Can't found in the image content. ফুলবাড়ীতে সেতু নির্মাণে ঠিকাদারের খেয়ালিপনা, দীর্ঘ দেড় বছরেও শেষ হয়নি নির্মান কাজ | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪ |

EN

ফুলবাড়ীতে সেতু নির্মাণে ঠিকাদারের খেয়ালিপনা, দীর্ঘ দেড় বছরেও শেষ হয়নি নির্মান কাজ

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর | আপডেট: সোমবার, মে ২৯, ২০২৩

ফুলবাড়ীতে সেতু নির্মাণে ঠিকাদারের খেয়ালিপনা, দীর্ঘ দেড় বছরেও শেষ হয়নি নির্মান কাজ
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ঠিকাদারের খেয়ালিপনায় কচ্ছপ গতিতে চলছে জাংগল সেতু নির্মাণ কাজ। নির্ধাররিত সময় অতিবাহিত হলেও কাজ সম্পন্ন হয়নি। এতে চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। পণ্য আনা নেয়ার জন্য যানবাহন চলাচলেও বিঘœ ঘটছে। এরই মধ্যে ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লোজজন কাজ সমাপ্ত না করেই লাপাত্তা হয়ে গেছে। 

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর ফুলবাড়ী উপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের চিন্তামন-আটপুকুর সড়কে জাংগাল নামক স্থানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুারো (এলজিইডি) এর রংপুর বিভাগ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প -২ (আর.ডি.আর.আই.আই.পি-২)  প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যায়ে এপ্রোজ সড়কসহ ২৫ মিটার দৈর্ঘ্য, সাড়ে ৫ মিটার প্রস্থ, পিসি গার্ডার ব্রীজটির (সেতু) নির্মাণকাজ শুরু করে যশোরের আইসিএল প্রাইভেট লিঃ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর নির্মাণকাজ শেষ করে সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা থাকলেও, বিভন্ন টালবাহানায় কাজের মেয়াদ পেরিয়ে ৬ মাস হতে চললেও নির্মাণ কাজের কোন অগ্রগতি নেই। শুধুমাত্র ২২টি পিলারের পাইলিং এর কাজ হয়েছে। এরই মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন যন্ত্রপাতি ফেলে কয়েক দফায় লাপাত্তা হয়ে যায়। বর্তমানে পুনরায় সেতুর কাজ শুরু হলেও কাজের তেমন গতি নেই।

স্থানীয়রা জানায়,২০২২ সালের নভেম্বর মাসে সেতুটি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময় পেরিয়ে এ পর্যন্তু শুধুমাত্র পাইলিং কাজ করেছে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেতু নিমার্ণের সিংহভাগ কাজ এখনো বাকি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উপজেলার দওলাপাড়া, দাদুল, রুদ্রানী, মইচাঁন্দা, বাজনাপাড়া, রামেশ্বরপুর, চম্বুক, মিরপুর, রশিদপুর, আটপুকুরহাটসহ আশপাশের গ্রামের মানুষ।

ফুলবাড়ী উপজেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দুরে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটির পশ্চিম দিকে উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী আটপুকুর হাট। সপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার হাটের দিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ১০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে এই সেতু পার হয়ে ওই হাটে। হাটে প্রতি সম্পাহে প্রায় ৪০-৫০-টি ধানের গাড়ী লোড হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়। একইসাথে রয়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ ১০/১২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেতুর পুর্ব দিকে চৌরাইট,মাদিলাহাট,চিন্তামন সহ উপজেলা সদর রয়েছে আনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যা ওই জাংগল ব্রীজ পার হয়ে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু নির্মাণকাজে দীর্ঘ সময় ক্ষেপন হওয়ার কারণে এলাকর মানুষরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে ওই সেতুর পাশে নির্মিত বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। ওই বিকল্প রাস্তার কারণে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায়, দুই পাশের আবাদি জমি তলিয়ে যায়,সেসময় ফসল বাচাতে পানি নিস্কাশনের জন্য ওই বিকল্প রাস্তাটি কেটে দেয় এলাকাবাসী। একই কারণে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের মালামালবাহী গাড়ী চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অন্যদিকে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে  ছোট-বড় যানবাহন। বিকল্প দিক দিয়ে ঘুরে যেতে হলে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার রাস্তা বেশিপাড়ি দিতে হয়।

স্থানীয় আব্দুর রহমান, রফিকুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, দির্ঘ এক বছরের অধিক সময় ধরে সেতুটি নির্মাণ কাজ চলছে। মাঝে ঠিকাদারের লোকজন লাপাত্তা হয়ে যায়। এরপর কাজ বন্ধ হয়ে থাকে দির্ঘ সময়। বিশেষ করে উপজেলা সদরের সাথে যোগযোগ এবং দ্রুত চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বর্ষার আগেই সেতু নির্মাণ কাজ শেষ না হলে আবারও আমাদের দুভোর্গ পোহাতে হবে।

শিক্ষার্থী রনি, সালমান শাহ, মাহফুজ রানা বলেন, এই রাস্তা দিয়ে আমাদের প্রতিদিন স্কুল কলেজ যাতায়াত করতে হয়। নির্ধারিত সময়ে সেতুটি নির্মাণ না হওয়ায় গত বর্ষায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। 

উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্র জানায়, কয়েক দফা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দেওয়ার পর সম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। 

স্থানীয় আটপুকুরহাটের ব্যবসায়ি নজমুল হক, আহাদ আলী, গোলজার হোসেন বলেন, ওই সেতু পেরিয়ে আমাদের মালামাল আনতে উপজেলা সদরে যেতে হয়। কিন্তু সেতুর কারণে বিকল্প রাস্তা দিয়ে গেলে ৮/১০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে করে খরচ বাড়ে, পণ্যের দামও বৃদ্ধি পায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে স্থানীয়দের পাশাপাশি আশপাশের এলাকার মানুষজনকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন মাধ্যমে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করার আবেদন নিবেদন করেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

ঠিকাদারের সইড ম্যানেজার জয়নাল আবেদিন এর সাথে কথা বললে,তিনি জানান, সেতুটি নির্মান করতে ২২টি পাইলিং করতে হয়েছে। সেখানে মাটির সমস্যার কারনে পাইলিং করতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে আশা করাযায় আগামী ৪-৫ মাসের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করা যাবে।

ঠিকাদার রবিউল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার মুঠো ফোনে (০১৭১১১৪২৩০৬) বারবার ফোন কল করলেও তিনি ফোন কল গ্রহন করেননি। 

এবিষয়ে ফুলবাড়ী প্রকৌশলী (এলজিইডি) মিজানুর রহমান সরদার বলেন, কাজ শুরু হয়েছে ঠিকাদার মালামাল আনতে গেছে। ঠিকাদারী করতে এমন সমস্যা হতেই পারে,কারন বর্তমানে সবরকম মালামালের দামবৃদ্ধি পেয়েছে তাই কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তাছাড়া সুনেছি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেলায় সময় চেয়ে আবেদন করেছে,তবে আবেদনের কাগজ এখোনো পাইনি। তবে ঠিকাদারকে বুঝিয়ে কাজটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।