শীতের আগেই রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সংকট। দিনের বেলায় জ্বলছে না রান্নার চুলা। রাত ১১টার পর থেকে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক। তবে এ সময়ে গ্যাস তেমন কাজে লাগে না। সব মিলিয়ে মানুষের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে।
গ্যাস সংকটের কথা জানিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গত কয়েক দিন ধরে ভুক্তভোগী জানিয়েছেন। কয়েক দিন আগেও সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত গ্যাস পাওয়া যেত। এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ভোর ৫টার পরই গ্যাসের চাপ কমে যায়। যে চাপ থাকে, তাতে চুলা নিভু নিভু করে জ্বলে, রান্না করা যায় না।
রাজধানীর দক্ষিণ কুড়িল, নর্দ্দা, গুলশান, মোহাম্মদপুর, পান্থপথ, কাঁঠালবাগান, কলাবাগান, জাতীয় প্রেসক্লাব, মিরপুর, পুরান ঢাকা, যাত্রাবাড়ী, মুগদা, মান্ডা, বাড্ডা থেকে গ্যাস সংকটের বিষয়ে অভিযোগ আসছে বেশি।
ভোগান্তির শিকার সুমাইয়া আক্তার জানান, গ্যাসের কারণে সময়মতো খাবার তৈরি করতে পারছি না। এমনকি বাচ্চাদের টিফিনও দিতে পারছি না। বাধ্য হয়ে রেডিমেট খাবার খেতে হচ্ছে আমাদের।
ভোগান্তির শিকার আরেক বাসিন্দা জানান, আগে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত গ্যাস থাকত। কিন্তু গত তিন মাস ধরে একদমই থাকে না। বাধ্য হয়ে আমাদের সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাস নিয়ে নগরবাসীর ভোগান্তি চরমে। এ সংকটের কারণে অনেকে ব্যবহার করছে লাকড়ির চুলা। আবার কেউ কেউ ব্যবহার করছে কেরোসিন স্টোভ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্যাসের এমন সংকট দীর্ঘদিনের। তবে গত তিন মাস ধরে সেই সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। গ্রাহকদের অভিযোগ— মাস গেলেই ঠিক বিল দিতে হয়, কিন্তু লাইনে গ্যাস আসে না। ফলে বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করতে হয় অথবা খাবার কিনে খেতে হয়।
ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ গ্যাস না থাকার সঙ্গে সিলিন্ডার কোম্পানিগুলোর যোগসাজশ থাকতে পারে বলেও জানান।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের জরুরি অভিযোগ কেন্দ্রে জমেছে অভিযোগের পাহাড়। তারা বলছে— এক মাস ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গ্যাসের চাপ কম বলে তারাও অভিযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু তাদের হাতে কিছু করার নেই। চাহিদা অনুযায়ী তারা পর্যাপ্ত গ্যাস পাচ্ছে না। তাই রেশনিং করে গ্যাস দিতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সরকার স্থানীয়ভাবে গ্যাসের চাহিদা না বাড়িয়ে এলএনজি আমদানির দিকে দৌড়াচ্ছে বেশি। এ কারণে গ্যাসের জন্য রাখা বাজেটের বেশিরভাগ টাকা ওই খাতে চলে যাচ্ছে।
অবশ্য পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেছেন, কিছু দিনের মধ্যে এই সংকট আর থাকবে না। তিনি বলেন, বাসাবাড়ির পাশাপাশি তারা এখন ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। তবে এলএনজি আমদানির পাশাপাশি সরকার দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উত্তোলনের নানা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে।