ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

চক্রের মূলহোতাসহ আটক ৬ ডাকাত: উদ্ধার হয় বিপুল অস্ত্র

কক্সবাজার প্রতিনিধি | আপডেট: শনিবার, আগস্ট ১৯, ২০২৩

চক্রের মূলহোতাসহ আটক ৬ ডাকাত: উদ্ধার হয় বিপুল অস্ত্র
কক্সবাজারের সম্প্রতি হত্যা,গুম,খুন অপহরণসহ অপরাধমূলক কার্যক্রমে বেড়েই গেছে। এজন্য প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার স্থানীয় ও কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকরা। টেকনাফ গহীন পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরে ঘাঁটি বানিয়ে অবস্থান করে তাদের অপরাধ কার্যক্রম সংগঠিত করে আসছে। সম্প্রতি র‌্যাবের সাড়াশি অভিযানে বেশ কয়েকটি ডাকাত চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব-১৫।

তারই ধারাবাহিকতায় টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী এলাকার গহীন পাহাড়ে গতকাল রাতভর  অভিযান পরিচালনা করে দলের মূলহোতা ফয়সালসহ ডাকাত চক্রের ছয়জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব-১৫। গ্রেফতারকৃতরা হলেন টেকনাফ রঙ্গিখালীর গুরামিয়ার ছেলে মোঃ ফয়সাল,পশ্চিম সাতঘরিয়াপাড়া নজির আহম্মেদের ছেলে মোঃ বদি আলম,বাচা মিয়ার ছেলে মোঃ সৈয়দ হোসন,বনি আমিনের ছেলে দেলোয়ার হোসন, দক্ষিণ আলীখালীর জানে আলমের ছেলে কবির আহম্মদ ও দক্ষিণ উলুছামারি কুনার পাড়ার জাহিদ হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান 

শনিবার দুপুরে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন র‌্যাব-১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেজর সৈয়দ সাদিকুল ইসলাম। তিনি  জানান তাদের কাছে খবর আসে মূলহোতা ফয়সাল তার চক্রের অন্যন্যা সদস্যরা টেকনাফ  হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী এলাকার গহিন পাহাড়ে অবস্থান করছে। পরে সে জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাবের আভিযানিক দল। তবে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যাবার সময় আটক হয় মূলহোতা ফয়সাল। তখন তার দেওয়া প্রাথমিক জিজ্ঞেসাবাদে চক্রের অন্য সদস্যদের নাম প্রকাশ করে।পরে সেখানে বিভিন্ন দূর্গম পাহাড়ে অভিযান পরিচালনা করে মোঃ বদি আলম (৩৫) প্রকাশ বদাইয়া,কবির আহম্মাদ (৪৩),মোঃ সৈয়দ হোসেন (৩২),মোঃ দেলোয়ার হোসন (৩৫) মিজানুর রহমানসহ (২৬) মোট ছয়জন গ্রেফতার হয়।

এসময় অস্ত্রের কারখানা হতে উদ্ধার করা হয় ২টি এক নলা বড় বন্দুক, ৪টি এলজি, ১টি অর্ধনির্মিত এলজি,৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ, ১০ রাউন্ড রাইফেলের তাজা কার্তুজ, ১টি ড্রিল মেশিন, ১টি আগুন জ্বালানো মেশিন, ২টি লেদ মেশিন,২টি বাটাল,১টি শান দেয়ার রেত,২টি লোহার পাইপ,২টি প্লাস, ১টি কুপি বাতি এবং ৩টি স্মার্ট মোবাইল ফোন।

মূলত গহীন পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় ডাকাতদল সেখানে গড়ে তুলে অস্ত্র তৈরীর কারখানা। অস্ত্র তৈরী করে নিজেরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে সেসব অস্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি ক্যাম্পে থাকা বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে বিক্রি করত।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, চক্রটি টেকনাফের দূর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে ফয়সাল উদ্দিন ওরফে ফয়সাল ডাকাতের সরাসরি নেতৃত্বে ডাকাতি, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, ধর্ষণ, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা এবং হত্যাসহ নানাবিধ অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। গ্রেফতারকৃত ফয়সাল বিভিন্ন সময়ে তার অন্যান্য সহযোগীদের মাধ্যমে অন্যান্য সন্ত্রাসী চক্রের নিকট অস্ত্র সরবরাহ'সহ নিজেদের তৈরীকৃত আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা তাদের অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করত। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম শেষে তারা পুনরায় গহীন পাহাড়ে তৈরীকৃত আস্তানায় আত্মগোপনে চলে যেত। গ্রেফতারকৃত ডাকাত চক্রটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপরে সশস্ত্র হামলার তথ্য পাওয়া যায়।এছাড়া নানাবিধ অপরাধের পাশাপাশি ডাকাত দলটি টেকনাফের বিভিন্ন স্থান হতে অপহরণ করে রঙ্গীখালির গহীন পাহাড়ে অপহৃত ভিকটিমদের নিয়ে তাদের আস্তানায় বন্ধী করে রাখতো এবং ভিকটিমের পরিবারের নিকট মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবী করত। মুক্তিপণের টাকা আদায় করতে অপহৃত ভিকটিমের উপর চালানো হত পৈশাচিক নির্যাতন এবং মুক্তিপণের বিনিময়ে ভিকটিমদের ছেড়ে দেয়া হতো, চাহিদা মতে মুক্তিপণ না পেয়ে ইতোপূর্বে কয়েকজন ভিকটিমকে হত্যা পর্যন্ত করেছে বলে অপরাধীরা জানায়। 

এই কুখ্যাত অস্ত্রাধারী ডাকাত দলের মূলহোতা ফয়সালের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধে কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় ৩ টির অধিক মামলা রয়েছে এছাড়া গ্রেফতারকৃত মোঃ বদি আলম ওরফে বদাইয়া এর বিরুদ্ধে হত্যা, মাদক, অস্ত্র, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধে টেকনাফ থানায় ১৪টি, মোঃ কবির আহাম্মদ এর বিরুদ্ধে ২টি, মোঃ সৈয়দ হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি, মোঃ দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি এবং মোঃ মিজানুর রহমান এর বিরুদ্ধে ১টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়। 

র‌্যাবের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয় গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।