বসন্ত আর ভালোবাসা মিলে আজ উৎসবে মাতবে পুরো দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। আর বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিলো ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর একই দিনে উদযাপন করা হচ্ছে বসন্ত উৎসব আর ভালোবাসা দিবস।
শীতের শেষে আজ এসেছে বসন্ত। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে উচ্ছলতার কণা। পাতাঝরার দিনে ভালোবাসার ডাক শুনে ঘুমন্ত মনপ্রাণ যেন জেগে উঠেছে। প্রকৃতির এ জাগরণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরব হয়েছে মানবকূলও।
কবি শামসুর রাহমানের ভাষায়, ‘গাছের শাখায় ফুল হাওয়ার সংস্রবে/যখন নীরবে দিব্যি সানন্দে দুলতে থাকে, পথচারী/অথবা জানালা-ধরে-থাকা যুবতীর চোখ পড়ে/ কে জানে কী ছবি সব দোলে কিছুক্ষণ!/ বসন্তের মায়া রয়ে যায় বাস্তবিক নানাভাবে।’
অন্যদিকে প্রেমের কবি নির্মলেন্দু বলেছেন, ‘তোমার হাতের মৃদু কড়া নাড়ার শব্দ শুনবার জন্য/দরোজার সঙ্গে চুম্বকের মতো আমার কর্ণযুগলকে/গেঁথে রেখেছিলাম। কোনো নির্জন মধ্যরাতে তুমি এসে/ডেকে বলবে: এই যে ওঠো, আমি এসেছি, আ-মি।’
কবিতার পঙ্ক্তির মতোই বসন্ত ভালোবাসায় একাকার হয়ে যাওয়ার দিন এসেছে। আজ বসন্ত। আজ ভালোবাসার দিন।
উত্তরের শীতল বাতাস এখন বইলেও রোদের ঝলকানি শুরু হয়ে গেছে। আর তাতে ভর করেই বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে আজ পহেলা ফাগুনের দিনে হবে ভালোবাসার জয়গান। হৃদয়ে হৃদয় আর হাতে হাত রেখে আজ যুগলরা একে অপরকে ভালোবাসার উষ্ণ আলিঙ্গন জানিয়ে বলবে- হ্যাপি ভ্যালেনটাইনস ডে।
আরও কয়েকদিন আগে থেকেই রাজধানীসহ দেশের নানা জায়গায় শুরু হয়েছে বসন্তের আবহ। তবে আজ হবে প্রকৃত অর্থেই পহেলা ফাল্গুন ও ভ্যালেন্টাইনস ডে উদ্যাপন। তরুণীরা বাসন্তী রংয়ের শাড়িতে খোঁপায় হলুদ গাঁদা আর মাথায় ফুলের টায়রায় সাজাবে নিজেদের। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তরুণরাও ধরা দেবে হলুদ পাঞ্জাবি সমেত একরাশ ফাল্গুনি সাজে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রবীন্দ্রসরোবর, হাতিরঝিল, রমনা পার্ক, চন্দ্রিমা উদ্যান সর্বত্রই তারুণ্যের জোয়ারে ভাসবে। ঢাকার বাইরেও জেলা শহর ও নানা জায়গায় বিশেষ করে ক্যাম্পাস ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো থাকবে তরুণদের দখলে। পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসার দিনে প্রেমিক-প্রেমিকারা পরস্পরের শুভেচ্ছায় সিক্ত হবে। ফুল, চকলেট বিনিময়ের পাশাপাশি কবিতা ও ছন্দমিশ্রিত খুদেবার্তায় ভরে যাবে মোবাইল ফোনের ইনবক্স। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে যাবে পরানের গহিনের উষ্ণতা। বসন্ত ও ভালোবাসার দিনে সবাই ছুটবে অমর একুশে বইমেলায়। বসন্ত ও ভালোবাসাকে ঘিরে তারুণ্যের এ জোয়ার প্রকৃতপক্ষে চলবে বইমেলার বাকি সময়টা জুড়েই।
আজ সকাল ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে উদযাপিত হবে বসন্ত উৎসব। বরেণ্য সেতারবাদক জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘রাগ বসন্ত মুখারী’ বাদনে শুরু করবেন এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ঢাকার বিভিন্ন সংগীত ও নৃত্য দলের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর পরিবেশনা ছাড়াও বসন্তকথন পর্ব আয়োজিত হবে। উৎসবে প্রীতিবন্ধনী ও আবির বিনিময়ের পর্ব থাকছে।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সকাল ১০টায় বসন্ত আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হবে। শোভাযাত্রাটি চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার চারুকলায় ফিরে আসবে। বসন্ত উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে বেলা সাড়ে ৩টায়। বেঙ্গল পরম্পরার যন্ত্রসংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এই পর্ব।
গান, আবৃত্তি, নৃত্য পরিবেশনা থাকবে এ পর্বেও। প্রতিবছরের মতো এবারও বেলা সাড়ে ৩টায় পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ্ পার্ক ও উত্তরা দিয়াবাড়ীর লেকসংলগ্ন মাঠে বসন্ত উৎসব উদ্যাপন পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।
শিল্পকলা একাডেমির বসন্ত উৎসবের আয়োজনটি শুরু হবে বেলা ৩টায়। ঢাকার রমনা পার্কের শতায়ু অঙ্গনে এ আয়োজনে থাকবে আলোচনা সভা ও বসন্ত নৃত্য। পরে শিল্পীদের শোভাযাত্রা যাবে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। একাডেমির নন্দন মঞ্চে পরে সাংস্কৃতিক পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
সমগীতের বসন্ত উৎসব শুরু হবে সকাল ৯টা থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলায় এ আয়োজনে গাইবেন কফিল আহমেদ, সায়ান। এছাড়া গানের দল লীলার পরিবেশনা থাকবে।
ঢাকার পরীবাগে সংস্কৃতি বিকাশকেন্দ্রে বসন্ত বরণের আয়োজন শুরু হবে বেলা ৩টায়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বসন্ত বরণের আয়োজনটি শুরু হবে দুপুর ১২টায়। শিল্পকলা একাডেমির বাউল শিল্পীরা বাংলার লোককবিদের গান পরিবেশন করবেন। সংগীতায়ন ছায়ানটের বসন্ত উৎসব উদযাপিত হবে ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়।