ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪ |

EN

পিরোজপুরে সাবেক ওসি ও তার স্ত্রী সহ তিন জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

শাফিউল মিল্লাত, পিরোজপুর প্রতিনিধি | আপডেট: বৃহস্পতিবার, জুন ১৫, ২০২৩

পিরোজপুরে সাবেক ওসি ও তার স্ত্রী সহ তিন জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
পিরােজপুরের মঠবাড়িয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আব্দুল্লাহ ও তার স্ত্রী এবং শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পিরােজপুরের সহকারী পরিচালক মােস্তাফিজ বাদী হয়ে স্থানীয় দুদক কার্যালয়ে ১৮ কােটি সাড়ে ১৫ লাখ টাকা অবৈধ ভাবে অর্জনের অভিযােগে মামলাটি করেন।

সৈয়দ আব্দুল্লাহ নড়াইলের লােহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামের সৈয়দ মােহাম্মদ হােসেনের ছেলে। মামলার অপর দুই আসামি হলেন, সৈয়দ আব্দুল্লাহর স্ত্রী ফারহানা আক্তার ও শাশুড়ি কারিমা খাতুন।

সৈয়দ আব্দুল্লাহ বর্তমানে ফেনী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক (ক্রাইম শাখা) কর্মরত আছেন। তিনি ২০১৯ সালের মার্চ হতে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত পিরােজপুরের মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত ছিলেন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, সৈয়দ আব্দুল্লাহ ১৯৯১ সাল পুলিশের উপ-পরির্দশক হিসেবে যােগ দেন। তার বিরুদ্ধ ক্ষমতার অপব্যবহার, মাদক ও চােরাকারবারিদের সাথে সখ্যতা, মিথ্যা মামলার রেকর্ড ও অনৈতিকভাবে বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অভিযােগটি অনুসন্ধানের জন্য ২০২০ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় হত সমন্বিত জেলা কার্যালয় বরিশালে অনুসন্ধান এর জন্য অনুমােদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পিরােজপুর উদ্বােধনের পর অভিযােগটি স্থানীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মােস্তাফিজ অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেন।

আসামি সৈয়দ আব্দুল্লাহ প্রতারণার উদ্দেশ্য তার স্ত্রী ফারহানা আক্তার এর নামে দুটি এনআইডি কার্ড তৈরি করেন যার নম্বর ৬৮৬১৩০১৮৩৩ ও ৮৭০৮২০৩৮৬৭।  উল্লিখিত দুটি এনআইডি এর বিপরীতে আসামী ফারহানা আক্তার ট্যাক্স শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন)- ৪৬৯৩৯৪২৮১৮১২ এবং ৫৮২৪১২৬৫৭৪৫৫ গ্রহণ করন। এরপর বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত হিসাবে খােলেন। তিনি ১ কােটি টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্র ক্রয় ও ১ কােটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৪ টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা, ৩১ লক্ষ টাকায় গাড়ী ক্রয়সহ তিন কােটি সাত লক্ষ পচানব্বই হাজার আটশত চুয়ান্ন টাকা সাতাত্তর পয়সার অস্থাবর সম্পদ ক্রয় করেন। এছাড়া আসামী সৈয়দ আব্দুল্লাহ নিজ নামে দুটি প্লট, স্ত্রী ফারহানা আক্তার এর নাম দুটি আবাসিক ফ্ল্যাট, একটি বাণিজ্যিক স্পেস, স্ত্রী ফারহানা আক্তার এর ব্যাংক হিসাব হতে অর্থ পরিশােধ করে শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নাম একটি আবাসিক ফ্ল্যাট বাবদ মােট পনের কােটি সাত লক্ষ চৌষট্টি হাজার চারশত বত্রিশ টাকার অধিক মূল্যর স্থাবর সম্পদ ক্রয়ের তথ্য পাওয়া যায়। আসামিদের নামে মােট পনের কােটি সাত লক্ষ চৌষট্টি হাজার চারশত পনের টাকার স্থাবর ও তিন কােটি সাত লক্ষ পচানব্বই হাজার আটশত চুয়ান্ন টাকা সাতাত্তর পয়সার অস্থাবর সম্পদসহ সর্বমােট আঠারো কােটি পনের লক্ষ ষাট হাজার দুইশত ছিয়াশি টাকার স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

আসামি সৈয়দ আব্দুল্লাহ এর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার পদমর্যাদার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দূর্নীতির মাধ্যমে অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থ জ্ঞাতসার নিজের নামে ও স্ত্রী ফারহানা আক্তার এবং শাশুড়ি কারিমা খাতুনের নাম জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এসব সম্পদ করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা ও দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪২০/১০৯ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরােধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরােধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় পিরোজপুরের সহকারী পরিচালক মো. মোস্তাফিজ বলেন, গত ২৮ মে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের নির্দেশে সৈয়দ আবদুল্লাহর অবৈধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি সৈয়দ আবদুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী ফারহানা আক্তারের ট্যাক্স ফাইল জব্দ করা হয়েছে।