মানবদেহে তাপমাত্রা সহনশীলতার একটি নির্দিষ্ট পরিসীমা রয়েছে। মানুষের শরীরের জন্য সর্বোচ্চ সংকটপূর্ণ তাপমাত্রা হতে পারে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে শুরু করে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা অতিক্রম করলে মানুষের বিপাকীয় হারের মাত্রা বেড়ে যায়।
রোহ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের বার্ষিক সোসাইটি ফর এক্সপেরিমেন্টাল বায়োলজি কনফারেন্সে উপস্থাপন করা হয়। গবেষণাটিতে হিট স্ট্রেসে মানবদেহের প্রতিক্রিয়ার ধরণ, অভিযোজন ক্ষমতা, অভিযোজনের সীমাবদ্ধতা আর প্রতিক্রিয়া বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য জানানো হয়েছে। এপি।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সাধাণরত ‘হিট স্ট্রেস’ তৈরি হয়। ফলস্বরূপ বিভ্রান্তি, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা বা অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে কেউ কেউ।
২০২১ সালে পরিচালিত গবেষণায় অংশ নেন চারজন পুরুষ ও তিনজন নারী। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৬০ মিনিট ধরে অংশগ্রহণকারীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের হার, বিপাকীয় হার আর হৃদস্পন্দন পরিমাপ করা হয়। তাপমাত্রা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে নিশ্বাস ভারি আর হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে বলে জানান তারা।
গবেষণার সংগৃহীত তথ্যে উঠে এসেছে, গরম আর আর্দ্র আবহাওয়ায় মানুষের শরীরের বিপাকীয় হার বেড়ে যায়। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মানুষের বিপাকীয় হারের পরিবর্তন হয় ৩৫ শতাংশ। আর ২৮ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মানুষের শরীরকে তাপ তৈরি অথবা তাপ অপসারণের কাজ করতে হয় না।
রোহ্যাম্পটন ইউনিভার্সিটির জীবন ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের অধ্যাপক লুইস হ্যালসি বলেন, ‘বর্তমান উষ্ণায়নের বিশ্বে গবেষণার ফলাফল আরও বেশি মূল্যবান।’
গরম কেবল শুরু, বিজ্ঞানীদের সতর্কতা : বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ‘ভবিষ্যতে আরও তীব্র তাপপ্রবাহের জন্য’ মানুষ নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গ্লোবাল চেঞ্জ সায়েন্সের অধ্যাপক সাইমন লুইস এ কথা জানান। বলেন, ‘এটি কেবল শুরু।’ মাত্র ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধিতেই পৃথিবীর অবস্থা সংকটপূর্ণ হয়েছে। ২১০০ সালের মধ্যে আমাদের পৃথিবীর উষ্ণতাকে ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নিয়ে যেতে পারে, যা সত্যিই ভয়ংকর।’
সাইমন লুইস বলেন, ‘অতিরিক্ত তাপমাত্রার সঙ্গে মানুষকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।’ ‘সবার জন্য একটি বাসযোগ্য ও টেকসই ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার সুযোগ দ্রুত কমে যাচ্ছে। গভীর, দ্রুত ও টেকসই কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনলে তা কার্বন নিঃসরণকে কমাতে পারে’, জানান তিনি।