নিজেদের জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে স্টার্ট আপে বিনিয়োগ শুরু করেছেন বড়পর্দার তারকারা। শুধু ২০২২ সালেই বিনিয়োগ করেছেন ভারতের ১৪ জন সেলিব্রেটি। বর্তমানে ভারতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্টার্ট আপ ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে।
ভারতে আগামী দশকের মধ্যে তারকাদের প্রতিষ্ঠিত কিংবা বিনিয়োগ করা কোম্পানিগুলো বিলিয়ন ডলার কোম্পানিতে রূপান্তরিত হবে। ইতোমধ্যে আলিয়া ও ক্যাটরিনার বিনিয়োগ করা কোম্পানি 'নাইকা' ইউনিকর্ন কোম্পানি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
বলিউডের তরুণ অভিনেত্রী আলিয়া ভাট `এড-এ-মাম্মা' নামে পোশাকের একটি ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছর সময়ের মধ্যেই বেশ ভালো আয় করছে ব্র্যান্ডটি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আলিয়ার ব্র্যান্ডটিকে ৩৬ মিলিয়ন ডলারে কিনে নিতে যাচ্ছে ভারতের সবচেয়ে বড় কংগ্লোমারেট রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। খবর বিবিসির।
আলিয়ার ব্র্যান্ডটি যদি রিলায়েন্স কিনেই নেয়, তবে সেটি বলিউডের অন্য তারকাদেরও এ ব্যবসায় অনুপ্রাণিত করবে। এমন অভিমত ব্যক্ত করেন ভাস্কর মজুমদার নামে একজন প্রাথমিক পর্যায়ের বিনিয়োগকারী।
আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী দীপিকা পাডুকোন '৮২ ডিগ্রি ই' নামে একটি স্ক্রিন কেয়ার ব্র্যান্ড চালু করেছেন। অন্যদিকে গত বছর দীপিকার সঙ্গী বলিউডের তারকা অভিনেতা রানভীর সিং 'সুগার কসমেটিক' নামের একটি বিউটি ব্র্যান্ড কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন।
তবে বলিউড বিশ্লেষকরা মনে করেন, তারকাদের স্টার্ট আপে বিনিয়োগের প্রবণতা নতুন নয়। ২০১০ এর দশকের শুরুর দিকেই এমনটা দেখা গিয়েছিল; যাদের মধ্যে সালমান খান ছিলেন অগ্রগামী। ২০১২ সালে ট্র্যাভেল পোর্টাল 'ইয়াতরা' এর ছোট একটা অংশের শেয়ার কিনে নিয়েছিলেন 'বলিউডের ভাইজান' খ্যাত এই তারকা।
তারকাদের বিনিয়োগ করা ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই 'ডিরেক্ট টু কাস্টমার'ভিত্তিক ব্যবসা পরিচালনা করে। আর বাকি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে এড টেক, ই-কমার্স, ফুড টেক উল্লেখযোগ্য।
রিস্ক অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজরি সার্ভিস কোম্পানি ক্রলের আভিরাল জেইন বলেন, তারকারা এখন শুধু মুভি স্টার হিসেবে নিজেদের দেখতে চান না। বরং নিজেদের বিচক্ষণ বিনিয়োগকারী হিসেবেও প্রতিষ্ঠা করতে চান। যেমন- আলিয়া ইতোমধ্যেই করে দেখিয়েছেন, একজন তারকা কিভাবে নিজের স্টারডম ও ফ্যানদের ব্যবহার করে একটি সম্ভাবনাময়ী ব্র্যান্ডকে সফল ব্যবসায় রূপান্তরিত করতে পারে।
শাহরুখ খান মূলত খেলাধুলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ভেঞ্চার কিংবা রেস্টুরেন্টের মতো ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে সফল হয়েছেন। অন্যদিকে আমিতাভ বচ্চন কিংবা জ্যাকি শ্রফের মতো তারকারা প্রথাগত ভঙ্গিতে ব্যবসা করার চেষ্টা করেছেন। ঝুঁকি নিয়ে শুধু ফিল্ম প্রোডাকশনে বিনিয়োগ করে তারা ব্যবসায় লস করেছেন।
ব্রেথ ক্যাপিটালের পার্টনার শুয়ারায়া ভুটানি বলেন, সাধারণত স্টার্ট আপগুলোর রিসোর্স খুবই সীমিত থাকে। তাই তারকাদের ইক্যুইটি প্রদান করে অর্থ সংগ্রহ করাটা বেশ স্মার্ট পদক্ষেপ।
রায় গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্টের চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার বেনাইফার মালান্দকার বলেন, তারকাদের বিনিয়োগের ফলে স্টার্ট আপ ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের প্রচারণার ক্ষেত্রে জন্য একজন তারকার মিডিয়া উপস্থিতি ব্যবহার করতে পারে।
শুধু বলিউডেই নয়, বরং পশ্চিমা বিশ্বের তারকাদের মাঝেও স্টার্ট আপে বিনিয়োগের প্রবণতা রয়েছে। আমেরিকান সংগীতশিল্পী জে-জেড উবারে ২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিল। আবার মার্কিন অভিনেতা অ্যাস্টন কুচার স্কাইপের মতো বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিল। এসব বিনিয়োগ থেকে মোটা অঙ্কের মুনাফা করেছেন এ তারকারা।