সদরপুর উপজেলার জমানার ডাঙ্গি গ্রামে গত বুধবার ব্রিজের কাজ করার সময় মাটি ধসে তিন শ্রমিক প্রাণ হারানোর ঘটনায় ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) লিটন আলী এই কমিটির আহ্বায়ক কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বরুন কুমার বিশ্বাস, সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান ফারহান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ঘটনাটিকে মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক উল্লেখ করে জানান, তদন্তে কারো গাফলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন চরম অসস্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, এই ঘটনায় প্রাণ হারান নির্মাণশ্রমিক আবেদ খান (২৩), জুলহাস (২৪) ও অন্তর শেক (২২)। এসময় মাটি চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন । সে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুর্ঘটনা পর পরই ঠিকানারি প্রতিষ্ঠানের সব লোকজন এলাকা ছেড়ে পালি যাওয়ায় চরম ঝুঁকিতে রয়েছে একটি পাকা একতলা ভবনসহ ৩৩ হাজার ভোল্টেজের বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন।
বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিনে ঘুরে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সদরপুর উপজেলার জমাদ্দার ডাঙ্গি গ্রামের একটি খালের ওপর ২৫ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার চওড়া একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইমতিয়াজ আসিফ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ও স্থানীয়দের কথা অমান্য করে রাতের আঁধারে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মাটি খননসহ পাইলিংয়ের কাজ করে। ব্রিজের পাশেই থাকা একটি একতলা ভবন ও ৩৩ হাজার হাই ভোল্টেজের লাইনের খুঁটির নিচের অংশের প্রায় ১৫ ফিট গভীর করে মাটি খনন করে। মাটি খনন করায় ভবনটির বেজ ও বিদ্যুতের খুঁটির নিচের অংশ বেড়িয়ে পড়ে। গত কয়েক দিন ধরেই ভবন মালিক ওবায়দুর রহমান ও পাশের বাড়ির টিনশেড ঘরের মালিক তারেক ব্যাপারী ঠিকাদারকে কাজে বাধা দেয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েক বার দেনদরবারও হয়।
স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আজাহার সেক বলেন, আমি নিজে ঠিকাদারকে বারণ করেছি। কিন্তু সে শোনেনি। ঠিকাদারের অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এখন যদি প্রশাসন জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তবে একতলা ভবনটি ও বৈদুতিক খুঁটিটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়বে। ভবনের মালিক ওবায়দুর রহমান বলেন, আমি এই ঘটনার পর পরিবার-পরিজন নিয়ে ভবন থেকে বের হয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি।
বিষয়টি জানতে পেরে ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী তার দলীয় নেতাকর্মীদের পাঠিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ-খবর নেন। এ সময় স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মুঠোফোনে তিনি বলেন, সংসদে বাজেট অধিবেশন চলার কারণে আমি এই মুহূর্তে এলাকায় আসতে পারছি না। তবে আমার দলীয় নেতাকর্মীরা সব সময় খোঁজখবর নিচ্ছে। আমি আশা করব, প্রশাসন সঠিক তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করবেন। প্রধানমন্ত্রী উন্নয়ন দিয়ে দেশকে যখন উন্নত দেশে পরিণত করছেন ঠিক তখনই একটি মহল এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের স্বার্থ আদায় করছে। এলাকাবাসীর ক্ষতি করে যারা এই অপকর্ম করেছে তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। সংবাদটি শুনে আমি মর্মাহত। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা কামনা করছি। আমি প্রতিনিয়ত এলাকাবাসীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছি।
সদরপুর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মোমিন বলেন, মো. ইমতিয়াজ আসিফ এন্টারপ্রাইজকে আমরা কাজটি দিয়েছিলাম। তার বিরুদ্ধে কাজের শুরু থেকেই বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। আমরা ঘটনার তদন্তের আগেই দুর্ঘটনা ঘটে গেল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছি।
ফরিদপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) হেলালউদ্দিন জানান, ঘটনার পর স্থানীয় জনতা ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন মাটির নিচ থেকে তিন নির্মাণশ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে। এবিষয়ে সদরপুর থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের হয়েছে। এখনো পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ আসে নাই। পুলিশ তদন্ত করে পরে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।