আনা ফ্রাঙ্ক হচ্ছেন হলোকস্টের শিকার সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও বিখ্যাত ইহুদি ব্যক্তি। তিনি তার মানসম্পন্ন লেখনীর জন্য পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কার তার দিনলিপি এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম সর্বাধিক পঠিত বই এবং অনেক চলচ্চিত্র ও নাটকের মূল বিষয় হিসেবে গৃহীত।
তার পুরো নাম আনেলিস মারি আনা ফ্রাঙ্ক। ১৯২৯ সালের ১২ জুন ভাইমার জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট আম মাইন শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে। জাতীয়তায় ১৯৪১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন একজন জার্মান। নাৎসি জার্মানির সেমিটিক বিদ্বেষী নীতির কারণে তিনি তার জার্মান নাগরিকত্ব হারান। তিনি আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি লাভ করেছেন তার দিনলিপির জন্য, যেখানে তিনি নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন তার অভিজ্ঞতাগুলোকে লিখে রেখেছিলেন।
১৯৩৩ সালে ফ্রাঙ্কের পরিবার আমস্টারডামে চলে যায়। সেই বছরেই নাৎসিরা জার্মানির ক্ষমতায় আসে। ১৯৪০ সালে তারা নাৎসি জার্মানির আমস্টারডাম দখলের কারণে সেখানে অন্তরীন হয়ে পড়েন। ১৯৪২ সালের দিকে ইহুদি জনগণ নিধন বাড়তে থাকায় তারা তার বাবার অটো ফ্রাঙ্কের লুকানো কক্ষে লুকিয়ে অবস্থান করতে থাকেন। দুই বছর পর ১৯৪৪ সালের ৪ আগস্ট সকালে তারা জার্মান নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে ধরা পড়েন। কে তাদের লুকানো বাসগৃহের কথা জার্মানদের কাছে বখশিসের বিনিময়ে জানিয়ে দিয়েছিল তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তারা ধরা পড়েন ও তাদেরকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আনা ফ্রাঙ্ক ও তার বোন মার্গোট ফ্রাঙ্ককে বার্গেন-বেলজান কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে ১৯৪৫ সালে টাইফাসে আক্রান্ত হয়ে তারা দুজনেই মৃত্যুবরণ করেন।
যুদ্ধ শেষে তার পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকা ব্যক্তি বাবা অটো ফ্রাঙ্ক আমস্টারডামে ফিরে আসেন। সেখানে তিনি আনার দিনলিপিটি (ডায়েরি) খুঁজে বের করেন। তার প্রচেষ্টাতেই দিনলিপিটি ১৯৪৭ সালে প্রকাশিত হয়। এটি মূলত ছিল ওলন্দাজ ভাষায় লেখা। ১৯৫২ সালে প্রথম বারের মতো দিনলিপিটি ইংরেজিতে অনূদিত হয়। এর ইংরেজি নাম হয় দ্য ডায়েরি অব আ ইয়াং গার্ল। বাংলায় এটি আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি নামে অনূদিত হয়। এটি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ডায়েরিটি আনার ১৩তম জন্মদিনে উপহারস্বরূপ দেওয়া হয়েছিল। যেখানে আনার জীবনের ১২ জুন ১৯৪২ থেকে ১ আগস্ট ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত সময়ের ঘটনাগুলো ফুটে উঠেছে।