বিগত জাতীয় নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে মহাজোটের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ নির্বাচিত হন বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান। এ আসনে বিকল্পধারার নিজস্ব ভোট ব্যাংক না থাকলেও আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে এমপি হন তিনি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের আ স ম আব্দুর রব।
অভিযোগ রয়েছে, এমপি নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেননি আবদুল মান্নান। দলটির সামনের সারির দু’একজন নেতা ছাড়া তিনি কাউকে নিজের কাছে ভিড়তে দেননি। নিজের দল বিকল্পধারার লোকদের অগ্রাধিকার দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করে রাখেন তিনি। এ কারণে উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। একই ধরনের অভিযোগ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের। তারা বলেন, এ আসনে বিকল্পধারার সর্বোচ্চ ৬-৮ হাজার ভোট রয়েছে। মূলত আওয়ামী লীগের ভোটেই মেজর মান্নান এমপি হয়েছেন। এমপি হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কৌশলী সম্পর্ক রেখে নিজের দল বিকল্পধারাকে গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন। সংসদ-সদস্য এলাকায় এলেও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করে আবার ঢাকায় ফিরে যান। করোনাকালে দুই বছরে বলতে গেলে এলাকার খবর রাখেননি তিনি। এতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তৃণমূলের ৮০ ভাগ মানুষ জানেন না এ আসনের এমপি আছেন কী নেই।
কমলনগর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন বাপ্পী বলেন, বিগত সাড়ে চার বছরে যুবলীগের একজন নেতাকর্মীর খোঁজও নেননি আমাদের সংসদ-সদস্য। ভোট দিয়ে এমপি বানিয়েছি আমরা, অথচ সংসদে গিয়ে তিনি নোয়াখালীর সমস্যার কথা তুলে ধরেন। মেজর আব্দুল মান্নানকে জনবিচ্ছিন্ন এমপি আখ্যা দিয়ে তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি না হওয়ার কারণে এখানে টিআর কবিখা প্রকল্প ছাড়া দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। এলাকার উন্নয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় এমপির বিকল্প নেই।
গত ১০ আগস্ট কমলনগর উপজেলা পরিষদ হলরুমে লক্ষ্মীপুরের নতুন জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিক উদ্দিনও একই ধরনের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, মেজর মান্নান এমপি হওয়ার পর থেকে ঢাকায় অবস্থান করে নিজের ব্যবসায় বাণিজ্য গোছানোর কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কখনো আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রমে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ রাখেননি। আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে শেখ হাসিনার প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজেদের উর্বর ভূমিতে আমরা কোনো বর্গা চাষি চাই না।’
কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘বলা চলে আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো নেই। তাছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি নন। সুতরাং দূরত্ব থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে আবার মনোনয়ন পেলে তার হয়ে কাজ করব।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রাজু বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা যদি মেজর মান্নানকে আবারও নৌকা প্রতীক দেন, তাহলে আমরা কাজ করতে বাধ্য থাকব। তবে আওয়ামী লীগের কারোই আন্তরিকতা থাকবে না। কোনো নেতা আন্তরিক হয়ে তার জন্য কাজ করবেন বলে মনে হয় না।’
রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘সময়ের প্রেক্ষাপটে তিনি (আবদুল মান্নান) এ আসন থেকে এমপি হয়েছেন। এমপি হিসাবে তিনি সরকারি দান-অনুদান তছরুপ করেননি। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় এমপি না হওয়ায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার মান অভিমান থাকাটাই স্বাভাবিক।’
তবে এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে এমপি মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, জোট থেকে এ আসনে এমপি হওয়ার পর অধ্যাবধি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলছি। এমনকি উন্নয়ন বরাদ্দ কাবিখা বিতরণে প্রতিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল আমিন মাস্টার ও বর্তমান সভাপতি নিজাম উদ্দিনকে মূল বরাদ্দের ৫০ ভাগ বুঝিয়ে দিয়ে বাকি বরাদ্দ মসজিদ, মাদ্রাসা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বণ্টন করেছি। তিনি বলেন, ‘এমপি হিসাবে আমার পক্ষে এ আসনের (তৃণমূলের) সাত লাখ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা অসম্ভব। তবে এ আসনের উন্নয়নে সবসময় আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে কাজ করেছি।’
আবদুল মান্নান বলেন, একসঙ্গে রাজনীতি করতে গেলে কিছু সমস্যা হয়েই থাকে। এটাকে বড় করে দেখার অবকাশ নেই। আমাদের সমস্যাও আছে, আবার সমাধানও হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যেই তো নানা বিভক্তি রয়েছে। এলাকার উন্নয়ন করতে আমার চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না।