ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪ |

EN

সরকারী ভাবে ভুট্টা ক্রয়ের দাবি কৃষকদের

বাম্পার ফলনেও দাম নিয়ে হতাশায় ভুট্টা চাষিরা

মেহেদী হাসান, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর | আপডেট: রবিবার, মে ৭, ২০২৩

বাম্পার ফলনেও দাম নিয়ে হতাশায় ভুট্টা চাষিরা
স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায়, ভুট্রা চাষে ঝুকছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষকরা। এবছর৩ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে এ উপজেলায়। ভুট্টার বাম্পার ফলন হলেও বাজারদর কম হওয়ায়,দাম নিয়ে হতাশায় পড়েছেন ভুট্টা চাষিরা । শুরুর দিকে ২২শ টাকা বস্তা (৮২কেজি) থাকলেও সেই দাম ১৫০০ টাকায় নেমে এসেছে। বাজার নিম্নমুখী থাকায় লোকসানের ঝুঁকি এড়াতে এখোনো ভুট্টা ভাঙতে পারছেন না অনেকে । ফলে মাঠের পর মাঠ শুকনো গাছসহ পড়ে রয়েছে ভুট্টা।

সরেজমিনে উপজেলার শিবনগর, আলাদিপুর, খয়েরবাড়ি, এলুয়ারীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভুট্টা ভাঙার যথেষ্ট উপযোগী হলেও মাঠেই পড়ে রয়েছে অনেক ভুট্টা। গাছসহ ভুট্টা শুখিয়ে ঝনঝনে হলেও ভাঙার আগ্রহ নেই কৃষকের। বাজার স্থিতিশীল না হওয়ায়, ক্রেতারাও ভুট্টা ক্রয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না তেমন। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন ভুট্টা চাষিরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর  সুত্রে জানাযায়, গত বছর উপজেলায় ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা আবাদ করা হয়েছিল। ভুট্টা উৎপাদন হয়েছিল ৩৯ হাজার ১৮০ টন। যার গড় ফলন ছিল হেক্টর  প্রতি ১২ টন। চলতি বছরে ৩ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হযেছে। যা গতবারের চেয়ে ৫২৪ হেক্টর বেশি।এবার গড় ফলন হেক্টর  প্রতি ১২ টনেরও বেশি।

একাধিক চাষির সাথে কথা বলে জানা যায়, ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছে,তবে বাজার দর  কম। এজন্য ক্রেতারও ভুট্টা কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ভুট্টা মাড়াই করার পর না শুকিয়ে রাখাও সম্ভব হয়না। আবার শুকাতে অনেক জায়গা  দরকার হয়  । অন্যদিকে ঝড় বৃষ্টি না হলে মোচাসহ কিছুদিন রাখা সম্ভব। তাই ক্ষেতেই মোচাসহ রেখে বাজার স্থিতিশীল হওয়ার অপেক্ষা করছেন তারা।

উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের পুরাতন বন্দর এলাকার কৃষক মামুনুর রশীদ বলেন, এবছর ১৫ বিঘা (৫একর) জমিতে ভুট্টা লাগিয়েছি। প্রথমের দিকে প্রতিবস্তা (৮২কেজি) ভুট্টা বিক্রি হয়েছে ২২শ টাকায়। তারপর দাম কমতে শুরু করে এখন ১৫০০টাকায় এসেছে। আমি সেই সময় ৬বিঘা জমির ভুট্টা প্রতিবস্তা ১৭৩০টাকা দরে বিক্রি করেছি।এখন বাজারের অবস্থা ভালো না। তাই সরকারীভাবে ভুট্টা ক্রয় করার দাবী জানাচ্ছী।

দাদপুর গ্রামের শহিদুল ইসলাম জানান, আড়াই একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি।  ভুট্টা ৮৫০টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। সরকারী ভাবে ভুট্টা ক্রয় না করায়, ব্যবসায়ীদের বেঁধে দেয়া দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে ।

উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের অম্রবাড়ী গ্রামের কৃষক নজির উদ্দিন বলেন, তিনি এ বছর দুই একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন এবং মাড়াই শুরু করেছেন। দুই একর জমিতে ভুট্টা চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এবছর ভুট্টার বাজার দর সর্ম্পকে তিনি বলেন, গত বছর ৮০ কেজি'র বস্তায় ভুট্টা বিক্রি করেছি ২ হাজার ৪শ' টাকা দরে। অর্থাৎ গত বছর এক হাজার ২শ' টাকা মন দরে ভুট্টা বিক্রি হয়েছে। এবছর ভুট্টার দাম অনেক কম। এবার ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে এক হজার ৪২০ টাকা বস্তা। অর্থাৎ এবার ভুট্টা ৭১০ টাকা মন বিক্রি হচ্ছে। এতে করে লোকসান না হলেও গায়ে গায়ে যাবে। এবছর অন্য জিনিষ-পত্রের দাম অনুযায়ী ভুট্টা দাম অনেক কম।

এদিকে ফুলবাড়ী পৌর বাজারে ভুট্টার আড়ৎদার জাহিদ কাওছার বলেন, আমরা শুকনা ভুট্টা ২৪ টাকা কেজি অর্থাৎ ৯৬০ টাকা মন দরে  ক্রয় করছি। তবে ভুট্টার দাম শুরুর দিকে এক হাজার ৩২০ টাকা মন থাকলেও বর্তমানে কমে গেছে।  দাম কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভুট্টা বেশির ভাগ ব্যবহৃত হয় গোখাদ্য ও বেকারি পণ্য তৈরিতে। কাঁচা ভুট্টা ক্রয় করার পর তা শুকাতে হয়। এতে অনেক ওজন কমে যায়। মিলারদের চাহিদার উপর নির্ভর করে ভুট্টার দাম। উৎপাদন বেশি হওয়ায় ভুট্টার দাম গত বছরের চেয়ে কিছুটা কম।

তাছাড়া  ভুট্টা ক্রয়ের বড় পাটি হলো বিভিন্ন মুরগীর ফার্ম। কিন্তু এবছর অনেক মুরগীর ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে, তাই ক্রেতা  কম এবংভুট্টার আমদানী বেশী, চাহিদা কম,তাই দামও কিছুটা  কম।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ রুম্মান আক্তার জানান,চলতি বছরে ৩ হাজার ৭৮৯ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হযেছে। যা গড় ফলন হেক্টর  প্রতি ১২ টনেরও বেশি।এবছর  ৪৫ হাজার ৫৭৬ টন ভুট্টার উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবছর  উপজেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে,তবে দামের বিষয়টা আমাদের এখতিয়ারে নেই ।