খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার রামশিড়ায় নিজের বসত বাড়িতে বানরের আক্রমণ ঠেকাতে গ্রাম বাংলার সনাতনী বিমূর্ত প্রতীক কাকতাড়ুয়া পদ্ধতি অনুসরণ করে কৃষক আব্দুল খালেক।
প্রাণিজগতের জীবনধ্বংসী কিছু না করেও কী দারুণ অভিনব কৃত্রিম পদ্ধতির আবিষ্কার করেছেন গ্রামবাংলার প্রাচীন কৃষকরা?
পশুপাখিকে ভয় দেখানোর জন্য জমিতে রক্ষিত মানুষের প্রতিকৃতি হিসেবে এই গ্রামীণ জনপদে অতি পরিচিত দৃশ্য হলো এই কাকতাড়ুয়া। তবে এই কাকতাড়ুয়া যে শুধু পশু পাখি ভয় দেখায় তা নয়। রাতের বেলায় হঠাৎ কাকতাড়ুয়া নজরে এলে অনেক পথচারীই ভয়ে পিলে চমকে যায়।
কালের বিবর্তনে পশু, পাখি থেকে ফসল রক্ষার এই সনাতন পদ্ধতিটি গ্রাম বাংলার বিমূর্ত প্রতীক হয়ে উঠে আসে গল্প, কবিতা, নাটক, উপন্যাস, ও সিনেমায়, শিল্পীর চিত্রকর্মে বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদে প্রচ্ছদে।
লম্বা খাড়া দণ্ডায়মান একটি খুঁটি এবং দুই বা তিন ফুট উপরে আড়াআড়ি আরেকটি খুঁটি বেঁধে তাতে ছন বা খড় পেঁচিয়ে মোটাসোটা করা হয়। তারপর আড়াআড়ি বাঁধানো অংশের সামান্য উপরে ছন বা খড়কুটো দিয়ে ডিম্বাকৃতি বা মাথার মতো বস্তু বানানো হয়। এরপর বাড়ি থেকে ব্যবহৃত পরিত্যক্ত ছেঁড়া জামা বা পাঞ্জাবি পরিয়ে দেয়া হয় এটিকে। গোল সদৃশ কোন কিছু দিয়ে মাথা আকৃতি বানিয়ে চোখ-নাক-মুখ এঁকে দেয়া হয় চুন বা চক দিয়ে। ফলে এক অদ্ভুত অভিনব সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়। যা দেখে ভয় পাওয়ার মতো একটা ব্যাপার ঘটে।
কাকতাড়ুয়া বানানো হয় বিশেষ করে পাখি, ইদুর বা ফসলের ক্ষতি করে এমন প্রাণীদের থেকে ফসল রক্ষার জন্য। কিন্তুু ছবির এ কাকতাড়ুয়া টি বিশাল আকৃতিতে বানানো হয়েছে শুধুমাত্র বানর তাড়ানোর জন্য। ইদানিং বনজঙ্গল কেটে ফেলায় বানরের দল লোকালয়ে এসে ভাতের হাড়ির ভাত খেয়ে ফেলেছে মর্মে এমন মুখরোচক গল্প শুনা যাচ্ছে। গল্প নয় সত্যিই ইদানিং বানরের উপদ্রব বেড়ে গেছে বহুগুণ। বানর বাড়িতে ডুকে যা পায় সব নষ্ট করে ফেলে। নিজেদের বসত বাড়ির লাউ, কুমড়ো, পেঁপে বানরের দল এসব বুকে চেপে ধরে নিয়ে যায়।
কৃষক আব্দুল খালেক বানরের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে সনাতনী পদ্ধতি অনুসরণ করে বিশাল আকৃতির ৮ ফুটের একটি কাকতাড়ুয়া বানিয়েছেন যা দেখলে বানরের দল ভয়ে তারা তাতের গতিপথ পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে যায়। আপাতত রক্ষা পাওয়া যায় তাদের যন্ত্রণা থেকে।
এদিকে এমন বিশাকার কাকতাড়ুয়াটি দেখতে পথচারীদের অনেকে একটু নজর বুলিয়ে নেন। নিজে নিজে হাসেন অনেকে। ক্ষণিকে বিনোদনের খোরাক হয় এটি দেখে।
কৃষক আবদুল খালেক বলেন, আমার বসত বাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন জাতের শাক শব্জি লাগিয়েছি বানরের অত্যাচারের কারণে আমি অতিষ্ঠ হয়ে এটি বানিয়েছি। এখন আর বানর আসে না। কাকতাড়ুয়াকে দেখলে বড় আকৃতির মানুষ দাড়িয়ে আছে মনে করে তারা এ পথ দিয়ে আর আসে না।
মাটিরাঙ্গা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো: আমির হোসেন বলেন, চাষাবাদে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কৃষক আগের মত আর কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করছে না। দিন দিন প্রতিটি এলাকায় কৃষকের কাছে পার্চিং ও আলোকফাঁদ পদ্ধতির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য হিসেবে কাকতাড়ুয়া হাজার বছর বেঁচে থাকুক তাদের ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে এমনটি প্রত্যাশা করেন তিনি।