ঘুর্ণিঝড় 'মোখার' প্রভাবে ব্যাহত হয়ে পড়েছে লক্ষ্মীপুরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর মধ্যে রামগতির চর আলেকজান্ডার, কমলনগরের মেঘনাপাড়ের কিছু অংশ, রায়পুরের মিয়ারহাট ও মূল ভূখন্ড থেকে বিছিন্ন টুনির চর বরাবরের মতোই অবস্থান করেছিল ঝুঁকিতে। ১৩মে সন্ধ্যা ও ১৪ মে দুই দফায় রায়পুরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো রায়পুর উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে পরিদর্শন করা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের সময় ঐ চরের মানুষগুলোকে উদ্ধারেও প্রস্তুত রয়েছে ট্রলার,নৌকা ও অন্যান্য নৌযান- এই মর্মে নিশ্চিত করেছে রায়পুর উপজেলা প্রশাসন। তবে জেলার উপকূলীয় তিনটি উপজেলার দুরবর্তী চরআঞ্চল থেকে কিছু মানুষ পরিবার ও গবাদিপশু সমেত আশ্রয় কেন্দ্র ও শেল্টার হাউজগুলোয় আশ্রয় নিয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
জেলার রায়পুরের স্থানীয় যারা সয়াবিন চাষি রয়েছেন তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সয়াবিনের ফলন এবার ভালো হয়েছে।দামও গতবারের তুলনায় বেশি। তবে ঘুর্ণিঝড় মোখার এই সময়ে আড়তে সেগুলো মজুদ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেক ব্যবসায়ীকে। নদীর উত্তাল অবস্থার কারণে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে সয়াবিন ট্রলারযোগে নিয়ে আসতে পারছেন না তারা।
লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় তিনটি উপজেলায় ঘুর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহন করেছে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ। ঘূর্নিঝড় 'মোখা' মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করার বিষয়ে ইতোমধ্যে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করা হয়েছে,তবে প্রশাসনের প্রস্তুতিতেও আগ্রহ নেই নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিতে। লক্ষ্মীপুরে সকল নৌযান চলাচলে সতর্কতা আরোপ করা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা উপকূলে আঘাত হেনেছে। এতে লক্ষ্মীপুরসহ উপকূলীয় কয়েকটি জেলাকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে ঘূর্ণিঝড় 'মোখা' মোকাবেলায় ১৮৫টি (আশ্রয়-কেন্দ্র) সাইক্লোন শেল্টার খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ। অন্যদিকে শুক্রবার (১২মে) থেকে লক্ষ্মীপুর-ভোলা-বরিশাল রুটের মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাট থেকে সকল নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। লক্ষ্মীপুর-ভোলা রুটের ফেরি চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শনিবার (১৩ মে) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে লক্ষ্মীপুর মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাটের ট্রাফিক সুপার ভাইজার শরীফুল ইসলাম ও ফেরীঘাটের প্রান্তিক সহকারী রেজাউল করিম রাজু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মজুচৌধুরীরহাট লঞ্চঘাটের ট্রাফিক সুপার ভাইজার শরীফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এ রুটে ৫টি লঞ্চ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সবগুলো লঞ্চই ঘাটে রয়েছে। এর মধ্যে দুটি আমাদের ঘাটে, দুটি বরিশাল ও ১টি ভোলার ইলিশাঘাটে রয়েছে। ট্রলার, স্পিডবোটও বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মজুচৌধুরীরহাট ফেরীঘাটের প্রান্তিক সহকারী রেজাউল করিম রাজু বলেন, আমাদের এ রুটে ৬ টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে ২টি আমাদের ঘাটে রয়েছে। বাকিগুলো ইলিশাঘাটে রয়েছে। রাত ১০টার দিকেই ফেরি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন লক্ষ্মীপুরের মেঘনার উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে নিজেদের গবাদিপশু রক্ষা নিয়ে চিন্তিত তারা। প্রশাসনের তরফ থেকে ১৮৫ টি আশ্রয় কেন্দ্র ও শেল্টার হাউজ প্রস্তুত রয়েছে বলেও রবিবার জানানো হয়। শুক্রবার (১২মে) থেকে চলছে ঘুর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলার সব ধরনের প্রস্তুতি।
জেলা প্রশাসক মোঃআনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, সাইক্লোন শেল্টারের পাশাপাশি ৬৪টি মেডিকেল টিম থাকবে। এছাড়া দূর্যোগকালীন ত্রাণ তহবিলে ৮ লাখ ১২ হাজার টাকা ও ৪২০ মেট্টিক টন চাল রয়েছে। একটি জরুরী দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও হেল্পলাইন নাম্বার চালু করা হবে।সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূর্যোগকালীন কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দূর্যোগ থেকে মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণী রক্ষায় ফায়ার সার্ভিস, জনপ্রতিনিধি ও রেড ক্রিসেন্টসহ স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করবে।
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর লক্ষ্মীপুর জেলা কমান্ডেন্ট নুরুল আফছার বলেন, ঘুর্ণিঝড় মোখা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন এবং আমাদের বাহিনীর পক্ষ থেকে আমরা সচেতনামূলক কার্যক্রম বিগত সময় থেকেই চালাচ্ছি। আমাদের বাহিনীর হেডকোয়ার্টার থেকে তদারকি চলছে। জেলার তিনটি উপকূলীয় উপজেলায় (রামগতি,কমলনগর, রায়পুর) মাইকিং এবং সচেতনতা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নদীতে মাছ ধরা নৌকা এবং ট্রলারগুলো ইতোমধ্যে সরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শেল্টার হাউজ ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
রবিবার (১৪মে) সকাল ৮টা নাগাদ লক্ষ্মীপুর জেলা জুড়ে শুরু হয় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। রামগতির চর আলেকজান্ডারসহ মেঘনাপাড়ের আশপাশের এলাকাগুলোয় উল্লেখিত সময়ে বাতাসের প্রবাহও লক্ষ্য করা গেছে। স্বাভাবিকের তুলনায় নদীর পানিও বেড়ে যায় এ সময়।