ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

লক্ষ্মীপুরে ঢাবি উপাচার্য যে বক্তব্য দিলেন

জিহাদ হোসেন রাহাত, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি | আপডেট: সোমবার, ফেব্রুয়ারী ৫, ২০২৪

লক্ষ্মীপুরে ঢাবি উপাচার্য যে বক্তব্য দিলেন
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে এক যুগপূর্তি উৎসব ও দ্বিতীয় পুনর্মিলনী উদযাপন করেছে জেলার চর্চিত বিদ্যাপীঠ প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। 

শনিবার (৩রা ফেব্রুয়ারী) ছিলো শিক্ষাঙ্গনটির  যুগপূর্তির চারদিনের অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন। এদিন সকাল সাড়ে আটটায় ক্যাম্পাসটিতে হাজির হয় সাবেক বর্তমান মিলিয়ে তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। 

পরে বেলা সাড়ে এগারোটায় কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া, জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে তৃতীয় দিনের প্রথম পর্ব শুরু হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মু. নুরুল আমিন বলেন, আজকের শিক্ষার্থীরাই দেশ গড়ার যোগ্য কারিগর। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তরুণদের শিক্ষিত, বিজ্ঞানমনস্ক এবং দক্ষতায় স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

এদিন অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশনের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী, বিউবিটির প্রো ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. আলী নূর, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাইন উদ্দিন পাঠান। জহিরুল গ্রুপের সিইও লায়ন জহিরুল ইসলাম, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র মিত্র, রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন, বেগম রোকেয়া পদক প্রাপ্ত এভারেস্ট জয়ী নারী নিশাত মজুমদার, রায়পুর পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট প্রমুখ। 

এছাড়াও অনুষ্ঠানে ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষকবৃন্দ, জেলার রামগতি, রামগঞ্জ, কমলনগর, রায়পুর ও জেলা সদরের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, সুশীল সমাজ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লায়ন জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি রায়পুরের সন্তান। প্রিন্সিপাল কাজী নুরুল ইসলাম ফারুকী স্যারের এই প্রতিষ্ঠানের জন্য শুভ কামনা রইলো। 

পর্যায়ক্রমিক বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নিশাত মজুমদার বলেন, আমি মোটিভেশনাল বক্তা নই। প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরাই আজ আমার অনুপ্রেরণা। স্বপ্ন দেখা বন্ধ করা যাবে না। হতাশ হবেন না। জীবনে জয় হবেই। আঘাত-প্রতিঘাতের কাছে মাথানত করা যাবে না।

বক্তব্যে রায়পুর পৌর মেয়র গিয়াস উদ্দিন রুবেল ভাট বলেন, বাবার স্বীদ্ধান্তে ফারুকী স্যারের প্রতিষ্ঠিত ঢাকা কমার্স কলেজ আমি পড়তে পারিনি। তবে আজ আমার জনপদে আমার স্বপ্ন বাস্তব রূপ লাভ করেছে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। এগিয়ে যাক প্রিন্সিপাল কাজী কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্বপ্ন দেখা বন্ধ করবেন না। চেষ্টা করলে লক্ষ্যে অবশ্যই পৌছাবেন।

চলমান ধারায় প্রথম অধিবেশনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর মাইন উদ্দিন পাঠান বলেন, আমি রায়পুরে পড়েছি। রায়পুর তথা লক্ষ্মীপুরে এমন একটি সৌরভ ছড়ানো প্রতিষ্ঠান হবে তা আমরা ভাবতে পারিনি। আমি শিক্ষার্থীদের বলবো, আজকে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যদি তোমরা না নিতে পারো তবে আগামী দিনের উন্নত ও কল্যাণমুখী বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে না। মঙ্গলের পথে এগিয়ে যাক প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এগিয়ে যাক আগামীর বাংলাদেশ।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্যে নাজমা বিনতে আমিন বলেন, যুগে যুগে কিছু মানুষের কর্মের কারণেই এগিয়ে যায় সমাজ। কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করছি রায়পুরের প্রত্যন্ত এলাকা খাসেরহাটের সন্তান প্রফেসর কাজী নুরুল ইসলাম ফারুকী স্যারকে। তার প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠান ছড়াচ্ছে আলো। এগিয়ে যাক আলো ছড়ানো এই প্রতিষ্ঠান। 

এসময় বিইউবিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলী নূর বলেন, পৃথিবীর কিছু মানুষ থাকে যারা সৃষ্টি করেন৷ তেমনই একজন কীর্তিমান মানুষ প্রফেসর কাজী নুরুল ইসলাম ফারুকী স্যার। উনার প্রতি আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ তাকে রোগমুক্তি দান করুক। 

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল বাকী বলেন, সোনার মানুষ তৈরি না হলে সোনার দেশ তৈরি হয় না। সোনার মানুষ তৈরি হয় সুন্দর অভ্যেসের দ্বারা। শুভ কামনা সবার জন্য।

গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্ম থেকে আমি জড়িত। প্রফেসর কাজী নুরুল ইসলাম ফারুকী স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা। 

প্রথম অধিবেশনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বর্তমানে আমরা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগে বসবাস করছি। এই যুগে আমরা সবাই সচেতন। প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজ একজন স্বনামধন্য মানুষের কারণে আজ এই অবস্থানে রয়েছে।  এমনটি তখনই সম্ভব হয় যখন একটি প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা থাকে। বারো বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি আজ যে পর্যায়ে এসেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। উন্মুক্ত পাখির মতো শিক্ষার্থীদের বিচরণের সুযোগ রয়েছে এখানে। আমি এখানে কালচারাল ডাইভার্সিটি লক্ষ্য করেছি। পৃথিবীতে সাত হাজারেরও বেশি ভাষা আছে। প্রতি বছর বিশটির মতো ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। ভাষার মাসে এই যে, আমাদের ভাষা শহীদ সালাম,বরকত,রফিক, জব্বাররা  ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলাসহ সারা বিশ্বের মানুষের ভাষার  অধিকারের জন্য লড়াই করেছে তাদের অর্জন ও ত্যাগ ভুলবার নয়। তাদের অবদানের বিষয়টিও কালচারাল ডাইভার্সিটির অংশ। শুভ কামনা প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য।

প্রথম ও দ্বিতীয় অধিবেশনে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে যুগপূর্তি ও পুনর্মিলনীর ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, গুবাক তরু ও জার্নালের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

প্রথম অধিবেশনের দুপুর দুইটা নাগাদ অতিথিদের হাতে স্মারক ও ক্রেস্ট তুল দেন প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। একই সময় প্রতিষ্ঠানে বারো বছর চাকুরী করা শিক্ষক, কর্মচারীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।

সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর কাজী নুরুল ইসলাম ফারুকী কল্যাণ ট্রাস্টের কো-চেয়ারম্যান ডাক্তার কাজী নুর-উল ফেরদৌস রবি বলেন, আজকে অতিথিরা দেখলেন আমাদের শিক্ষার্থীদের সুশৃঙ্খল আচরণ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত অতিথিসহ সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ।

তৃতীয় দিনের এই অনুষ্ঠান পর্বে দুপুরের খাবারের পর প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ভোজ ও সার্বিক নিমন্ত্রণ পর্বসহ প্রথম অধিবেশন শেষ হয়।

দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন লক্ষ্মীপুর দুই আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজ আমাদের গর্ব। আমাদের জন্য উদাহরণ। শুভ কামনা সব সময়। 

এ অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, রায়পুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদ। ভাইস চেয়ারম্যান মারুফ বিন জাকারিয়া প্রমূখ। এসময় স্বপ্নীল এক যুগ ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। 

পরে অনুষ্ঠানের অতিথিদের হাতে ক্রেস্ট ও উপহার তুলে দিয়ে শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা উপভোগ করেন মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক কন্সার্ট পরিবেশনা।

দিনব্যাপী চলা অনুষ্ঠানে প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের যুগপূর্তি ও পুনর্মিলনীর তৃতীয় দিনের দুই পর্বের এই অনুষ্ঠান সন্ধ্যার খানিক পর শেষ হয়।

প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ড, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা এদিন উপস্থিত ছিলেন।