সিলেট বিভাগ জুড়ে গত ৪ দিনের টানা বর্ষণের তলিয়ে গেছে আমন ধান ক্ষেত। অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়াতে হাওর এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে বলে জানাগেছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষতি হয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ইছাকলস ইউনিয়নের কৃষক সাবজল আহমদ (৪০)।
প্রায় এক মাস আগে তিন একর জমিতে আমনের চারা লাগিয়েছেন। ক্ষেত প্রস্তুত করতে হালচাষ ও চারা রোপণ বাবদ ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত শনিবার রাত থেকে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে তার ক্ষেতের ফসল তিন দিন ধরে পানিতে ডুবে আছে।
ফসল নিয়ে এই দুশ্চিস্তা শুধু সাব জলের একার নয়। উপজেলার তেলিখাল, ইছাকলস, উত্তর রনিখাই, দক্ষিণ রনিখাই, পূর্ব ইসলামপুর ও পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের প্রায় আড়াইশ কৃষকের। তাদের প্রায় ২৩৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়, জনপ্রতিনিধি ও কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে ১০ হাজার ৩০৩ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে।
গত শনিবার থেকে ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই ও পিয়াইন নদী প্লাবিত হয়। এ পানিতে ছয়টি ইউনিয়নের ২০৩ হেক্টর আমনের জমি আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। সম্পূর্ণ ডুবে গেছে ৩২ হেক্টর আমন আবাদ। তন্মধ্যে ইছাকলস ও তেলিখাল ইউনিয়নের ফসল ডুবেছে বেশি।
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার ইছাকলস, তেলিখাল ও পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, আবাদের অধিকাংশ জমির ফসল পানির নিচে ডুবে আছে। পানি নামতে শুরু করায় কিছু কিছু জমিতে ফসল ভেসে উঠেছে। চাষের জমি তিন দিন ধরে পানিতে ডুবে থাকায় অনেকেই নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন।
উপজেলার খায়েরগাঁও গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন জানান, প্রায় ছয় একর জমিতে আমন লাগাইছি। দুই-তৃতীয়াংশ আমনের আবাদ পানির নিচে ডুবে আছে। পানি না নামলে তো বিপদে পড়মু।
তেলিখাল ইউনিয়নের বুড়িডহর গ্রামের জুয়েল আহমদ জানান, 'বুড়িডহর তুলনামূলক নিচু এলাকা। এ বছর আমাদের হাজী বাড়ির উদ্যোগে প্রায় ৭০ একর জমিতে আমনের চারা রোপণ করি। ১৫ ভাদ্র থেকে শুরু করে ৫ আশ্বিন পর্যন্ত চারা রোপণ করা হয়। কিন্তু গত দুই দিন থেকে বৃষ্টির পানিতে সেই আবাদ ডুবে আছে। পলি মাটিতে আবাদ নষ্ট হয়। পানি কমলে বোঝা যাবে ফসলের কি পরিমাণ ক্ষতি হইছে।
পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান আলমগীর আলম জানান, ইউনিয়নের আবাদকৃত জমির অর্ধেকেরও বেশি ফসল ডুবে রয়েছে। আজকালের মধ্যে পানি নেমে গেলে রক্ষা। তা না হলে কৃষকরা চরম ক্ষতির মুখে পড়বে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, সোমবার থেকে ফসলি জমি থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। কৃষকদের দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আবারও ভারি বর্ষণ না হলে এই পানিতে আবাদের তেমন ক্ষতি হবে না।
এদিকে শুধু কোম্পানীগঞ্জ নয়, গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার,বালাগঞ্জ,ছাতক,রাজনগর, বড়লেখা, জুড়ি, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার হাওর এলাকায় ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।