গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রাজশাহী কৃষি ব্যাংকের (কোচাশহর শাখা) নিরাপত্তা প্রহরীকে হাত-পা বেঁধে ব্যাংক ডাকাতির পিছনে মূলহোতা ওই নিরাপত্তাকর্মী গোলাম হোসেন জুয়েল (৩৭) নিজেই। ব্যাংক বন্ধের দিনে তিনিই ব্যাংকের ভল্ট হতে ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৬৬০ টাকা চুরি করেন। ঘটনার তীর ভিন্ন দিকে নিতে নিজেই নিজের হাত-পা বেঁধে নাটক সাজান ব্যাংক ডাকাতির।
সোমবার (২৯ মে) দুপুরে জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা চত্বরে এক প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান গাইবান্ধার পুলিশ সুপার কামাল হোসেন। গোলাম হোসেন জুয়েল গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শ্রীপতি গ্রামের মৃত শামসুল হকের ছেলে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে কামাল হোসেন জানান, গত ২৫ মে অনুমান বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রতিদিনের ন্যায় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, কোচাশহর শাখার ব্যবস্থাপক জেসমিন আকতার (৩১) সব কার্যক্রম শেষে ব্যাংকের ক্যাশ ভল্টে বিভিন্ন নোট ও কয়েনের সর্বমোট ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ টাকা গচ্ছিত রেখে ভল্টের তালাবদ্ধ করে অফিসের স্টাফসহ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ব্যাংক থেকে বের হয়ে যান। পরের দুদিন ২৬ ও ২৭ তারিখ শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। পরে ২৮ মে সকালে তার অফিসের পরিচ্ছন্নকর্মী দুলাল মোবাইল ফোনে জানান ব্যাংকের মেইন গেইটের তালা খোলা। এমন সংবাদে ব্যবস্থাপক জেসমিন আকতার তাৎক্ষণিক তার সহকর্মী ফিল্ড অফিসার ফুয়াদ সরকার ও জয়নুল আবেদীন, দ্বিতীয় কর্মকর্তা ফরহাদ কবীরসহ ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংকের তিনটি তালা খোলা দেখতে পান। পরে ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে অফিসের চেয়ার টেবিল এলোমেলো দেখতে পান।
এ সময় তিনি ব্যাংকের নিরাপত্তাকর্মী গোলাম হোসেন জুয়েলকে না দেখতে পেয়ে উপস্থিত সবাইকে খুঁজতে থাকেন। খোঁজাখুঁজি একপর্যায়ে স্টোর রুমের ভেতরে দরজা খোলা এবং গোলাম হোসেন জুয়েলের হাত-পা বাঁধা কিন্তু তিনি অক্ষত অবস্থায় ছিলেন।
পরে বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং গোলাম হোসেন জুয়েলের হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দেয়।
পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে গোলাম হোসেন জুয়েলকে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুখে কিছু না বলে অসুস্থতার ভান করে। পরে পুলিশসহ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকা রাখার ভল্ট পরিদর্শন করে দেখতে পান ভল্টের টাকা রাখার চাপ ডোর, গ্রিল ডোর ও লৌহ সিন্দুক (ভল্ট) খোলা এবং ২৫ মের লেনদেনের ১৪ লাখ ৪৫ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৬৬০ টাকা নেই। অবশিষ্ট ২৬ হাজার ৫৪০ টাকা কয়েক ও দশ টাকার নোট ভল্টে রক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রায় জুয়েলের মাধ্যমে ভল্ট খোলা ও বন্ধের কাজ করতেন। গত ২৫ মে জুয়েলকে ভন্ট বন্ধের দায়িত্ব দেন। এছাড়া গেটের সব চাবি তার কাছেই থাকে। তাই জুয়েলকে সন্দেহবশত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞেস করলে একেক সময় একেক রকম কথাবার্তা বলতে থাকে।
পরে থানা পুলিশ ব্যাংকের স্টাফসহ স্থানীয় লোকজনদের সামনে গোলাম হোসেন জুয়েলকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি স্বীকার করেন নিজেই ব্যাংকের ভল্টের তালা সুকৌশলে খুলে ভল্টে রক্ষিত টাকা চুরি করে, নিজেই নিজের হাত-পা বেঁধে ডাকাতির নাটক সাজান।
পরে গোলাম হোসেন জুয়েলের বাড়ি শ্রীপতিপুরের বসতবাড়ি এবং ওই ব্যাংকে তার শয়নকক্ষ থেকে ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার করেন পুলিশ।
পুলিশ সুপার আরও জানান, এ ঘটনায় নিরাপত্তাকর্মী জুয়েলের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে অন্য কারো সম্পৃক্ততা আছে কিনা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।