সিলেটে ভরা শীত মৌসুমে সবজির দাম কাম থাকলেও নতুন বছর সবজি মৌসুমে কমে না সবজির দাম। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনয়ি দ্রব্যেও মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোন ভাবেই স্বস্তি ফিরছেনা বাজারে। অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে কোন কোন পণ্যের দাম বেড়েছে, সেটা এখন হিসাব করা বেশ কঠিন। তবে মোটা দাগে বলা যায়, দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যেরই।
সিলেটের বিভিন্ন বাজার ঘুওে দেখা যায়, গত কয়েক দিনে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। আটা-ময়দা ও ডালের দাম এক লাফে কেজিতে ১০ টাকা ও তেলের দাম লিটার প্রতি ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
শুধু এই কয়েকটি পদ নয়, দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে প্রায় সব ধরনের শাক-সবজি, ব্রয়লার মুরগি, ফার্র্মের ডিম, আদা-রসুনসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যও।
শনিবার সকালে বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। নিত্যপণ্যের হঠাৎ এমন দাম বৃদ্ধিতে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
বাজারে আসা এক ক্রেতা বলেন, নতুন বছরে অফিসের বেতন না বাড়লেও বাসা ভাড়া ও বাজারের খরচ ঠিকই বেড়েছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের অবস্থা খুবই খারাপ। চাহিদা মতো খাওয়া-দাওয়া আগেই ছেড়ে দিয়েছি, এখন আবার নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। নতুন সরকার যদি সচেষ্ট ও আন্তরিক থাকে, তাহলে হয়তো দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে। সরকারের কাছে এটাই আমার আকুল নিবেদন, যেন সব পণ্যের দাম কমে যায়।
চালের দাম কমেনি ভোটের পর থেকে দেশে চালের বাজার উত্তপ্ত। কেজি প্রতি ৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যদিও গত মাসে রেকর্ড পরিমাণে আমন ধান উৎপাদন হয়েছে, তাতে বাজারে সরবরাহের কোনো টান নেই। তারপরও উৎপাদন গ্রাম থেকে নগর সব জায়গায় বেড়েছে চালের দাম।
বাজারে দেখা গেছে, সরু (মিনিকেট) চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। মাঝারি (বিআর-২৮, পায়জাম) চালের কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। এছাড়া মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করর্পোরেশন অব বাংলাদেশ'র (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম ৫ দশমিক ৩৮, মাঝারি চাল প্রায় ৩ এবং মোট চালের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।
মুদি বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। বেড়েছে মসুর ডালের দামও। প্রতি কেজি ভালো মানের মসুর ডাল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের থেকে ১০-১৫ টাকা বেশি।
সবজি বাজারে এখন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা দরে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা। এলসি পেয়াঁজ ১২৫ টাকা। একই সঙ্গে রসুনের দাম ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং আদার দাম ২ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়েছে। বাজারে এখন প্রতি কেজি আদা এবং রসুন একই দামে ২০০ থেকে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভরা শীতে সবজীর বাজারেও হতাশার চিত্র। বাজার ঘুওে দেখা যায়, মুলা ও পেপে ছাড়া প্রায় সব ধরনের সবজি কেজি প্রতি ৬০ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। ভরপুর শীতে বাজারে শিমের দামও চড়া প্রতি কেজি ৬০ টাকা। আর মাঝারি আকারের একটি লাউয়ের দাম ৮০ টাকা, বড় হলে ১০০ টাকাও বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আসা এক ক্রেতা বলেন, ভরা মৌসুমে শীতকালীন সবজির দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে এসে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, এখন এতো দামে সবজি বিক্রি হওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। বাজারে সাংঘাতিক ভাবে সিন্ডিকেট কাজ করছে। যা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। যে কারণে এ পরিস্থিতি।
তবে সবজির দাম বাড়ার পেছনে কুয়াশাকে দায়ী করেছেন বিক্রেতারা। তারা বলেন, গত কয়েক দিন ধরে বেশি কুয়াশা পড়ছে। এতে নির্ধারিত সময়ে পণ্যবাহী ট্রাক আসছে না। সে কারণে তুলনামূলক বাইরের পণ্য কম আসছে। যা আসছে তা সিলেটের লোকাল সবজী। এছাড়া বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকের অনেক সবজি নষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাবও পড়েছে বাজারে।
এদিকে, গত সপ্তাহে হুট করেই ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০-২০০ টাকা। যা গত মাসে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকার মধ্যে ছিল। সোনালি জাতের মুরগির দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায়।