ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

ইউনিয়নের টাকা লুটে বিপুল বিত্তের মালিক

বরিশাল ব্যুরো | আপডেট: বুধবার, জুলাই ১৯, ২০২৩

ইউনিয়নের টাকা লুটে বিপুল বিত্তের মালিক
ইউনিয়নের প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎসহ নানা দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ উঠেছে বরিশাল বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ হোসেনের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) শ্রমিকদের দেওয়া লিখিত আবেদনে এবং মঙ্গলবার ইউনিয়নের একাংশের সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়। অর্থ লুটপাটের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি জোর করে নেতৃত্ব দখলে রাখার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। ফরিদ অবশ্য এসব অভিযোগ স্বীকার করেননি। তার পালটা অভিযোগ, নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়ায় এ অপপ্রচার। ভোটাভুটি ছাড়াই নেতৃত্ব দখলের জন্য মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে।

এক সময়ের সাধারণ কসমেটিকস ব্যবসায়ী ফরিদকে নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছিল বরিশালের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে। ২০১৬ সাল থেকে টানা এ টার্মিনালে শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন ফরিদ। দীর্ঘ এ সময়ে ইউনিয়নের কোনো নির্বাচনও হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের একাংশের প্রত্যক্ষ মদদে তিনি ইউনিয়ন দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ ছিল তার প্রতিপক্ষের। এরই মধ্যে ছড়ায় তার বিপুল বিত্তবৈভবের কাহিনি। মাত্র ক’বছর আগেও অর্থনৈতিক দুরবস্থায় থাকা ফরিদ হঠাৎ কী করে এত সম্পদের মালিক হলেন তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। যে আলোচনার সত্যতা মেলে যুগান্তরের অনুসন্ধান আর দুদকে শ্রমিকদের দেওয়া লিখিত অভিযোগে।

বরিশালের গৌরনদীর নাঠৈ গ্রামের বাসিন্দা ফরিদের বাবা আলী হোসেন সরদার ছিলেন পেশায় ড্রাইভার। আর্থিকভাবে মোটামুটি চলনসই এ পরিবারের ছেলে ফরিদ ফেরি করে কসমেটিকস বিক্রি করতেন। ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহাদাত হোসেন লিটন বলেন, তাকে টার্মিনালে ফেরি করে কসমেটিকস বেচতে দেখেছি।

ক্ষমতাসীন দলের একটি অংশের নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে ফরিদ ইউনিয়নের সদস্য হয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক হন। নির্বাচনে আরও ২ জন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হলেও চাপের মুখে বাধ্য হন মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে। ৩ বছরের জন্য হওয়া পদে ৭ বছর ধরে আছেন ফরিদ। এক্ষেত্রে নির্বাচন দেওয়া কিংবা পদ ছাড়ার লক্ষণ নেই তার।

জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে এ শ্রমিক নেতার। মাত্র কয়েক বছরেই বনে যান বিপুল সম্পদের মালিক। নাঠৈ এলাকায় তৈরি করছেন দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। ইতোমধ্যে দুই তলা নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। চলছে তৃতীয় তলার কাজ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাড়িটি ৫ তলা করার কথা। গ্রামে প্রচুর দান-খয়রাত আর সামাজিক কর্মকাণ্ডে অনুদানও দেন তিনি।

এছাড়া আগৈলঝাড়ার গৈলা বন্দরে ২০-২৫ লাখ টাকা ব্যয় করে ছেলে হানজালাকে করে দিয়েছেন জুতার দোকান। বরিশাল নগরের ২২নং ওয়ার্ডেও কিনেছেন জমি। সেখানে চলছে আরও একটি বাড়ি নির্মাণ। শ্বশুরবাড়ি কাশিপুর এলাকায় ১৬ শতাংশ রয়েছে জমি। এছাড়া রয়েছে কয়েকটি থ্রি হুইলার এবং ৪ চাকার গাড়ি। দৃশ্যমান এসব সম্পদের বাইরে আরও অনেক জমি, নগদ টাকা রয়েছে বলে অভিযোগ বাস টার্মিনাল শ্রমিকদের।

ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ হেমায়েত হোসেন বলেন, সাধারণ শ্রমিকদের টাকা মেরেই এসব করেছেন ফরিদ। আমরা এ ব্যাপারে দুদকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি ৬-৭ বছরে সমিতির ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সাড়ে ৪ হাজার শ্রমিকের ৪ বছর ৬ মাসের চাঁদার টাকা, মাসিক কল্যাণ তহবিলের টাকা, ইউনিয়নের মালিকানাধীন বাসের আয়, শ্রমিক ইউনিয়নের নামে থাকা এফডিআরের টাকাসহ নানা খাতের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তিনি।

ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, কিছুদিন ধরেই আমরা তাকে অনুরোধ করেছি সব হিসাব বুঝিয়ে দিতে। তিনি কথা কানে তুলছেন না। পরে চলতি মাসের ১০ তারিখ তাকে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নোটিশ দেওয়া হয়। ৭ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব না দেওয়ায় আহ্বান করা হয় তলবি সভা। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মত অনুযায়ী তাকে সংগঠন থেকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। আমরা সাধারণ শ্রমিকদের শ্রমের টাকা ফেরত চাই।

অভিযোগ সম্পর্কে ফরিদ হোসেন বলেন, হিসাব চাওয়ার তারা কে? নির্বাচনের মাধ্যমে যে নতুন কমিটি আসবে তাদের কাছে হিসাব বুঝিয়ে দেব। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেই তো হবে না, প্রমাণ করতে হবে। ইউনিয়নের নেতা ছাড়াও আমি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। কসমেটিকসের পাইকারি ব্যবসা আছে। ঋণও আছে। ব্যবসা করেই সম্পদ অর্জন করেছি। ইউনিয়নের টাকা ইউনিয়নেই আছে। আইন অনুযায়ী প্রতি অর্থবছর শেষে অডিটর দিয়ে পুরো হিসাবের অডিট করানো হয়। শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হয় আয়-ব্যয়ের হিসাব। মাঝে করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হয়নি। শ্রম আদালতে একটি মামলাও ছিল। সব ঝামেলা মিটিয়ে যখন নির্বাচন করার উদ্যোগ নিলাম তখনই তারা মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করেছেন। তারা চায় ভোট ছাড়াই নেতৃত্ব দখল করতে। কিন্তু আমি নির্বাচন ছাড়া কাউকে কিছু করতে দেব না।