সে এক দুর্দান্ত সময় ছিল, যখন মাথার মাঝ বরাবর সিঁথি আর কপালের দুদিকে নেমে আসা চুলের তরুণরা শহর-গ্রাম দাপিয়ে বেড়াত। মুখে মুখে ফিরত ‘তেরে নাম’ গান। ১৭ বছর আগে মুক্তি পেয়েছিল বলিউড সুপারস্টার সালমান খান অভিনীত ‘তেরে নাম’। এই ছবিতে সালমান তাঁর লুক নিয়ে বেশ নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন। মাঝ বরাবর সিঁথি আর কপালের সামনে ঝুলে থাকা চুলের সালমান তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
শুধু সালমানের লুকই নয়, তাঁর রাধে মোহন চরিত্রটিও তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সতীশ কৌশিক পরিচালিত ‘তেরে নাম’-এ সালমানের নায়িকা হয়েছিলেন ভূমিকা চাওলা, দক্ষিণী চলচ্চিত্র অঙ্গনে যিনি এখন খ্যাতনামা অভিনেত্রী। প্রতিপক্ষের আক্রমণের পর যখন সালমান ওরফে রাধে মোহন স্মৃতিভ্রষ্ট হন, তখন ভেঙে পড়েন ভূমিকা ওরফে নির্জরা। প্রেমিকার মৃত্যুর পর ভয়াবহ জীবনের মুখোমুখি হয় নায়ক। তার আগে সালমানের ‘স্টাইলিশ গুণ্ডাগিরি’র প্রেমে পড়েন দর্শক!
রাধে পাড়ার মাস্তান হলেও তাঁর ছিল কোমলমতি হৃদয়। পুরোহিতের মেয়ে নির্জরার প্রেমে পড়েছিলেন। নির্জরার পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেয় না। স্থানীয় গুণ্ডাদের আক্রমণে গুরুতর জখম হয়ে রাধেকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। পরে অভিনেতা রবি কিষাণ ওরফে রামেশ্বরকে বিয়ে করতে বাধ্য হওয়ায় নির্জরা আত্মহত্যা করেন। রাধে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসে নির্জরার মৃত্যু দেখে ফের চলে যান মানসিক হাসপাতালে! এই গল্প আর সুন্দর চিত্রায়ণে আবেগমথিত হয় দর্শকের মন। ভেঙে পড়েন তাঁরাও!
‘তেরে নাম’ পরিচালনা করেছিলেন সতীশ কৌশিক। দীর্ঘদিন ধরেই ভক্তকুলে অপেক্ষা, কবে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখা হবে ‘তেরে নাম টু’, কবে তাঁরা নতুন স্টাইলে ফিরে পাবেন ভাইজান সালমানকে। গেল বছর এর সিক্যুয়েল নির্মাণের খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলেও আজও আলোর মুখ দেখেনি। তবে আলোচনা থেমে নেই। এবার ১৭ বছর আগের এই সুপারহিট ছবি নিয়ে নতুন আলোচনা উসকে দিলেন খোদ পরিচালক সতীশ কৌশিক।
আজ মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) হিন্দুস্তান টাইমস প্রতিবেদনে জানিয়েছে, নির্মাতা ও অভিনেতা সতীশ কৌশিক বলেছেন, ‘তেরে নাম’ ছবিতে নারীর ওপর যে কর্তৃত্ব দেখানো হয়েছিল, তাতে নাখোশ ছিলেন সালমান খান। সম্প্রতি নিজের জন্মদিন উদযাপন করেন সতীশ। স্মরণ করেন ওই ছবির শুটিংয়ের দিনগুলো। জানান, সালমান জানতেন এ ছবি দর্শক পছন্দ করবেন, তবে তাঁর ভয় ছিল, ছবির মাধ্যমে ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে।
হালে শহিদ কাপুর-কিয়ারা আদভানি অভিনীত ‘কবির সিং’ মুক্তি পেলে সম্পর্কে সহিংসতা নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়। নারীবাদীদের অভিযোগ, এ ছবিতে নারীর প্রতি সহিংসতা দেখানো হয়েছে। বলিউড লাইফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সতী কৌশিক বলেন, ‘তেরে নাম’ ও ‘কবির সিং’-এর মধ্যে কিছু সাদৃশ্য রয়েছে।
‘আপনি হয়তো বিশ্বাস করবেন না, যখন ছবির শুটিং হয়, সালমান আমাকে বলেছিলেন, দর্শক এ ছবি গ্রহণ করবে, কিন্তু আমরা তরুণদের কাছে ভুল বার্তা দিচ্ছি। যে ধরনের চরিত্র তরুণদের ভুলভাবে প্রভাবিত করবে, তা আমরা দেখাতে পারি না। পর্দায় ভক্তরা কী দেখছেন, তা নিয়ে খুব সচেতন সালমান,’ বলেন সতীশ কৌশিক।
সতীশের মত, সিনেমায় সব ধরনের চরিত্রই থাকা উচিত। তবে এটা নিশ্চিত করতে হবে, নেতিবাচক চরিত্র যেন শেষ পর্যন্ত জয়ী না হয়। যেমন, ওই ছবিতে সালমানের চরিত্র শেষ দিকে শাস্তি ভোগ করে।
৫৪ বছর বয়সী তারকা সালমানের অন্যতম সুপারহিট সিনেমা ‘তেরে নাম’। বক্স অফিসে খুব ভালো ব্যবসা করেছিল ছবিটি। আর এই ছবিতে তাঁর পারফরম্যান্স দর্শকহৃদয়ে চিরস্মরণীয়। ছবিতে তাঁর লুক এখনো ভক্তমনে জ্বলজ্বল। সিনেমার গানও ভীষণ জনপ্রিয় হয়। ‘লগন লাগি’, ‘কিঁউ কিসি কো’, ‘ওড়নি’, ‘তুমসে মিলনা’র মতো গান দারুণ জনপ্রিয় হয় সে সময়। সিনেমার সংগীত পরিচালক ছিলেন হিমেশ রেশমিয়া। দর্শক এর দ্বিতীয় পর্ব দেখার জন্য আগ্রহভরে অপেক্ষা করছেন।