সকল অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তি উদয়ের লক্ষ্যে উদযাপন করা হয়েছে দীপাবলি উৎসব।
অশুভ শক্তির দমন এবং সকলের মঙ্গলের জন্য রোববার ও সোমবার রাতে নানা রকম সাজসজ্জা আর আতশবাজির মধ্যদিয়ে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে উদযাপন করা হয় এ দীপাবলি উৎসব।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী শ্যামা পূঁজা বা কালী পূঁজা উপলক্ষ্যে রোববার (১২ নভেম্বর) ও সোমবার (১৩নভেম্বর) রাতে পঞ্জিকা অনুযায়ী কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে কালীপূঁজার রাতে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে জ্বালানো হয় প্রদীপ। কেউ বা জালান মচির বাতি।
নানা বয়সের নারী-পুরুষরা আতশবাজি ফোটায়।
জানা যায়, হিন্দু সাস্ত্র মতে বা সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালী পূঁজা হচ্ছে- শক্তির পূঁজা। জগতের সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়। কালী দেবী তার ভক্তদের কাছে শ্যামা, আদ্য মা, তারা মা, চামুন্ডি, ভদ্রকালী, দেবী মহামায়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। তাই কালী পূঁজার দিন হিন্দু সম্প্রদায় সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে ও শ্মশানে মাটির প্রদীপ প্রজ্জ্বালন করে স্বর্গীয় পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের স্মরণ করেন। এটিকে বলা হয় দীপাবলী। যা ভগবান রামচন্দ্রের আমল থেকে অশুভ শক্তির দমন, শুভ শক্তির বিকাশ ও অন্ধকার কাটিয়ে আলোকিত সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাটির প্রদীপ প্রজ্বালনের রীতি চলে আসছে।
আরও জানা যায়, কালী শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে শ্মশানে মহাধুমধামসহ শ্মশানকালী পূঁজা অনুষ্ঠিত হয়; তবে ফুলবাড়ীতে এর ব্যতিক্রম, এখানে রয়েছে কেন্দ্রীয় কালী মন্দির। এই কালী মন্দিরে বিশাল কালী মাতার প্রতিমা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন আসেন এখানে কালী পূঁজা করতে। তাদের দাবী এতবড় কালী মা'র প্রতিমা কোথাও নেই অত্রঅঞ্চলে। এই মন্দিরে কালী পূঁজা উপলক্ষ্যে মহাবলি অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবছর। যাদের কালী মাতার উদ্দেশ্যে মানত থাকে, তারা ওইদিন (মহাবলীর) দিন ফুলবাড়ী কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরে কালী মাতার চরণে পাঁঠা বলি দিয়ে থাকেন।
এবার আমাবশ্যা দুদিন ব্যাপী হওয়ায়,মহাবলী অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বলে কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি সূত্রে জানা গেছে।
ফুলবাড়ী পৌর এলাকার কাঁটাবাড়ী গ্রামের নারায়ণ শর্মা বলেন, যাতে পরিবারের প্রতি অশুভ শক্তির দৃষ্টি না পড়ে, প্রত্যেক সদস্য আপদ-বিপদমুক্ত থাকেন এবং পরিবারের প্রয়াত সদস্যদের আত্মার শান্তি কামনা করে প্রতিবছর অমাবস্যার তিথিতে কালীপূঁজার রাতে প্রদীপ প্রজ্বালন করি আমরা।
পুঁজা উদযাপন পরিষদের অন্যতম নেতা আনন্দ কুপার গুপ্তা জানান,রামায়ণ মতে দশেরায় রাবণ বধ করে দীপাবলিতেই অযোধ্যায় ফেরেন রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ।তাঁদের স্বাগত জানাতেই প্রদীপ জ্বালিয়ে সাজানো হয় গোটা অযোধ্যা নগরী।
সেই থেকে এটি হিন্দু পঞ্জিকায় কার্তিক মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এটি আধ্যাত্মিক "অন্ধকারের ওপর আলোর বিজয়, মন্দের ওপর ভালোর, এবং অজ্ঞতার ওপর জ্ঞানের প্রতীক"। এই দিন সকল হিন্দু ধর্মালম্বিরা প্রতিটি বাড়িতে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।