৫৫ হাজার ২৮৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত কানাডার একটি দ্বীপ হচ্ছে ওক আইল্যান্ড। দ্বীপটির বাসিন্দা পাঁচ শতাধিক কীটপতঙ্গ ও পাখি। কিন্তু গুপ্তধন শিকারীদের বিশ্বাস ও কথিত রয়েছে, এই দ্বীপে মাটির অনেক গভীরে লুকনো রয়েছে বিপুল ধনসম্পদ। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এই দ্বীপে। এই লুকানো সম্পদের লোভে প্রাণ গিয়েছে অনেক মানুষের। তবে আজ পর্যন্ত রহস্যের সমাধান কেউ করতে পারেননি। উদ্ধার হয়নি গুপ্তধনও।
২০০ বছরেরও অধিক সময় ধরে মানুষ গুপ্তধনের সন্ধানে অক আইল্যান্ডে ছুটে গেছে। তবে এর শুরুটা হয়েছিল ১৭৯৫ সালে ড্যানিয়েল ম্যাকগিনিস নামে এক যুবকের দ্বীপটি অতিক্রমের মধ্য দিয়ে। ষোলো বছর বয়সী এই বালক দ্বীপটি অতিক্রম করার সময়ে অদ্ভুত কিছু দেখতে পান। দ্বীপে তিনি আলো জ্বলতে দেখেছিলেন। সেই আলোর উৎস খুঁজতে খুঁজতে পর দিন দ্বীপের একটা অংশে পৌঁছে দেখেন, সেখানে রয়েছে ১৩ ফুট পরিধির এক বিশাল গর্ত। গর্তের আশেপাশের ওক গাছগুলোকে কেটে ফেলা হয়েছে। ম্যাকগিনিস ধারণা করেন যে সেখানে রহস্যজনক, মূল্যবান কিছু লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
ঠিক পরদিন আরও দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে তিনি জায়গাটা খুঁড়তে শুরু করেন। কিছুদূর খনন করার পর তারা দেখতে পেল যে মাটিতে এক ধরনের চিহ্ন রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তারা আর বেশিদূর খনন করতে পারেনি। কেননা গর্তে সমতল পাথর এবং লগ ছিল, কিন্তু তাদের কাছে উপযুক্ত খুঁড়ার জিনিস ছিল না।
এই বিপুল সম্পদের উৎস সেখানে কিভাবে আসল? কেউ কেউ মনে করেন, শত শত বছর আগে জলদস্যুরা তাদের লুঠ করা যাবতীয় সম্পত্তি এই দ্বীপে লুকিয়ে রেখেছিল। তবে সেটা কতটা, তার প্রমাণ আজও মেলেনি। ওক আইল্যান্ডে বিছিয়ে রাখা সম্পদের ফাঁদে পড়ে একাধিক মানুষের প্রাণ গিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬ জন মানুষ মারা গিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়।
তবে প্রকৃতপক্ষে এই দ্বীপে আসলেই সম্পদ রাখা আছে কিনা সে ব্যাপারে সঠিক কোনো তথ্য আজও পাওয়া যায় নি। তবে দ্বীপটিকে ঘিরে রহস্যের শেষ নেই।
ম্যাকগিনিস ও তার বন্ধুদের মাটি খুঁড়ার ঘটনাটির খবর ছড়িয়ে পড়েলে গুপ্তধন খুঁজতে বহু লোক সেখানে গিয়েছেন। বহু তাবড় তাবড় কোম্পানি ঘুরে গিয়েছে এই দ্বীপে। ওই জায়গায় বহু খোঁড়াখুঁড়ি চলেছে। ৩০ ফুট থেকে সেই গর্ত ৯০ ফুট পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছে। কিন্তু কিছুই উদ্ধার করা যায়নি। প্রতি ১০ ফুট অন্তর কাঠের স্তর পাওয়া গিয়েছে শুধু।
৯০ ফুট খোঁড়ার পর প্রথম লুকনো সম্পদের আভাস পাওয়া যায়। ঠিক টেবিলের মতো চারকোণা একটা কালো বড় পাথর উদ্ধার হয়। তাতে অদ্ভুত হরফে কিছু লেখাও ছিল।
দীর্ঘ গবেষণা করার পর এক ঐতিহাসিক জানান, তাতে লেখা রয়েছে, ‘৪০ ফুট নীচে ২০ লাখ পাউন্ড পোঁতা রয়েছে।’ অর্থাৎ, ৯০ ফুট খোঁড়া হয়েছিল, আরও ৪০ ফুট মিলিয়ে মোট ১৩০ ফুট নীচে ওই গুপ্তধন লুকনো রয়েছে।
আবার শুরু হল খোঁড়া। কিন্তু বেশি দূর আর যেতে হলো না। অপ্রত্যাশিত ভাবে গর্তে পানি ভরতে শুরু করে। ফলে লোকজনও কাজ ফেলে উপরে উঠে আসেন। স্বাভাবিকভাবে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত গর্ত পানিতে ভরে যায়। পাম্প চালিয়েও সেই পানি বের করে খোঁড়ার কাজ আর শুরু করা যায়নি। সেটা ছিল ১৮০৫ সাল। অনস্লো নামে এক কোম্পানি তখন খোঁজ চালাচ্ছিল গুপ্তধনের। সেই থেকে পরবর্তী ৪০ বছর আর খোঁজা হয়নি গুপ্তধন।
১৮৪৫ সালে অন্য একটি সংস্থা খোঁড়ার কাজ শুরু করে। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ১১৪ ফুট পর্যন্ত খুঁড়তে পেরেছিল তারা। কিন্তু ১৩০ ফুট গভীরে আর পৌঁছনো যায়নি।
আজ পর্যন্ত কেউই ১৩০ ফুট গভীরে পৌঁছতে পারেননি। উল্টে এই গুপ্তধনের ফাঁদে পা দিয়ে এখনও পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ৬ জনের। আজও একই ভাবে গুপ্তধনের ফাঁদ পেতে আটলান্টিক মাঝে জেগে রয়েছে এই ওক আইল্যান্ড।
লেখক- লিয়ন সরকার, বিশেষ প্রতিনিধি, ফ্রিডমবাংলানিউজ।