ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

যে কারণে একক আধিপত্য হারাচ্ছেন মমতাজ

জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: বৃহস্পতিবার, জানুয়ারী ১৮, ২০২৪

যে কারণে একক আধিপত্য হারাচ্ছেন মমতাজ
সদ্যসমাপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ-২ (সিংগাইর-হরিরামপুর-সদরের তিনটি ইউনিয়ন) আসনে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর কাছে ৬ হাজার ১৭১ ভোটে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের একক আধিপত্যের অধ্যায় শেষ হয়ে যাচ্ছে এলাকা থেকে।

নির্বাচনে দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলু ট্রাক প্রতীকে পান ৮৮ হাজার ৩০৯ ভোট। আর নৌকা প্রতীক নিয়ে মমতাজ বেগম পান ৮২ হাজার ১৩৮ ভোট। তবে মমতাজ বেগমের নির্বাচনি এলাকার নিজ উপজেলা সিংগাইরে ঘটে ভোটের ভয়াবহ ফলাফল বিপর্যয়।

নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের এ ফল বিপর্যয় বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল। এর মধ্যে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতা, আত্মীয়করণ ও পদ বাণিজ্য, নৌকা প্রতীকের নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানদের অসম্মান, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গোলাম মহিউদ্দিনকে কটাক্ষ করে বক্তব্য প্রদান।

এছাড়াও বিতর্কিত ব্যক্তিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া এবং দীর্ঘ ১৫ বছরে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না করা অন্যতম কারণ।

সেই সঙ্গে তার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বও সামনে চলে এসেছে। এর মধ্যে নিজের সৎমা ও তিন বোনদের খোঁজখবর না নেওয়া এবং তাদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করায় নির্বাচনে তারা প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এসব ঘটনাই আজ তার অধঃপতনের কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই।

এছাড়া সিংগাইরে মডেল মসজিদ, মিনি স্টেডিয়াম, খেলাঘর ও ডাকবাংলো নির্মাণ করতে না পারা এবং ভাষাশহিদ রফিক সেতুর টোলমুক্ত করতে না পারাকে অনেকেই তার ব্যর্থতা বলে মনে করছেন।

মমতাজ বেগম সংসদ সদস্য হওয়ার পর গত দুই মেয়াদে রয়েছেন সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটিতে প্রয়াত স্বামীর ভাগ্নে শহিদুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক বানান তিনি। এবার উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন তার ছোট মেয়ে রাইসা রোজ ও নিজ ইউনিয়ন জয়মন্টপ ছাত্রলীগের সভাপতি পদে রয়েছে আপন বড় ভাই এবারত হোসেনের ছেলে ফিরোজ কবির।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে মমতাজ বেগম সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হন। পরবর্তীতে ২০১৪ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও ২০১৮ সালে দলের টিকিট নিয়ে মানিকগঞ্জ-২ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করেন। দ্বাদশ নির্বাচনে নৌকার টিকিট বাগিয়েও শেষ রক্ষা হলো না মমতাজের।

সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, মমতাজ বেগম এ আসনে নানান কারণে মানুষের কাছে বিতর্কিত এটা কারো অজানা নয়। তিনি আমাদের সিংগাইর আওয়ামী লীগকে পারিবারিক লীগ বানিয়ে ফেলেছেন। তিনি নিজে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন। এছাড়া দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ত্যাগী নেতা মাজেদ খানকে সরিয়ে প্রয়াত স্বামীর ভাগ্নে শহিদুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। এমন অনেক রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী তাকে ছেড়ে দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন।

রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে ভাটার বিষয়ে জানতে মমতাজ বেগমের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে না পাওয়া গেলেও পরাজয়ের পর গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, কালো টাকার প্রভাব ও নির্বাচনের দিন দুপুরের পর বলধারা এবং বায়রা ইউনিয়নে ভোট সিল মেরে টুলু জয়ী হয়েছেন। আগে সতর্ক হলে এমন পরিস্থিতির শিকার হতেন না। ভোটের পর তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে ইতোমধ্যে পুলিশকে আলটিমেটামও দিয়েছেন তিনি।