ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪ |

EN

গাছে গাছে যেন রঙ্গের মিছিল

ফ্রিডমবাংলানিউজ ডেস্ক | আপডেট: শুক্রবার, মে ১২, ২০২৩

গাছে গাছে যেন রঙ্গের মিছিল
গ্রীষ্মের  কড়া রোদ আর তীব্র দাবদাহে বিষণ্ন নগরজীবন। শান্তি নেই কোথাও। প্রচন্ড গরমে যখন হাঁসফাঁস অবস্থা তখন মনকে সতেজ করে দেয় নির্মল প্রকৃতির সৌন্দর্য্য। অসহনীয় তাপমাত্রার মধ্যে উদার প্রকৃতি হাজির হয় তার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য নিয়ে।

প্রাকৃতিক উদারতায় পিছিয়ে নেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ও। রাজাধানীর অদূরে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সেজেছে রঙিন চাদরে। ঝলমলে রৌদ্রের বৈশাখে মায়া নগরী ভরে গেছে  হরেক রঙের সব ফুলে। গোটা ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছে পুষ্পরাজ্যে। কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালু, কনকচূড়া, বাগানবিলাস, জবা ও কাঠগোলাপের সাদার মায়ায় সেজেছে ৭০০ একরের এই নগরী। এসব ফুলে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায় প্রজাপতি। ফুল গাছের ডালে অবাধে বিচরণ করছে কাঠবিড়ালি। ক্যাম্পাস মেতে উঠেছে প্রকৃতির মিলনমেলায়। এক পসরা বৃষ্টি এসে যেন বাড়িয়ে দেয় প্রকৃতির এই দুষ্প্রাপ্য সৌন্দর্য্য।


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পাশে সারি সারি গাছে ফুটে রয়েছে রক্তবর্ণের কৃষ্ণচূড়া । বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকা, মুন্নী সরণী, চৌরঙ্গী, বেগম খালেদা জিয়া হলের সামনের সড়কসহ কোথায় নেই এই কৃষ্ণচূড়া! চিরচেনা নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ক্যাম্পাসে সবুজের মাঝেমাঝে কৃষ্ণচূড়ার লাল আভা দেখে মনে হয় যেন আগুন জ্বলছে।

হলুদ শাড়ী পরে সবুজ প্রকৃতির মাঝে শোভা ছড়াচ্ছে যে ফুলটি সেটি হলো 'কনকচূড়া'। অলংকারের মতো ঝুলতে থাকা এই ফুলের আছে দীর্ঘমঞ্জরী। প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজিয়ে তুলতে কনকচূড়া ফুলের জুড়ি নেই। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বর্ধণে কনকচূড়া দারুণ এক নিসর্গ মায়া এনে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তন সামনে থেকে শুরু করে শহীদ মিনার,মুরাদ চত্ত্বর, প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিয়ে  আ.ফ.ম কামালউদ্দীন হলে যাওয়ার রাস্তার দুপাশ দিয়ে সারি সারি গাছে জায়গা দখল করে নিয়েছে এই ফুল।


ক্যাম্পাস জুড়ে ফু্টে থাকা কৃষ্ণচূড়া আর কনকচূড়ার নান্দনিকতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের ৪৩ ব্যচের শিক্ষার্থী আবু সাইদ বলছিলেন, ' ক্যাম্পাসে যে ফুলটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে সেটি হলো কৃষ্ণচূড়া। লাল রঙের ফুলগুলো যখন বাতাসে দোলা খায় তখন মনে হয় প্রকৃতি যেন মশাল মিছিল করছে। সাথে সারি সারি গাছে ফুটে থাকা কনকচূড়ার হলুদ ছায়া যখন ক্যাম্পাসের লেক গুলোতে পড়ে তখন মনে হয় লেকের মাছেরা হলুদ শাড়ি পরে বসন্ত উৎসবে মেতেছে। বৃষ্টি হলে যখন ফুলগুলো রাস্তার উপর পড়ে থাকে তখন সত্যিই অসাধারণ লাগে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে অমর একুশে ভাষ্কর্য। এই স্থাপত্যকর্মের সামনে রাস্তার  অপর পাশে  সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে সাদা ও গোলাপি রঙের মিশ্রণের এক ফুল সারিবদ্ধ গাছের মাথায় যেন ছেয়ে আছে বলে মনে হয়।সমাজবিজ্ঞান থেকে শহীদ মিনার পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের এ ফুলের ফাঁকে ফাঁকে কিঞ্চিৎ আকাশ দেখা যায়। এ ছাড়া কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন ও শহীদ সালাম-বরকত হলের পাশে সারি করে ২০ টি নতুন গাছ লাগানো হয়েছে। এসব গাছে গোলাপী রঙের এ ফুল দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হয়ে দেখতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে, চৌরঙ্গী মোড়ে ফুটে থাকা দুই প্রজাতির এ ফুলের নাম ক্যাশিয়া রেনিজেরা ও ক্যাশিয়া জাভানিকা।

লাল ও হলুদ ফুলের এই সমারোহের মাঝে শোভাবর্ধনে কার্পণ্য করেনি জারুল ফুল। গ্রীষ্মে কচি পাতায় ভরা গাছের ডালের আগায় বেগুনি রঙের জারুল ফুল বেশ নজর কাড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায় অর্ধশতাধিক জারুল গাছ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের পুকুর পাড়ে সারি সারি এ জারুল গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইজারল্যান্ড এলাকায় লেকের ধারের গাছগুলোতে বেগুনি রঙের ফুল যখন বাতাসে দোল খায় তখন মানব হৃদয়েও এক ধরনের শান্তির দোলা বয়ে যায়।

এ সব ফুল ছাড়াও ক্যাম্পাসে ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়বে লাল জবা, সোনালু, বাগানবিলাস ও কাঠ গোলাপ। তবে কাঠ গোলাপ ফুলের গাছ বিভিন্ন হলসহ ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ সড়কের ধারেই রয়েছে। তরুণীদের কাছে কাঠগোলাপ ফুলের গ্রহণযোগ্যতাও বেশ। তাইতো ক্যাম্পাসের ছাত্রীদের খোঁপায় এই ফুল দেখতে পাওয়া যায়। ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা এসব ফুলের সঙ্গে সময় কাটিয়ে, ছবি তুলে তাঁদের অবসাদ দূর করে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, দর্শনার্থীরাও ভীড় জমায় এসব নান্দনিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী এলাকার যাত্রী ছাউনির ঠিক পিছনেই পদ্মপুকুর। সেখানে  গিয়ে দেখতে পাওয়া যায় এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। পুকুর জুড়ে  ফুটে রয়েছে সোনালী রঙের পদ্ম। পুকুরের চারপাশ জুঠে ভরে আছে কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া ও জারুল ফুলে। নিচে পানির উপরে ভেসে থাকা পদ্মা আর উপরে ছেয়ে থাকা বাহারি রঙের ফুল তৈরি করেছে এক অপরুপ দৃশ্য। সেখানে ছবি তুলছিলেন দুইজন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের  ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী লামিয়া জান্নাত বলেন, 'গত শনিবার সকালে বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে এসে ফুলে ফুলে ভরে গেছে সবুজ প্রকৃতি। উষ্ঠু দুপুরে সোনালু ফুলের ক্যাম্পাস আমাকে যেন বিমোহিত করে ফেললো। মাত্র কিছু ঘন্টার মধ্যেই মনে হচ্ছিল আমি তো এখানেই ছিলাম।সামান্য কিছু সময়ের ব্যবধানে জাবি ক্যাম্পাস নিয়ে হাজির হলো নতুন এক রুপ।বসন্তের পর গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোধেও আত্মতৃপ্তি উপভোগ করছি।'

উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ছালেকুল আহমেদ বলেন, গাছপালা বেড়ে উঠার জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার সবটাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। এখানে মাটির পুষ্টিগুণও বেশি সে কারণে এতো বিপুল পরিমাণে ফুল ফোটে। তাছাড়া আমরা ভালো মানের বা বংশের গাছ রোপণ করি সেকারণেও এখানে ফুলগুলো বেশি পরিমাণে ফোটে।