Can't found in the image content. সিলেটে ভূমিকম্পনের উৎপত্তিস্থল ডাউকি ফল্ট | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

সিলেটে ভূমিকম্পনের উৎপত্তিস্থল ডাউকি ফল্ট

আবুল কাশেম রুমন, সিলেট প্রতিনিধি | আপডেট: বৃহস্পতিবার, আগস্ট ১৭, ২০২৩

সিলেটে ভূমিকম্পনের উৎপত্তিস্থল ডাউকি ফল্ট
সিলেট ঘন ঘন ভূকম্পন হচ্ছে। বারবার ভূমিকম্প উৎপত্তিস্থল জৈন্তার ডাউকি ফল্ট । ২০২১ সালে বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট এলাকায় একদিনে অন্তত পাঁচবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে এবং দফায় দফায় এমন কম্পনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয়দের মধ্যে। 

সেই সময় আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় কোন ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে। বিদেশি এক নিউজ পোর্টালের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সেই সময় চারটি ভূমিকম্পন অনুভূত হয় মাত্রা ছিল ৪.১, ৪, ৩ এবং ২.৮ মাত্রার। তখন কোন কোনটি এতো মৃদু যে সব স্টেশনে মাত্রা মাপাও যায়নি।

তবে সিলেট কখন ভূমিকম্পন হয় তা বুঝে উঠা মশকিল হয়ে দাড়িয়েছে। সিলেট অঞ্চল দীর্ঘ দিন ধরেই ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে। বিশেষ করে তিনটি প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশে। তার মধ্যে ঝুকিতে সিলেটের জৈন্তায় ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। তবে এখন পর্যন্ত দেখা যতটি ভূকম্পন হয়েছে সবগুলোই ছোট ধরণের ভূমিকম্পন । ভূকম্পন গবেষকরা বলছেন যেহেতু সিলেট অঞ্চল ভূমিকম্প প্রবণ সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। তাছাড়া ওই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের ইতিহাস আছে। 

সর্বশেষ সিলেটে সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ডে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তার মাত্রা ছিল ৫.৫ ।  সেটিও জৈন্তা ও গোইয়ানঘাট এলাকা থেকে হয়েছে।  

এই ভূকম্পনের মাত্রা গত ২০ বছরে দেশের ভেতরে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্প গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। গত কয়েক বছরে এই চ্যুতিরেখায় বেশ কিছু ভূমিকম্প হয়েছে। এর ফলে 'ডাউকি ফল্ট' বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা জাগাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সাধারণত রিখটার স্কেলে ৫-এর ওপওে গেলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প বলা হয়। এর নিচে হলে তাকে মৃদু কম্পন হিসেবে গণ্য করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ভূখন্ডে উৎপত্তি সবচেয়ে বেশি মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ২০০৩ সালের ২৬ জুলাই। যার মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। এ ছাড়া গত এক বছরে বাংলাদেশে ১৭টি ভূমিকম্প হয়েছে।

এর মধ্যে তিনটি ভূমিকম্প ছিল ৫ মাত্রার বেশি। যা সোমবার (১৪ আগস্ট) ভূমিকম্প ছাড়া বাকি দুটি ভূমিকম্পের একটি ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট হয়। যার মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ১, আর আরেকটি ভূমিকম্প হয় চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি। ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ২। এ ছাড়া ১৪টি ভূমিকম্পের মাত্রাই ছিল ৪ থেকে ৫-এর মধ্যে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (১৪ আগস্ট) যে ভূমিকম্প অনুভূত হয় তার উৎস ছিল ঢাকা থেকে ২২৮ কিলোমিটার দূরে সিলেটের কানাইঘাট ও ভারতের আসাম সীমান্তের কাছে। ভূগর্ভের ১০ কিলোমিটার গভীরে এর উৎপত্তি। ভূমিকম্পটির কম্পন রাজধানীসহ সারাদেশে ভালোই অনুভূত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান রুবায়েত কবির বলেন, সাধারণত  দেশের ভেতরের উৎস থেকে যেসব ভূমিকম্প হয়, তা চার থেকে পাঁচ মাত্রার হয়ে থাকে। এতে মৃদু কম্পন ও কিছুটা আতঙ্ক তৈরি হওয়া ছাড়া তেমন ক্ষয়ক্ষতি হতে দেখা যায় না। গত ২০ বছরে সাড়ে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হতে আমরা দেখিনি। সোমবার (১৪ আগস্ট) ভূমিকম্পের উৎসস্থলটি ডাউকি চ্যুতি বরাবর। সেখানে ভূমিকম্প বাড়ছে। এটা ওই এলাকায় বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের হিসাবে, সবচেয়ে তীব্র ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি  জেলা ও সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা। সিলেটকে বরাবরই ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রায়ই এখানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। গত দু'বছরে সিলেট অঞ্চলে স্থানীয় ভাবে সৃষ্ট বেশ কয়েকটি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।

সিলেটের গোলাপগঞ্জ, ছাতক, বিশ্বনাথ, সিলেট সদর এবং ডাউকি ফল্ট জৈস্তাপুরে কয়েকটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল। ২০২১ সালে ১০ দিনের ব্যবধানে সিলেটে যে ১০ দফা ভূমিকম্প হয়েছে। এসব ভূমিকম্পের উৎপত্তি ছিল ডাউকি ফল্টে। এজন্য সিলেটের স্থানীয় এ ভূমিকম্প নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও চিন্তিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে। ফলে ভূমিকম্পের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট। আর সিলেট থেকে ঢাকার অবস্থান খুব বেশি দূরে নয়।  সেখানে যদি ৬ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হয় তাহলে এর বড় প্রভাব গোটা দেশেই।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে করা বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ঢাকায় মোট ১৩ লাখ, চট্টগ্রামে ৩ লাখ এবং সিলেট জেলায় ১ লাখ বহুতল ভবন রয়েছে। এসব ভবনের ৭৫ শতাংশই ছয় তলা বা তার চেয়ে  বেশি। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এই ভবন গুলো এবং এর বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বাংলাদেশের সিলেট ও ভারতের আসাম মিলিয়ে ডাউকি চ্যুতি পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় তিনশত কিলোমিটার বিস্তুৃত। এর আগে, ১৮৯৭ সালে 'ডাউকি ফল্টে' ৮ দশমিক ৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল। ওই ভূমিকম্পের উৎস ছিল ঢাকা থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে। সে সময় ভূমিকম্পে ভূমিকম্পে আহসান মঞ্জিলসহ ১০টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।