ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

মাছ,শামুক সংরক্ষন ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি | আপডেট: শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩

মাছ,শামুক সংরক্ষন ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
সরকারি ভাবে প্রকল্প দপ্তরে একাধিক গাড়ি বরাদ্দ থাকা সত্তে¡ও প্রকল্প পরিচালক নিজের গাড়ি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ভাড়া দেখিয়ে প্রতিমাসে অবৈধভাবে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষন ও উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এস এম আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, প্রকল্পের গাড়ি ব্যবহারে অনিয়মসহ প্রকল্পের মূল অঞ্চল গোপালগঞ্জ জেলার স্থানীয় জনগনকে নানাভাবে বঞ্চিত ও প্রবঞ্চিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানাগেছে, খুলনা বিভাগের বাগেরহাট ও নড়াইল জেলা সহ ১০ জেলা নিয়ে গঠিত এ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি যার রেজিঃ নং- ঢাকা মেট্টো-ঘ-২২-১৪১৬ অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে ভাড়া দেখিয়ে প্রকল্প হতে প্রতিমাসে ১,২০,০০০/= টাকা মাসিক ভাড়া ও জ্বালানী বাবাদ প্রতিমাসে ২৫/৩০হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরকার থেকে প্রকল্প দপ্তরে তিনটি গাড়ি তিনজন কর্মকর্তার বিপরীতে বরাদ্দ থাকা সত্তে¡ও নিজের গাড়ি নামে সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নাম ভাড়া দেখিয়েছন। সুচতুর এই পিডি দুর্নীতিকে জাহেজ করতে অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দকৃত গাড়িটি সারেন্ডার করে নিজ গাড়িটি পারিবারিক ভাবে ব্যবহার করছেন এবং প্রকল্প থেকে প্রতিমাসে ভাড়া ও জ্বালানী বাবদ অর্থ উত্তোলন করছেন।

কর্মচারী বিধিমালা ১৯৭৯ অনুসারে কোন কর্মচারী সরাসরি ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত হওয়া আইনগত যেমন দন্ডনীয় অপরাধ তেমনি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৮ ও বিধিমালা ২০১০ অনুসারে কোন ক্রয়কারী ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক বা সামাজিক প্রভাব ঘাটিয়ে কাজে দেওয়ার কোন বিধান না থাকলেও তিনি পিপিআরকে থোড়াই কেয়ার করে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গল দেখিয়ে তার উদ্দেশ্য হাসিল করে যাচ্ছেন। স্থানীয়রা বলছেন, প্রকল্প পরিচালক দুই বছরের কর্মকালীন সময়ের মধ্যে তিনি যে উদ্দেশ্যে এই পদে এসেছিলেন তা ইতোমধ্যে পুরন করে ফেলেছেন। তিনি নিজ নামে পাজেরো গাড়ি (ঢাকা মেট্টো-ঘ-২২-১৪১৬) যা এখন প্রকল্পের ভাড়া ও জ্বালানী নিয়ে ব্যবহার করেছন, বসুন্ধনা আবাসিক এলাকায় প্লট সহ বিভিন্ন জায়গায় নামে বেনামে অটেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক এস এম আশিকুর রহমান এর ব্যবহৃত ০১৭১৭৮২২৬১৪ মুঠোফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। অপরদিকে প্রকল্পের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান আশিকুর রহমান ২৪তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা (আইডি নং-০০২৯৬) হলেও তিনি সিনিয়র কর্মকর্তাকে মানেন না এবং সকল ক্ষমতা তিনি একাই সংরক্ষন করেন বলে উষ্মা প্রকাশ করেন। তার জন্মস্থান যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় নিজেকে সরকার দলীয় পরিচয় দিলেও গ্রামে খোঁজ খবর নিয়ে জানাগেছে, তিনি ও তার অধিকাংশ আত্মীয় সরকার বিরোধীদের সাথেই সার্বক্ষনিক আছেন। তার শ্বশুর বাড়িও জামাত অধ্যুষিত সাতক্ষীরা জেলায় এবং তারা মনে প্রানে সেটাকেই রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবে মানেন। তিনি ইতোমধ্যে যশোর অঞ্চলে ভবদহ এলাকায় মৎস্য চাষ উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত থাকতেও একই ধরনের কার্যক্রমের জন্য বিতর্কিত ছিলেন।

মাগুরা জেলায় মৎস্য কর্মকর্তা থাকাকালীন ও তার কর্মকান্ড মৎস্য অধিদপ্তরেনর ভাবমূক্তিকে ¤øান করেছে। সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার যোগসাজসে বিশাল অংকের টাকার বিনিময়ে ৪ জনের তালিকার মধ্যে সিনিয়র ২ জনকে বাদ দিয়ে ৩য় জনকে পিডি নিয়োগ দেওয়া হয়। কপাল পোড়ে দেশি মাছের। টাকার বিনিময়ে পিডি হিসাবে নিয়োগ পেয়ে এস এম আশিকুর রহমান সুদ সহ আসল টাকা তুলতে বিভিন্ন দুর্নীতি শুরু করেন। তিনি প্রকল্পের জনবল নিয়োগ, মৎস্য অভয়াশ্রমের পাহারা দার নিয়োগে একটা রেট করে দিয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পের জনবলের বেতন বাড়ানোতে পিডির কপাল খুলে যায়। বেশী বেতনের আশায় জনগন হুমড়ি খেয়ে নিয়োগ পাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে যায়। বেকার যুবকরা একটু বেশি টাকা পাবে বলে পিডির সাথে বিভিন্ন মাধ্যমে আতাত করে নিয়োগ পায়।

প্রকল্প দপ্তরের লোক নিয়োগ থেকে বিভিন্ন পযায়ের লোক নিয়ো গেগোপালগঞ্জের জনগন হয়েছেন বারেবারে প্রবঞ্চিত। প্রকল্প দপ্তরে সকল লোকবল তিনি তার পছন্দের এলাকা থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করিয়েছেন। সর্বশেষ অভয়াশ্রম পাহারাদারের মত একটি মানবিক পদের লোকজনের নিকট থেকে তার এজেন্টদের মাধ্যমে জনপ্রতি ২০,০০০/- টাকা দর হাকিয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের একাধিকভূক্তভোগি জানিয়েছেন। অন্য দিকে স্থায়ী ভাবে অভয়াশ্রম তৈরীর জন্য জলাশয় জলাশয় খনন কাজ সহ অন্যান্য খনন কাজে স্থানীয়দের কাজ না দিয়ে তার নিজের এলাকার লোক ও আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে কাজ করিয়ে বিশাল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রকল্পের শুরু থেকে প্রকল্প দপ্তরের সকল কোটেশন এমন কি পাশের জেলার জাল ক্রয়, ছাগল ক্রয় তার পছন্দের মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোরের অনেকটা তার পকেট ঠিকাদারদেরকে দিয়ে মোটা পয়সার বিনিময়ে করিয়েছেন।

পোনা মাছ ছাড়া সহ যে কোন কাজের জন্য জেলা ও উপজেলা কমিটির অনুমোদন থাকলেও পিডির অনুমোদন বাধ্যতা মূলক করে নিজের হিস্যা বুঝে নিয়ে তবেই বিল ছাড়ছে, যা জেলা এবং উপজেলার কাযক্রম বাস্তবায়নে জটিলতা এবং সময় ক্ষেপন হচ্ছে। গোপালগঞ্জ প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র জেলেদেরকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করার জন্য প্রশিক্ষণ ভাতা ও খাওয়ার টাকার পরিমাণ তূলনা মূলক বেশি রেখে প্রকল্প অনুমোদন করা হলে পিডিকে প্রতিটি ট্রেনিং থেকে টাকা না দেওয়ার কারণে তিনি সকল ভাতা কমিয়ে দিয়েছেন। ২০২১-২২ অর্থ বছরে জাতির পিতার জন্মভূমি পূণ্য ভূমি টুঙ্গিপাড়া উপজেলা থেকে ও তার হিস্যা মত উপরি না পাওয়ায় বরাদ্দ বিভাজন অনুমোদিত ডিপিপিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে পাল্টায়ে ফেলেন, যা একজন পিডি কখন ও পারেননা। পরবর্তীতে মহাপরিচালক মৌখিক ভাবে তাকে ভৎসনা দিয়ে পূর্বের বিভাজন অনুযায়ী তিনি বরাদ্দ প্রদানে বাধ্য হন।

তাছাড়া প্রত্যাশা মত পারসেন্টেজনা পাওয়ায় এক জেলা হতে অন্য জেলাতে বরাদ্দ প্রদানে ও অসংগতি দেখা যায়। কাযক্রমের মূলকেন্দ্রবিন্দু গোপালগঞ্জ জেলা হলেও বরাদ্দ প্রাপ্তিতে সকল জেলার তুলনায় এ জেলার প্রাপ্তি অত্যন্ত নগন্য। যা প্রকল্প দপ্তর হতে ২০২১-২২ অর্থ বছরের ছাড় কৃত বরাদ্দ পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়ে যাবে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে অভয়াশ্রম মেরামতের ঠিকাদার অধিকাংশ জায়গায় কাজ না করেই প্রকল্প দপ্তর থেকে বিল গ্রহণ করেছেন, যা সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলাতে গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এব্যাপারে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দাকর মাহবুবুল হক জানান, এটা মেজর পানিশমেন্টের মত অপরাধ। আমরা এটা খুব সিরিয়াসলি দেখছি। এ অন্যের জন্য প্রয়োজনীয় এ্যাকশন গভমেন্ট গ্রহন করবে।