ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, অক্টোবর ১৮, ২০২৪ |

EN

৮৩ লাখ টাকার অভিযোগ সৎসঙ্গের সাবেক সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে!

জেলা প্রতিনিধি | আপডেট: সোমবার, জুলাই ৩১, ২০২৩

৮৩ লাখ টাকার অভিযোগ সৎসঙ্গের সাবেক সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে!
রশিদ বইয়ের মাধ্যমে মাধ্যমে ভক্ত অনুসারীদের কাছ থেকে আদায়কৃত ইষ্টভৃতির ৮৩ লাখ টাকা ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের ফিলানথ্রপীতে জমা না দিয়ে নিজেদের কাছে গচ্ছিত রাখার অভিযোগ উঠেছে।

পাবনার হিমাইতপুর শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সৎসঙ্গ আশ্রমের আওতাধীন চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাবেক সভাপতি সুধীর রঞ্জন চৌধুরী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শংকর সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে এমন অভিযোগ।

একইসাথে পূর্ব ও বর্তমান মিলিয়ে তারা কত টাকা ইষ্টভৃতি আদায় করেছেন তার সঠিক হিসাবও দাখিল করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদেরকে দুই দফা নোটিশের মাধ্যমে আদায়কৃত বা গচ্ছিত ইষ্টভৃতির অর্থ কেন্দ্রীয় সৎসঙ্গ আশ্রমের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমার নির্দেশনা দেয়া হলেও তারা তা মানছেন না।

লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ভক্ত অনুসারীদের কাছ থেকে ইষ্টভৃতির অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে ৩০০টি অর্ঘ্য প্রস্বস্তি বই (রশিদ বই) কেন্দ্রীয় সৎসঙ্গ হিমাইতপুর পাবনা থেকে চট্টগ্রাম সৎসঙ্গ জেলা শাখার তৎকালীন সভাপতি সুধীর রঞ্জন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শংকর সেনগুপ্ত গ্রহণ করেন। দীর্ঘ সময়ে রশিদ বইয়ের মাধ্যমে ইষ্টভৃতির অর্থ সংগ্রহ করার পর ২৮৮টি রশিদ বইয়ের মুড়ি বই কেন্দ্রে অর্থাৎ পাবনায় পাঠান তারা। সে সময়ে আশ্রমের জনতা ব্যাংক পাবনা কর্পোরেট শাখার হিসাব নম্বরে তারা জমা দেন ২৫ লাখ টাকা। রশিদ বইয়ের হিসাব অনুযায়ী তারা ১ কোটি ৭ লাখ ৪১ হাজার ৬৮১ টাকা ইষ্টভৃতি আদায় করা হলেও ৮৩ লাখ টাকা এখনও সৎসঙ্গ আশ্রম পাবনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেননি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাবেক সভাপতি সুধীর রঞ্জন চৌধুরী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শংকর সেনগুপ্ত।

২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সাল চলমান পর্যন্ত চট্টগ্রাম সৎসঙ্গ শাখা থেকে আর কোন ইষ্টভৃতির টাকা পাঠানো হয়নি। ফলে চট্টগ্রাম এলাকায় দীক্ষাদাতা সহ-প্রতিঋত্বিকদের ঋত্বিকী প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০২২ সালের ১৫ অক্টোবর এবং চলতি বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি দুই দফা অভিযুক্ত দুইজনকে নোটিশের মাধ্যমে তাদের কাছে থাকা গচ্ছিত টাকা কেন্দ্রীয় সৎসঙ্গে জমাদানের নির্দেশ দেয়া হলেও অদ্যবধি তারা টাকা জমা দেননি।

সৎসঙ্গ হিমাইতপুর পাবনার সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কুমার সাহা বলেন, ঠাকুরের সংগ্রহকৃত ইষ্টভৃতির টাকা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির কাছে গচ্ছিত রাখার বিধান নেই। অথচ টানা লম্বা সময় ধরেই চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি ও সম্পাদক যোগসাজস করে ৮৩ লাখ টাকা নিজেরা গচ্ছিত রেখেছেন। টাকাগুলো কেন্দ্রীয় সৎসঙ্গ হিসাব নম্বরে জমা করার জন্য বারবার লিখিত ও মৌখিকভাবে তাগাদা দেয়ার পরও অজ্ঞাত কারনে তারা সে টাকা জমা না করে তালবাহানা করছেন। তাদের কর্মকান্ডই বলে দিচ্ছে তারা ঠাকুরের ভক্ত অনুসারী হলেও ঠাকুরের নির্দেশনা প্রতিপালন করছেন না।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত চট্টগ্রাম সৎসঙ্গের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শংকর সেনগুপ্ত বলেন, ইষ্টভৃতির সংগৃহিত টাকা কেন্দ্রীয় সৎসঙ্গে পাঠানোর কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তারপরও আমাদের সময়কালে বেশ কিছু টাকা পাঠিয়েছি। বাকি টাকাগুলো বিশেষ কাজের জন্য গচ্ছিত রাখা হয়েছে। কাজটা শুরু হলে পাঠানো হবে। তারা আমাদের নোটিশ দিয়েছেন বলছেন, কিন্তু আমরা কোনো নোটিশ পাইনি।

ঠাকুরের ইষ্টভৃতির টাকা নিজেদের হেফাজতে গচ্ছিত রাখার যৌক্তিকার বিষয়ে শংকর সেনগুপ্ত বলেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় সৎসঙ্গ আশ্রম পাবনার সার্বিক অবস্থান ভালো নয়। নানা অনিয়ম, অপব্যয় আর ক্ষমতার অপব্যবহার চলছে। পরিবেশ শান্ত হলেই টাকাগুলো ঠাকুরের মহৎ উদ্দেশ্যের কাজে ব্যয় করা হবে।

চট্টগ্রাম সৎসঙ্গের সাবেক সভাপতি সুধীর রঞ্জন চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একটি সুত্র জানায়, তিনি দেশের বাইরে আছেন।

হিমাইতপুর কেন্দ্রীয় সৎসঙ্গ আশ্রমের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক দিলীপ পোদ্দার জানান, ঠাকুরের উদ্দেশ্যে হিমাইতপুর আশ্রমকে ভক্তদের দেয়া টাকা কোনো অজুহাতে আটকে রাখার সুযোগ নেই। হিমাইতপুর সৎসঙ্গের টাকা কি উদ্দেশ্য ব্যয় করা হবে তা ঠিক করবে হিমাইতপুর সৎসঙ্গের কমিটি।

তিনি আরো জানান, হিমাইতপুর সৎসঙ্গের উপর অযাচিত খবরদারী ও হিমাইতপুর সৎসঙ্গ আশ্রমে বড় পদ প্রাপ্তির নিশ্চয়তার অপ-কৌশল হিসেবে তারা বেশ কয়েক বছর যাবত হিমাইতপুর সৎসঙ্গের টাকা আটকে রাখছেন।