ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

দোকানিকে নির্যাতনের অভিযোগে এসআই ও এএসআই প্রত্যাহার

শিশির খাঁন, সদরপুর-চরভদ্রাসন প্রতিনিধি | আপডেট: রবিবার, আগস্ট ১৩, ২০২৩

দোকানিকে নির্যাতনের অভিযোগে এসআই ও এএসআই প্রত্যাহার
ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে সিগারেটের প্যাকেট বদলে না দেওয়ায় ফাস্ট ফুডের দোকানি আব্দুর রব মোল্লাকে (৩৫) দোকান থেকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে হাজতে ঢুকিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।  

চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিম রেজা শনিবার সকালে সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের নির্দেশে এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা চরভদ্রাসন থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শিমন খানকে বৃহস্পতিবারে এবং উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম মুন্সীকে শুক্রবারে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে আব্দুর রব মোল্লা ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি বর্তমানে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আব্দুর রব মোল্লা সদরপুর উপজেলার আকটেরচর ইউনিয়নের ওয়েদউদ্দিন মুন্সীর ডাঙ্গী এলাকার আব্দুল বারেক মোল্লার ছেলে। চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের সামনে তার ফাস্ট ফুডের দোকান রয়েছে। গত বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে তার দোকানে এ ঘটনা ঘটে।

আব্দুর রব মোল্লা জানান, থানার এএসআই শিমন, এসআই ইব্রাহিম ও তাদের সঙ্গে থাকা কনস্টেবল সাব্বির তার দোকানে আসে। একপর্যায়ে শিমন খান তাকে চড়-থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি মারা শুরু করেন। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন দুই পুলিশ সদস্য। তিনি তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশ সদস্যরা তাকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যান। থানায় নিয়ে তাকে হাজতে ঢুকিয়ে ওই তিন পুলিশ সদস্য তার ওপর অমানবিক নির্যাতন করেন। তাকে রোলার ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

এএসআই শিমনের রাগের কারণ উল্লেখ করে তিনি জানান, এ ঘটনার আগের দিন মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বিকেলে এএসআই শিমন তার দোকানে এসে কুড়ি শলাকার বড় এক প্যাকেট ব্যানসন সিগারেট বদলে দশ শলাকার দুটি ছোট প্যাকেট দিতে বলেন। দোকানে ছোট প্যাকেট না থাকায় সিগারেটের প্যাকেট বদলে দিতে পারবেন না বলে জানান। এ সময় তারপরে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান এএসআই শিমন।  পরে স্থানীয় বিশিষ্ট এক ব্যক্তি থানায় গিয়ে মুচলেকা দিয়ে তাকে (রব) ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন।

আহত আব্দুর রব মোল্লাকে গত বুধবার রাতে প্রথমে চরভদ্রাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে বুধবার রাতেই ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থনান্তর করা হয়।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল বৃহস্পতিবার আব্দুর রব মোল্লার এক্সরে এবং শুক্রবার সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। 

এ ঘটনার একটি সিসি ফুটেজের ভিডিওতে দেখা যায়, চরভদ্রাসন থানার এএসআই শিমন খান, এসআই ইব্রাহিম ও সাব্বির নামে তাদের এক সহযোগী কনস্টেবল চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের সামনে অবস্থিত আব্দুর রব মোল্লার দোকানে যান। এর কিছুক্ষণ পরে তারা দোকানদার আব্দুর রব মোল্লাকে মারতে মারতে বের করে নিয়ে যান। 

নির্যাতনের শিকার আব্দুর রব মোল্লার স্ত্রী সাবিনা বেগম বলেন, এ ঘটনার পর আমাদের দোকানের কাজে নিয়োজিত আমার স্বামীর সহযোগী ছেলেটি আমাকে ফোন দিয়ে বলে, ভাবি আপনাকে থানায় ডাকে। থানায় গিয়ে দেখতে পাই তাকে আলাদা একটা রুমে আটকায় রাখছে। সেখানে পৌঁছে দেখি, আমি থানায় যাওয়ার আগেই তাকে অনেক মারধর করেছে। উনি চেয়ারে বসা ছিলেন, উঠতেও পারেন না, এমনভাবে মারছে। সাধারণ একটা মানুষের সঙ্গে এমন করছে। আমরা এর বিচার চাই। 

দোকানের কর্মচারী রাজু বলেন, এএসআই শিমন যখনই দোকানে আসেন আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।

জানতে চাইলে এএসআই শিমন খান বলেন, ওই দোকানদার বেয়াদবি করেছিল। তাকে মারধর করেননি দাবি করে তিনি আরও বলেন, 'ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে তা মীমাংসা হয়ে গেছে।

চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা জানান, এ ঘটনার পর পুলিশ সুপার মো. শাহজাহানের নির্দেশে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এএসআই শিমন খানকে এবং শুক্রবার সকালে এসআই ইব্রাহিমকে চরভদ্রাসন থানা থেকে প্রত্যাহার করে ফরিদপুর পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। আদেশ পাওয়া মাত্রই এ নির্দেশ কার্যকর করা হয়েছে।