ফ্রিডম বাংলা নিউজ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪ |

EN

৩২০ মামলায় ঝুলছেন ৬১ হাজার বিএনপির নেতাকর্মী

জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: শুক্রবার, আগস্ট ৪, ২০২৩

৩২০ মামলায় ঝুলছেন ৬১ হাজার বিএনপির নেতাকর্মী
হত্যাসহ সন্ত্রাস দমন ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার গ্যাঁড়াকলে গাইবান্ধায় ৩২০ মামলায় ঝুলছেন বিএনপির ৬১ হাজার নেতাকর্মী। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আইনজীবীদের সহযোগিতা পাচ্ছেন। এ কারণে মামলা কাঁধে নিয়ে গাইবান্ধায় সরকারবদলের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিএনপির প্রথম সারির কয়েক নেতা গা বাঁচাতে সরে গেছেন দল থেকে। গাইবান্ধায় বিএনপির নেতাদের কাছ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টিটুল বলেন, বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে সরকারি দল ও পুলিশ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। কোথাও পটকা ফুটলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। আন্দোলনে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দমন করতে তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় একাধিক মামলা। কিন্তু তারপরও গাইবান্ধা বিএনপি থেমে নেই। প্রতিটি আন্দোলন সফল করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, এ সরকারের আমলে গাইবান্ধায় ৭টি হত্যা মামলা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়াসহ অগ্নিসন্ত্রাসের মামলা দেওয়া হয়। নিরপরাধ নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়।

বিএনপি যাতে মাঠে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে না পারে, সেজন্য গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় ৫টি মামলা দেওয়া হয় ১৫০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। সুন্দরগঞ্জে ৮০টি মামলায় আসামি করা হয় ১৫ হাজার, পলাশবাড়ীতে ৮০টি মামলায় ফাঁসানো হয় ১০ হাজার, গোবিন্দগঞ্জে ৮৫টি মামলায় ১৫ হাজার, সাদুল্লাপুরে ২০টি মামলায় ২ হাজার এবং সাঘাটা উপজেলায় ১৫ মামলায় ১ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। গাইবান্ধা সদর উপজেলায় হত্যা, অগ্নিসংযোগসহ ৩০টি মামলায় ৩ হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা দেওয়া হয়। রেলওয়ে থানায় ৫টি মামলায় দেড় হাজারসহ মামলা দেওয়া হয় ৩২০টি। আসামী করা হয় মহিলা নেত্রীসহ ৬১ হাজার ১৫০ নেতাকর্মীকে। তাদের মধ্যে অনেক নেতাকর্মী কারাভোগ করেছেন অনেকদিন। মামলা কাঁধে নিয়ে কারাগারে মারা গেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডলার। মামলা কাঁধে নিয়ে সাবেক এমপি রোস্তম আলী, আব্দুল মান্নান সরকার, আব্দুল আজিজ সরকার, মমতাজুর রহমান, মাহমুদুন্নবী রিটু, জাহেদুন্নবী তিমুসহ মারা গেছেন অনেকেই। তবে একসময়ের ডাকসাইটে নেতা অ্যাডভোকেট হামিদুল হক ছানা কারাভোগের পর জামিনে বেরিয়ে দল ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আনিসুজ্জামান খান বাবু বলেন, আমি মানুষ হত্যার রাজনীতি করি না। যে মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করব, তাদের হত্যা করে রাজনীতি করতে হবে-এমন কাজ বিএনপির কোনো নেতাকর্মী করতে পারে না। তিনি বলেন, আমি রাজনীতি করি, মানুষ খুনের রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। কিন্তু জাতীয়তাবাদের আন্দোলন ঠেকাতে হত্যাকাণ্ডের মামলায় আমাকে গ্রেফতার করা হয়। কারাগারে কাটাতে হয় অনেকদিন। মামলা দিয়ে আন্দোলন ঠেকানো মুশকিল। জেলা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দল গোছাতে এবং মাঠ পর্যায়ে মানুষকে সংগঠিত করতে ব্যস্ত। ডাক পেলেই শ শ নেতাকর্মী কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে থাকেন।

যুবদল নেতা মোশারফ হোসেন বাবু বলেন, মামলার ভয় আমরা করি না। জেল খেটেছি, মার খেয়েছি পুলিশের হাতে। পালিয়ে থেকেছি কতদিন, তা বলতে পারব না। গাইবান্ধায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকায় অনেকটা শান্ত পরিস্থিতি থাকে রাজনীতির মাঠে। রাজনৈতিক সংঘাত না থাকলেও পুলিশের ছাড় নেই। বিএনপির রাজনীতি ঠেকাতে পুলিশ থাকে আগে-পিছে। তারপরও আমরা মাঠ ছাড়ি না। গাইবান্ধা সদর থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুজ্জামান শহীদ বলেন, হামলা মামলা নিয়েই বিএনপি রাজনীতি করে। গাইবান্ধায় বিএনপির রাজনীতি বেশ সুসংগঠিত। রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে মামলায় পড়েছি। গাইবান্ধায় বিএনপির অর্ধলাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে, তারা হয়তো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তারপরও আইনগত সহায়তা পাচ্ছি দলের আইনজীবীদের কাছ থেকে। আইনজীবী মঞ্জুর মোর্শেদ বাবু বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের প্রায় প্রতিদিন আদালতে আসতে হয় হাজিরা দিতে। পারিবারিক কাজ ফেলে নেতাকর্মীদের আদালতে হাজিরা দেওয়া একটা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. ময়নুল হাসান সাদিক বলেন, আমরা মাঠে আছি এবং থাকব। যারা সরে গেছেন, তারা বিএনপির প্রথম সারির নেতা ছিলেন না।