শীতকাল মানেই গ্রামে বিস্তীর্ণ ফলসি মাঠে হলুদের সমারোহ। যেখানে রয়েছে চোখ জুড়ানো অপার সৌন্দর্যের সরিষা ক্ষেত। সরিষা ক্ষেতের ওপর ভেসে থাকা কুয়াশা সকালবেলার প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধকর করে তোলে। প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য অবলোকনে ভারাক্রান্ত মনটিও যেন আনন্দে ভরে উঠবে।
প্রকৃতিপ্রেমীরা হলুদ-সবুজের মিতালি দেখতে ভিড় জমায় বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠে। নানা ভঙ্গিমা ধারণ করে সেলফি তোলে সবাই। নানা প্রজাতির মাছি-মৌমাছি ও প্রজাপতির আনাগোনার শ্রেষ্ঠ স্থান এ সরিষা ক্ষেত। সকালের সূর্যের ছোঁয়া পেতে ও গোধূলিতে হলুদের সাথে সূর্যের মিশে যাওয়ার মতো অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গ্রামের নানা বয়সীরা সরিষা ক্ষেতের পাশে বসে থাকে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাগোয়া ও খোলাহাটি ইউনিয়ন জুড়ে অবস্থিত বিশাল আয়তনের হাতিয়ার বিলে ক্ষেতে গিয়ে এসব দৃশ্য দেখা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বিল জুড়ে সরিষার চাষ হয়েছে। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে বেয়ে গেছে লম্বা রাস্তা। এই পথ দিয়েই মাথায় বস্তাভর্তি মালামাল নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন গ্রামের কোনো এক মুরব্বি। শুকনো মৌসুমে সহজ যোগাযোগের মাধ্যমই ফসলের মাঝ দিয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা রাস্তা। যে পথ দিয়ে দ্রুত যাওয়া যায় গাইবান্ধা শহরে।
দূর থেকে দেখা যায়, গরু ও লাঙ্গল দিয়ে জমিতে হাল চাষ দিচ্ছেন এক কৃষক। যার চারপাশেই সরিষা ক্ষেত। দূর থেকে মনে হচ্ছে, সরিষা ক্ষেত মাড়িয়ে ফসল নষ্টের কাজে ব্যস্ত তিনি। কিন্তু তা নয়, তিনি তার খালি জমিতে অন্য ফসল আবাদের লক্ষ্যে জমি প্রস্তুত করছেন।
অপরদিকে, মৌমাছি মৌমাছি, কোথা যাও নাচি নাচি- ‘নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের’সেই কবিতার মতো মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে মৌমাছির দল। পুরোদমে তারা মধু সংগ্রহে সময় পার করছে। মনের অগোচরে তারা সরিষা ক্ষেতে এসে লুকোচুরি খেলছে। এর মাঝে যখন তারা হাঁপিয়ে যায় তখন নিরিবিলি হয়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। মধু সংগ্রহ করে আবার তারা উড়ে যায় আপন নীড়ে। একই সঙ্গে সরিষা ক্ষেতে নানা প্রজাতির মাছি ও প্রজাপতির আনাগোনা অবিরত থাকে। বাদ যায় না পাখিরাও।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জনাব মোঃ খোরশেদ আলম ফ্রিডমবাংলা নিউজকে জানায়, গাইবান্ধা জেলায় ১৭,৫৭৪ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর বেশি। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হেক্টর প্রতি ধরা হয়েছে প্রায় দেড় টন বা ১৪০০ থেকে ১৫০০ কেজি।
তিনি আরও জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরিষার বীজ, সার ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করা হয়েছে। সেই সাথে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
সরিষার দানা মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও সরিষার দানা পানির সাথে মিশিয়ে ভিনেগারসহ বিভিন্ন তরল তৈরি করা হয়। দানা পিষে সরিষার তেল তৈরি করা হয়। যা রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। সরিষার পাতা সরিষার শাক বা সর্ষে শাক হিসেবে খাওয়া হয়। সরিষা গাছগুলো সবুজ ও ফুলগুলো হলুদ রঙের।
লেখক- লিয়ন সরকার, বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রিডমবাংলানিউজ ।