মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিবগণ অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্টানটি রবিবার (০৪ জুন ২০২৩) রাত ০৮টায় শুরু হয়ে রাত ১০টায় শেষ হয়।
উপস্থিত ইমামাদের উদ্দেশ্যে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, 'আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন এডিস বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়৷ এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনভাবে যেন পানি জমে না থাকে।'
মেয়র আরও বলেন, 'এডিস মশা যখম কামড় দিবে মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতাই পারে এই ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি কর্পোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।'
ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ইমামরা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, 'প্রতিটি মসজিদ মাদ্রাসায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করনীয় বিষয়ে বয়ান করে আপনারা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবেন। ডেংগুর প্রকোপ রোধে জনগণকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করতে আমরা ডিএনসিসির কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিএনসিসি ও স্কাউটকে যুক্ত করেছি। ডিএনসিসির বিভিন্ন অঞ্চলে ৪০০মিটার×৪০০মিটার গ্রিডে ভাগ করে এই সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। আপনারাও এই সচেতনতায় যুক্ত হলে ইনশাআল্লাহ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।'
এসময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ীর পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরিদুল হক খান এমপি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন৷ ইমমা ও খতিবগণরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।'
তিনি আরও বলেন, 'করোনা মহামারীতে আপনারা মসজিদে মসজিদে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে আপনারা মানুষের যে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি করেছেন আল্লাহর বিশেষ রহমতে করোনায় আমাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম ছিল। করোনার মতো ডেঙ্গুর ক্ষেত্রেও ইমাম ও খতিবগণ মানুষকে সচেতন করে এটি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবেন এই প্রত্যাশা করি।'
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহঃ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলরবৃন্দ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাবৃন্দ ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।