মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের কারণে ঝালকাঠির প্রধান তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে। নদীর পাড় উপচে জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।
বেড়িবাঁধহীন কাঁঠালিয়া উপজেলার ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। নলছিটি ও রাজাপুরে ডুবেছে ১৮ গ্রাম। এছাড়া সদর উপজেলায় তলিয়েছে আরো অন্তত ১৭ টি গ্রাম। সোমবার পর্যন্ত পুরো জেলায় ৫০ টি গ্রাম পানিতে ডুবেগেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ঝালকাঠি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী জেলার সুগন্ধা, বিষখালী ও হলতা নদীর পানির উচ্চতা গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার বিকেলে বিষখালীর ত্রিমোহনায় পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নদীপাড়ের হাজার হাজার মানুষ। সেই সঙ্গে বিপাকে রয়েছে মৎস্য এবং গো-খামারিরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পুর্ভাবাস অনুযায়ী ভারীবর্ষন ও পুর্ণিমার জোয়ারে উপকূল ভাগের নিম্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো নিম্মাঞ্চলের মানুষ। অনেকেই গবাদি পশু উচু স্থানে সরিয়েছে।
তবে জেলার নদীতীরবর্তী বাসিন্দারা বিশেষ করে বেড়িবাঁধহীন কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও নলছিটি উপজেলার মানুষ পরেছে বিপাকে। নদীতীরে নির্মিত আশ্রয়নের ঘর ছেড়ে বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে অনেকেই।
কাঁঠালিয়া উপজেলার চিংড়াখালী গ্রামের শামসুল হক বলেন, 'এমন পরিস্থিতি আর দু-এক দিন থাকলে নদী আর গ্রাম সমান হয়ে যাবে। বড় গাছের গোড়া নরম হয়ে গাছ উপড়ে বসত ঘরে পড়ার আশংকা করছি।'
কৈখালী গ্রামের আবুল বাসার সরদার বলেন, আমার কৃষির ক্ষতি হয়েছে, পুকুরের মাছ বের হয়ে গেছে। পানি অতিমাত্রায় বাড়ায় নেট দিয়ে মাছ আটকাতে পারিনাই। খামারের ছাগলগুলো পাসের বিল্ডিয়ের ছাদে উঠিয়ে রেখেছি। পরিস্থিতি আরও স্থায়ী হলে আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবো আমি।
রাজাপুর উপজেলার আগাংরিয়া গ্রামের জালাল মৃধা, হনুফা বেগম, মীর কাশেম আলী এবং লতিফা বেগমও জানালেন তাদের দুর্ভোগের কথা। পানির সাথে বসত ঘরে ঢুকছে সাপ ও নানা রকম কিট-পতঙ্গ। বিষখালীর তীরে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা পর্যন্ত এই দুর্ভোগ কাটার সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তারা।'
নলছিটি উপজেলার সরই গ্রামে পানি ঢোকার সাথে সাথে ক্ষয়ে যাচ্ছে নদীর পাড়। পানি কমার পর ভাঙনের কবলে পড়ার শংকায় রয়েছে এখানকার বাসিন্দারা। অন্যদিকে এ উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নে সড়ক ভেঙে নদীতে নেমে গেছে।
নলছিটির উপজেলা চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বলেন, 'সুগন্ধা নদীর নলছিটি অংশে বাঁধ নির্মানের জন্য সুপারিশমালা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে।'
এদিকে ঝালকাঠি পৌর এলাকায় রেকর্ডিয় সকল খাল প্রভাবশালীরা আগেই দখল করে নেয়ায় শহর থেকে বৃষ্টির পানি দ্রুত সরতে না পারায় সকল সড়ক তলিয়ে গেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পরেছে পৌর এলাকার বাসিন্দারা। সোমবারের বুষ্টিতে জেলা প্রশাসকের বাসভবন, সদর থানা কম্পাউন্ড, মসজিদবাড়ি রোড, ষ্টেশন রোড, কুমারপট্টি, কাপুরিয়া পট্টিসহ হাটু পানি জমেছে শহরের গুরুত্বপুর্ণ সকল রোডে।
পাউবোর ঝালকাঠির নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, ‘বিষখালীর তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই ডিজাইন ডাটা পাঠানো হবে।’
জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম ফ্রিডমবাংলানিউজ এর প্রতিবেদক কে বলেন, ‘আমি কাঠালিয়া ও রাজাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম এবং আশ্রয়ন এলাকা ঘুড়ে এসেছি। পানিবন্ধিদের সকল প্রয়োজনীয় সুবিধা দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি। পানি অতিমাত্রায় বাড়লে নিম্নাঞ্চলের মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে।'