকে তাহলে আমাদের রক্ষা করবে কে? তাই সুন্দরবনকে রক্ষা করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখা দরকার।

তিনি বলেন, সুন্দরবন শুধু বাংলাদেশকেই রক্ষা করে না। এটি বিশ্বেরও রক্ষা কবচ। কারণ সুন্দরবন অনেক কার্বন চুষে নেয়। যার মাধ্যমে লাঘব করে জলবায়ু পরিবর্তনকে। তাই এই বন পুরো বিশ্বের সম্পদ। এটিকে রক্ষা করা পুরো বিশ্বের দায়িত্ব। 

উল্লেখ্য,  ২০১১ সালে সুন্দরবনের গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণে সহায়তার জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিলো। সেই থেকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পরিচিত ১৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়ে আসছে সুন্দরবন দিবস হিসেবেও।