ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ |

EN

দুবলার চরে গেলেন হাজার হাজার জেলে, বানালেন ঘর

বাগেরহাট প্রতিনিধি | আপডেট: শনিবার, নভেম্বর ৪, ২০২৩

দুবলার চরে গেলেন হাজার হাজার জেলে, বানালেন ঘর
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা দুবলার চরে শুটকি আহরণের মৌসুম শুরু হয়েছে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে শুক্রবার সকালে দুপুরে দুবলার চরসহ বিভিন্ন চরে পৌঁছেছেন জেলে, বহদ্দর ও ব্যবসায়ীরা।

দুবলাসহ আশপাশের কয়েকটি চর পরিষ্কার করে ঘর ও মাছ শুকানোর মাচা বানাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন তারা। ঘর ও মাচা তৈরি শেষে জাল নিয়ে সাগরে যাবেন মাছ আহরণে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবার ১৬ জন বহদ্দরকে শুটকি আহরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জেলেরা আগামী ৫ মাস চরে অবস্থানের জন্য ১ হাজার ৩৫টি ঘর তৈরি করতে পারবেন। এছাড়া বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা পূরণের জন্য ৯৬টি দোকান স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে বন বিভাগ। এ বছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ কোটি টাকা।

অন্যান্য বছরের মতো এবারও শুটকি মৌসুমে দুবলাসহ অন্যান্য চরে ১০ থেকে ১৫ হাজার জেলে ও মৎস্যজীবী অবস্থান করবেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

দুবলার চরে পৌঁছানো জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক জেলে শুক্রবার সকালেই দুবলার চরে পৌঁছেছেন। দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলেরা এসেছেন চরে। শনি ও রোববার পর্যন্ত জেলেরা চরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে থাকার ঘর ও মাছ শুকানোর মাচা তৈরি হলেই জেলেরা জাল নিয়ে চলে যাবেন সাগরে। সেখান থেকে মাছ এনে বাছাই করে সূর্যের তাপে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করবেন।

সাগরে পাওয়া যায় এমন সব ধরনের মাছের শুটকি তৈরি হয় দুবলায়। এর মধ্যে লইট্যা, ফাইস্যা, কোরাল, রুপচাঁদা, বিভিন্ন প্রকার চিংড়ি, ছুড়ি, থুরে, কাইন, বাইন, লাক্ষ্মা, কঙ্কন, টুনা, স্যামনসহ অর্ধশতাধিক প্রজাতির মাছের শুটকি তৈরি হয় এখানে। কোনো প্রকার রাসায়নিক পদার্থ এবং ফরমালিন ছাড়া তৈরি হওয়ায় দুবলার চরের শুটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

দুবলার চরে মাছ আহরণ করতে যাওয়া রামপালের হুড়কা এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, শুক্রবার বেলা ১১টায় এসে চরে পৌঁছেছি। আগাছা পরিষ্কার করে বাস, পলিথিন ও চাটাই (হোগলার তৈরি বিশেষ পাটি) দিয়ে ঘর তৈরি করছি। রাতেই মাছ ধরতে নামব।

সমুদ্রগামী মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. শহিদ মল্লিক বলেন, বেশিরভাগ জেলে ইতোমধ্যে দুবলার চরে পৌঁছে গেছে। অনেকে মাছ ধরতে সাগরে চলে গেছে। কেউ কেউ হয়ত কাল সকালে যাবে।

দুবলার চরের মনোহারী দোকান ব্যবসায়ী মো. ফারুক বলেন, চাল, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন মুদি পণ্যের দোকান নিয়ে এসেছি। ৫ মাস ক্রয়-বিক্রয় করব। আল্লাহ চাইলে মৌসুম শেষ হলে বাড়িতে যাব। এর মধ্যে যদি মালামাল শেষ হয়ে যায়, তাহলে এলাকায় ফোন করলে ট্রলারের মাধ্যমে পাঠাবে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহবুব হাসান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে জেলেদের দুবলার চরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছি। জেলেরাও আসতে শুরু করেছে। আগামী বছরের ৩১ মার্চ শুটকির মৌসুম শেষ হবে। টানা পাঁচ মাস সেখানে থাকতে হবে হাজারো জেলে ও শ্রমিকদের।

তিনি বলেন, সাগরপাড়ের এ চরে থাকতে অস্থায়ী ঘর, মাছ শুকানোর চাতাল ও মাচা তৈরি করছেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা। তবে স্থাপনা নির্মাণে সুন্দরবনের কোনো গাছপালা ব্যবহার করা যাবে না। তাই বনবিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী দুবলার চরে যাওয়া জেলেরা সঙ্গেই নিয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। জেলেরা বা জেলে ছদ্মবেশে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে যাতে কেউ কোনো অপরাধ না করতে পারে সেজন্য বন বিভাগ সব সময় সজাগ রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।