ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

ভরা মৌসুমেও ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা

চট্রগ্রাম ব্যুরো | আপডেট: শুক্রবার, আগস্ট ৪, ২০২৩

ভরা মৌসুমেও ইলিশ পাচ্ছেন না জেলেরা
ভরা মৌসুমেও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে না ইলিশ। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক কম ইলিশ ধরা পড়ছে। আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ চট্টগ্রামের জেলেরা। অনেক জেলে তাদের খরচ তুলতে পারছেন না। মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। ইলিশের অভাবে খাঁ খাঁ করছে চট্টগ্রামের আড়তগুলো। নেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক।

জেলেরা বলছেন, বাংলাদেশে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে মাছ ধরায় কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা ছিল না। ফলে ওইসব দেশের জেলেরা বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানার ভেতর থেকে এই সময়ে মাছ শিকার করেছে। এ কারণে নিষেধাজ্ঞা শেষে এখন আগের মতো ইলিশ ধরা পড়ছে না।


ইলিশ স্বল্পতার কারণে নগরীর ফিশারিঘাটে ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের পাইকারি দাম এখন ১০০০ থেকে ১১০০ টাকা, ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে। আর এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা। অথচ গত বছর এ সময় এই ঘাটে এর অর্ধেক দামে ইলিশ বিক্রি হয়েছিল।


২০ মে থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকার পর আবার মাছ ধরা শুরু হয়। জেলেরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিুচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় এখন ইলিশ ধরা পড়ছে না। ইলিশ শিকারের জন্য ধারদেনা করে জাল-দড়ি বানিয়েছিলেন অনেকে। পরিকল্পনা ছিল মাছ বিক্রি করে ঋণ শোধ করবেন। কিন্তু এখন ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন তারা।

এদিকে, ইলিশ আহরণের খরচ বেড়েছে। আবার ইলিশও ধরা পড়ছে কম। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন জেলেরা। ইলিশঘাট হিসাবে পরিচিত ফিশারিঘাট, রাসমনি ঘাট, আনন্দবাজার ঘাট, উত্তর কাট্টলি, দক্ষিণ কাট্টলি, আকমল আলী ঘাটে আগের মতো ইলিশ আসছে না। এছাড়াও জেলার বাঁশখালী, মিরসরাই, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ ও সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় এলাকায়ও ইলিশ তেমন ধরা পড়ছে না। ফলে চট্টগ্রামের বাজারে ইলিশ নেই বললেই চলে। অল্প যা মিলছে তার দাম আকাশ ছোঁয়া।

নগরীর ফিশারিঘাট থেকে মাছ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। ফিশারিঘাটে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ আসলেও ইলিশ তেমন আসছে না বলে জানালেন আড়তদাররা। তারা জানান, যে যেসব নৌকা বা ট্রলার সাগরে গেছে, সেগুলো পর্যাপ্ত ইলিশ পাচ্ছে না। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা জানান, মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালীন চট্টগ্রামের ১৭ হাজার ৫শ’ নিবন্ধিত জেলে পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল সাহায্য দেয়া হয়েছে। ইলিশের বেচাকেনা বন্ধ করতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাটবাজারেও অভিযান চালানো হয়েছে।

নগরীর নতুন ফিশারিঘাট এলাকায় রোববার গিয়ে দেখা যায়, আড়তগুলোতে আগের মতো ইলিশ নেই। নেই জেলেদের তেমন কর্মতৎপরতা। জেলেরা জাল গুটিয়ে অলস সময় পার করছেন। কেউ কেউ জাল-দড়ি পরিষ্কার করছেন। অন্যান্য বছর এ সময় সাগরে থাকত ট্রলারের মিছিল। জাল ফেললেই ধরা পড়ত রূপালি ইলিশ।

ফিশারিঘাটের জেলে রুবেল দাশ যুগান্তরকে বলেন, অন্য বছর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে কয়েকদিন বেশি ইলিশ ধরা পড়ত। এখন তার অর্ধেকও ধরা পড়ছে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি। বুঝতে পারছি না, মহাজনের টাকা কীভাবে শোধ করব।

চট্টগ্রাম ফিশারিঘাটের আড়তদার রহমান জানান, এ বছর ইলিশের আকাল চলছে। ফলে আড়তেও আসছে কম। অনেক জেলে দাদন নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যান। কিন্তু ইলিশ না পাওয়াতে জেলেদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।