ভূমিহীন হবার উপক্রম হয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবারের। অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে তাদের ভবিষ্যৎ। সামনে ভিটামাটি ছেড়ে কোথায় যাবেন- এমন দু:শ্চিন্তায় কাটছে তাদের প্রতিটি মূহুর্ত।ব্যক্তি মালিকানার সামান্য জমিতেই সরকারি রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগের কারণে সেই মানুষগুলো ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে ফুঁসে উঠছেন স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনা পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার শেষ মাটিরা ইউনিয়নের শোলশাত লক্ষ্মীদিয়া গ্রামের।স্থানীয়রা বাসিন্দারা জানান, বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসা শহিদুল হক ভূঁইয়া ও তার শরীকদের যৎ সামান্য জায়গার উপর দিয়েই জোরজবরদস্তি করে রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।তাদের অভিযোগ, আগের রাস্তাটি পার্শ্ববর্তী খালে ধসে পড়লে স্থানীয়দের যাতায়াতের স্বার্থে শহিদুল হক ভূঁইয়ার পূর্বপুরুষ প্রয়াত আইন উদ্দিন ভূঁইয়া ও মমিন উদ্দিন ভূঁইয়ার পারিবারিক কবরস্থানের উপরে প্রথমে সরকারি রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় প্রশাসন। স্পর্শকাতর এ বিষয়টি নিয়ে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে দেন দরবার করলে পরে অবশ্য সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন সংশ্লিষ্টরা।
একটি কবরস্থানের ওপর কেন সরকারি রাস্তা নির্মানের সিদ্ধান্ত নেয়া হলো? - এমন প্রশ্নের জবাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, মূলত সরকারি জায়গার কিছুটা অংশে সেই কবরস্থান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। তবে স্থানীয়রা রাস্তার জন্যে স্বেচ্ছায় জায়গা দেবেন- এমন আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতেই কবরস্থান বাঁচিয়ে অন্যত্র রাস্তা নির্মান করা হয়।প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্তে কবরস্থানের উল্টোদিকে ব্যক্তি মালিকানার পারিবারিক উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণের নকশা করা হলে জমি হারানোর ভয়ে সন্ত্রস্ত পড়েন পরিবারটি সদস্যরা।পেশাগত কাজে মানিকগঞ্জে থাকা ওই পরিবারের সদস্য মাসুম বিল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, তার পরিবারের এবং শরীকদের সাকুল্যে জমি আছে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ।।
সেই জমির ভেতর দিয়ে রাস্তা করা হলে নিঃসন্দেহে আমাদের বসবাসের জায়গাটুকুও হারাতে হবে। যার ফলশ্রুতিতে ক্রমেই আমরা একসময় ভূমি হীনে পরিণত হবো- যোগ করেন মাসুম বিল্লাহ।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইতিপূর্বে প্রশাসন খালের উপর পাইলিং করে রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি আশ্বস্ত করলেও পরে হয়েছে উল্টো। এখন পূর্বপুরুষদের কবর রক্ষা করতে গিয়ে সেই চাপ সরাসরি এসে পড়েছে আমাদের ওপর।
প্রশাসন আমাদের নামে থাকা যৎ সামান্য জায়গার ওপর দিয়ে ই রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। এটা অত্যন্ত দু:খজনক। অগ্রহণযোগ্য এবং অমানবিক।
স্থানীয় প্রভাবশালীরা কলকাঠি নেড়ে প্রশাসনকে বিভ্রান্ত করে আমাদের জমি দখল করে রাস্তা নির্মানের পায়ঁতারা করছে- অভিযোগ করেন মাসুম বিল্লাহ।
মাসুম বিল্লাহ আরো অভিযোগ করে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জীব দাশ গত ১৯ জুন আমাদের এলাকায় আসেন এবং আমাদের ব্যক্তি মালিকানার জায়গা ওপর রাস্তা হবে বলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কথা বলেন। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জীব দাশ হুমকি দেয়ার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, প্রকৃত অর্থে জনগণের স্বার্থে এবং যারা অভিযোগ এনেছে তাদের সম্মতির ভিত্তিতেই সেখানে রাস্তা নির্মাণে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন। এটা স্থানীয় জনগণের বিষয়। যারা রাস্তা ব্যবহার করবে- এই সিদ্ধান্ত তারাই দেবে। সরকারি জায়গা না থাকলে স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তার জন্যে জায়গা দিতে অনীহা দেখালে প্রয়োজনে রাস্তা হবে না। তবে হুমকি-ধামকি দেবার বিষয়টি একেবারেই ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে প্রয়োজনে তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
যোগাযোগ করা হলে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহেদুর রহমানের জানান, বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আমার কথা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। তবে তা নিয়ে স্থানীয়ভাবে কোন সমস্যার উদ্ভব হলে তা যথাযথ নিয়মে সমাধান করা হবে বলেও মত দেন তিনি।
প্রভাবশালীদের অব্যাহত জবরদস্তি মুখে ভূমিহীন হবার আশঙ্কায় থাকা অসহায় পরিবারগুলো তাদের ভূমি রক্ষায় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে ।