দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন পাড়া, মহল্লার সড়কে এসব বেওয়ারিশ কুকুর দলে দলে ঘোরা-ফেরাসহ উৎপাত শুরু করেছে। কোন কারণ ছাড়াই সড়ক দিয়ে হেটে চলা পথচারীদের আক্রমন করে আহত করছে। গত দুই দিনে পৌর শহর সহ বেশ কিছু এলাকায় কুকুরের কামড়ে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এতে চরম আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসীরা।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পৌর এলাকার কাঁটাবাড়ী, গৌরীপাড়া, বারকোন, কড়াইপাড়া গ্রামে কুকুর কামড়ানোর ঘটনা ঘটে। এর আগেও বিভিন্ন এলাকায় কুকুরে আক্রমনের এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স‚ত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত মোট ১ হজার ১৫০ জন কুকুর দ্বারা আক্রান্ত রোগী হাসপাতাল থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন।
স্থানীয় স‚ত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী পৌর শহরসহ আশ পাশের পাড়া মহল্লায় হাঠাৎ করে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত বেড়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে কুকুরের অতিরিক্ত আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন পথচারী, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। মানুষ দেখলেই ঘেও করে আক্রমন করে আহত করছে। বিশেষ করে স্কুল কলেজ গামী শিক্ষার্থীরা কুকুরের জন্য রাস্তায় চলাচল করছে আতঙ্ক নিয়ে। গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত গত দুই দিনে কুকুরের কামড়ে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের অন্তত ২৫ জন মানুষ আহত হয়েছেন।
ফুলাবাড়ী পৌর এলাকার বিশিষ্ট সমাজ সেবক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, হঠাৎ ফুলবাড়ীতে বেওয়ারিশ কুকুর বেড়ে গেছে । এসব কুকুর দলবেধে বিভিন্ন সড়কে ঘোরাফেরা করছে। ফলে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকেন। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দ্রæত যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
কুকুরের আক্রামনের শিকার ইমরান হোসেন জানান, বুধবার রাতে তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ী ফিরছিলেন। হঠাৎ রাস্তায় তার দিকে একটি কুকুর তেড়ে এসে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে আক্রমণ করে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে তথ্য অনুযায়ী উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে কুকুরের কামড়ে গত দুই দিনে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের ১০ জন নারী-পুরুষকে কুকুর দ্বারা আক্রামণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর বাইরেও আরও অন্তত ১৫ জনকে আক্রামণ করার খবর পেলেও তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এদিকে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স‚ত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত মোট ১ হজার ১৫০ জন কুকুর দ্বারা আক্রান্ত রোগী হাসপাতাল থেকে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে জানুয়ারীতে ২০০, ফেব্রæয়ারীতে ২১০, মার্চে ১৮০, এপ্রিলে ৫০, মে ১৮০, জুন ১৩৮, জুলাই মাসে ১৯২ জন। এরমধ্যে আঁচর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে ৪৭০ জন এবং রক্ত প্রবাহযুক্ত ক্ষত স্থান আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৯ জন। এক্ষেত্রে আইজি ভ্যাকসিন ক্ষত স্থানের জন্য প্রয়োগ করা হয় এবং ভিসি ভ্যাকসিন আঁচড় দ্বারা আক্রান্ত ব্যাক্তিদের প্রয়োগ করা হয়। জুলাই মাস পর্যন্ত র্যাবিস আইজি ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে ৪৬টি, বর্তমানে মজুদ রয়েছে ২৪টি। পক্ষান্তরে র্যাবিস ভিসি ভ্যাকসিন ৫৬০টি জনকে মোট তিনটি করে ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে। বর্তমানে র্যাবিস ভিসি ভ্যাকসিনের কোন মজুদ নেই। জুলাই মাস পর্যন্ত এসব তথ্য পেলেও আগষ্ট ও চলতি মাসের সম্প‚র্ণ তথ্য দিতে পারেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মশিউর রহমান জানান, যারা কুকুর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন তাদের ধরন বুঝে র্যাবিজ আইজি ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে। তবে আমাদের কাছে র্যাবিস ভিসি ভ্যাক্সিনের কোন মজুদ নেই। চাহিদা প্রদান করা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যাক্তির করণিয় সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কুকুর কামড়ানোর ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে অবস্যই। প্রথম অবস্থায় ক্ষত স্থানে সাবান দিয়ে ধুয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ঢালতে হবে।
অপরদিকে কুকুরের উপদ্রব রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে পৌর মেয়র মাহমুদ আলম লিটন বলেন, কুকুর কামড়িয়ে আহত করার বিষয়টি আমরা জেনেছি। কিন্তু মহামান্য আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে আমাদের কুকুর নিধনের কোনো নির্দেশনা নেই। তাই এ ব্যাপারে কিছু করতে পারছেনা পৌর কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও বলেন, পৌর পরিষদে কুকুরের ভ্যাক্সিন নেই, কারো জরুরি প্রয়োজন হলে সংগ্রহ করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তবে যেহেতু সাধারণ লোকজনের সমস্যা হচ্ছে তাই বিষয়টি নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ পৌর এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কুকুর থেকে সাবধানে চলাচলের জন্য বলা হচ্ছে।