ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪ |

EN

বনানী থানার এসআই সিদ্দিকের গ্রেফতার বাণিজ্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

বিশেষ প্রতিবেদক | আপডেট: সোমবার, অক্টোবর ২৩, ২০২৩

বনানী থানার এসআই সিদ্দিকের গ্রেফতার বাণিজ্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী
রাজধানীর বনানী থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তার বেপরোয়া কর্মকাণ্ড ও গ্রেফতার বাণিজ্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। অভিযোগ উঠেছে তার শেল্টারে মহাখালী সাততলা এলাকায় সোর্সরা অবাধে মাদক ব্যবসা ও জুয়ার আসর চালাচ্ছে। এসআই সিদ্দিককে প্রকাশ্যে সোর্সদের সাথে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

গত ২৯ আগষ্টের ঘটনা। বনানী থানাধীন সাততলা বস্তি এলাকা হতে স্থানীয় এক সোর্সের সাথে ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে ওই সোর্সের দেওয়া তথ্যতে চারজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে প্রিপারেশন ডাকাতি মামলা দেয় সাততলা বিট ইনচার্জ বনানী থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমান।

এসময় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজনের সাথে থাকা ১৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সোর্সের বিরুদ্ধে। মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়, গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে একটি ছুড়ি, দুইটা চাকু, একটি রড এবং চারটি মোবাইল পাওয়া যায়। এবিষয়ে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা হাসতে হাসতে মন্তব্য করেন, এখনকার সময়ে ডাকাতরা কতটা স্মার্ট এসব সামান্য অস্ত্র নিয়ে ডাকাতি করতে যায়। তাও আবার গ্রেফতারকৃত একজনের বাসার সামনে হইতে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশের ভাষায় বোঝা যায় তাদের ফাঁসানো হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাততলা এলাকা হতে চারজনকে গ্রেফতারের ঘটনায় পুলিশ ও সোর্সদের বিতর্কিত ভূমিকা ছিল। আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ তাদের কাছে কোনো অস্ত্র পায়নি। ঘটনার দিন এসআই সিদ্দিকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাততলা এলাকার এক বাসিন্দা জানান, মহাখালী সাততলা ফাড়ির ইনচার্জ সিদ্দিকের সোর্স, বডু জাকির, পিচ্চি কবির ও আনোয়ার। তারা সাততলা এলাকায় মাদক ব্যবসা ও জুয়ার আসর নিয়ন্ত্রণ করে।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আরেক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, বনানী থানার এসআই সিদ্দিকুর রহমান এবং এএসআই এনায়েত সবচাইতে ভয়ংকর চালবাজ। তাদের সাথে কনস্টেবল কাউসার। আরো আছে ফর্মা ওয়াসিম ও ওবায়দুল। তারা সবাই মিলে ভালো মানুষকে অপরাধী সাজিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে এক্সপার্ট। ওবায়দুল হচ্ছে এলাকার একজন পিয়ন সে কোন কনস্টেবল বা আনসার নয় তারপরও সে পুলিশের হ্যান্ডকাপ নিয়ে আসামি ধরে। তারা পুরো একটা গ্রুপ আসামি ধরার নামে নিরীহ মানুষকে আটক করে মুক্তিপণ আদায় করে।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে বনানী থানা যুবলীগ নেতা ইলিয়াছের মদের আসরের একটি ভিডিও। জানা গেছে মহাখালী সাততলা এলাকায় ছাত্রলীগের কার্যালয়ের উপরের তলায় ইলিয়াছের নিজ ঘরে বসে ওই মদের আসর। ভিডিওতে যুবলীগ নেতা ইলিয়াছ, বিএনপি নেতা কারেন্ট দুলাল সহ বনানী থানার কয়েকজন সোর্সকে মদ সেবন করতে দেখা যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ ইলিয়াছ ইয়াবা ব্যবসার সাথেও জড়িত। এছাড়া স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, ইলিয়াছের এমন ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। তার কারন হলো, সাততলা ফাড়ির ইনচার্জ সিদ্দিকের সাথে ইলিয়াছের রয়েছে গভীর সখ্যতা।

অভিযোগ এসেছে, শনিবার (২১ অক্টোবর) এসআই সিদ্দিকুর রহমান বনানীর চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শাহিনকে দুই কেজি গাঁজাসহ কড়াইল মাটির রাস্তা থেকে গ্রেফতার করে ১৫,০০০ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে। একই দিনে রাজিব নামক আরেক ব্যক্তিকে আটক করে বনানী থানায় নিয়ে যান এসআই সিদ্দিক। রাজিব মূলত পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে। 

জানা গেছে, কিছুদিন আগে সাততলা ঘোড়ার ঘর এলাকা হইতে শহর বানু নামক এক নারীর কথায় ও সোর্স রাজিবের সহযোগিতায় শহর বানুর দ্বিতীয়স্বামী এবং প্রথম স্বামীর বড় ছেলেকে এসআই সিদ্দিক গ্রেফতার করে মাদক দিয়ে কোর্টে চালান করে। তাদের দুইজনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর কারণে রাজিবের মাধ্যমে এসআই সিদ্দিককে কিছু টাকা দেওয়ার কথা ছিল শহর বানুর। এসআই সিদ্দিকের সাথে মুঠোফোনে টাকা লেনদেনের কথপোকথনের রেকর্ডিং করে রাখে রাজিব। পরে শনিবার কথা অনুযায়ী এসআই সিদ্দিককে সেই টাকা দিতে গেলে কল রেকর্ড করার কারণে রাজিবকে আটক করে বনানী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গেছে, রাজিবের কাছ থেকে রেকর্ডিং উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তীতে বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানকে বিষয়টি জানানোর পর রাজিব স্থানীয় কাউন্সিলরের লোক হওয়ার কারণে তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

এখানেই শেষ নয়। অভিযোগ আছে সাততলা এলাকায় এসআই সিদ্দিক আদেশ দিয়েছেন নতুন ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা তৈরি করলেই ফাঁড়িতে দিতে হবে ১০০০ টাকা। তা না হলে রিক্সা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফাঁড়িতে।

এসআই সিদ্দিকের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।