হবিগঞ্জের মাধবপুরে বন্ধ হওয়ার কিছুদিন পর আবারো গড়ে উঠেছে অবৈধ সিসা তৈরীর কারখানা। জাবেদ ও বাবুল নামের প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করে যাচ্ছেন। এতে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে।
এর আগে গত কয়েক মাস আগে এ বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরে কারখানাটি বন্ধ করে দিয়েছিল।
উপজেলার ছাতিয়াইন ইউনিয়নের ছাতিয়াইন-বাঘাসুরা রাস্তার ইউনিয়ন পরিষদের পাশের এলাকায় দাপটের সাথে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ ব্যবসা।
কারখানার ব্যাটারির এসিডের গন্ধে স্থানীয় লোকজন অতিষ্ঠ এরপরেও প্রভাবশালী ওই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহসও পাচ্ছেন না কেউ। এ ছাড়া কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ এবং কালো ধোঁয়া পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাক্তার নুরুল হক বলেন, পুরনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা বের করার কারখানা ধোয়ায় শিশু ও বয়স্কদের মারাত্মক ক্ষতি করে এর সংস্পর্শে আসলে এই কারখানার পার্শ্ববর্তী এলাকার বাচ্চারা বড় হলে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও শিশু বয়স্ক সহ যে কোন বয়সের মানুষ হতে পারেন শ্বাসকষ্টের রোগী।
ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির ধোঁয়া মানবদেহে প্রবেশ করলে মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে ক্যানসার, মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতিসহ নানা সমস্যা হতে পারে। এমনকি মানসিক বিকৃতি ও রক্তশূন্যতাও হতে পারে। প্রভাব পড়তে পারে লিভার ও কিডনিতেও।’
বুধবার (২২ নভেম্বর) দুপুর দুইটার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ছাতিয়াইন-বাঘাসুরা রাস্তার ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ছাকুচাইল ও পিয়াম গ্রামের রাস্তার পাশে টিনের বেড়া দিয়ে ভিতরে পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির কারখানাটি গড়ে উঠেছে।
ওই কারখানায় ১৫-২০ জন শ্রমিক ও কর্মচারী পুরোনো ব্যাটারি ভেঙে প্লেট আলাদা করছেন। কারখানার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পরিত্যক্ত ব্যাটারির বর্জ্য-প্লাস্টিক, কার্বন ও ক্ষতিকারক বিভিন্ন ধরনের পদার্থ।
শ্রমিকদের কাজের জন্য নেই কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জামও। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড, ট্রেড লাইসেন্স, কলকারখানা অধিদপ্তরের অনুমতি, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির নিরাপদ চুল্লিও নেই।
সালাম নামের কারখানার এক শ্রমিক বলেন, এখানে অধিকাংশ শ্রমিকের বাড়ি উত্তরবঙ্গে। দিনের বেলায় ব্যাটারি ভাঙা হয়, রাতে পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়। প্রত্যেক শ্রমিকের বেতন ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা।
আর ব্যাটারি পোড়ানোর কোনো চুল্লি নেই, তাই উন্মুক্ত স্থানেই পোড়ানো হয়।কারখানার মালিক জাবেদ ও বাবুলের সাথে কথা বললে তারা জানান এক সপ্তাহ হয়েছে কারখানাটি পুনরায় চালু করেছেন। এখন যদি আবার পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয় তাহলে তারা বন্ধ করে দিবেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিদিন রাত ১২টার দিকে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়। এতে এলাকাবাসীর শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হয়।
সে সময় গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। এ ছাড়া পোড়ানোর স্থানে কোনো ছাউনি না থাকায় বৃষ্টির পানির সঙ্গে বিষাক্ত বর্জ্য পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পাশে ফসলি জমি ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘আমি জানতাম কারখানা টি বন্ধ হয়ে গেছে এখন আবারও পুনরায় চালু হয়েছে জেনে অবাক হলাম। ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির কারখানা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। এতে করে মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ ফসলি জমি।
প্রাণবৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র তছনছ করে দিচ্ছে। এসব অবৈধ ব্যাটারি কারখানার মাধ্যমে মানুষসহ প্রাণীর শরীরে ঢুকছে সিসার বিষ, প্রতিবেশ ব্যবস্থায় ঘটছে গোলমাল।
পুরো মাধবপুর এলাকাটাই এখন শিল্প বর্জ্যে দূষিত হয়ে গেছে। আর এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে পুরো জেলায়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে সুস্থ পৃথিবীর জন্য অবিলম্বে এই শিল্প বর্জ্য বন্ধ করা উচিত।
এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী ও অফিসার মনজুর আহসান বলেন এর আগে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর আমরা কারখানা টি বন্ধ করে দিয়েছিলাম এখন যদি আবারও পুনরায় চালু করে থাকে তাহলে আমরা আবারো তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।