‘আমি জাহাঙ্গীরকে ছাড়া বাঁচব না, মারা গেলেও আর স্বপনের ঘর করব না’ বলে প্রেমের যন্ত্রনায় পাগলের মত মুখে শুধু জবছেন দুটি শবদই। এমন ঘটনার চিত্র ফুটে উঠেছে ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেডে ৩৫ বছরের এক গৃহবধূর। পাশেই বসা তার বাবা, মা ও ছেলে। ভালোভাবে কথা বলতে পারছেন না তিনি।
ওই গৃহবধূ দুই সন্তানের মা। স্বপন মিয়ার সঙ্গে সংসার করছেন প্রায় ২০ বছর। তিনি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌর শহরের খাদ্য গুদামের পাশে চা বিক্রি করেন। স্বপনকে চা বিক্রিতে সহযোগীতা করতেন তার স্ত্রী। এতে যা আয় হয়, তা দিয়ে চারজনের সংসার ভালোই চলচ্ছিল।
দুই বছর আগে স্বপনের সঙ্গে পরিচয় হয় খাদ্যগুদামের গেইটম্যান জাহাঙ্গীর আলমের। তিনিও দুই সন্তানের বাবা। পরিচয় থেকে স্বপন ও জাহাঙ্গীরের সম্পর্ক গড়ায় ভালো বন্ধুত্বে। শুরু হয় একে অপরের বাড়ীতে যাওয়া-আসা। একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর ও স্বপনের স্ত্রীর মধ্যে ভাব গড়ে ওঠে। একে অপরের ভালা লাগা থেকে শুরু হয় মন দেওয়া- নেওয়া। জাহাঙ্গীর গোপনে স্বপনের স্ত্রীকে মোবাইল ফোন কিনে দেন। এরপর মোবাইলে চলে তাদের প্রেমালাপন।
ওই গৃহবধূর বাবা বলেন, ‘গোপনে তাকে (গৃহবধূ) মোবাইল কিনে দেওয়ার পর জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথাবার্তা চলত। মাস খানেক আগে সে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে গোপনে জাহাঙ্গীর তাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। দুই দিন পর তারা বাড়ীতে ফেরত আসে। ঢাকা থেকে ফেরার পর থেকেই তার খাওয়া-দাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। সে কাউকে ঠিকভাবে চিনতে পারছে না। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করি। এখন বারবারই বলছে, “আমি জাহাঙ্গীরকে ছাড়া বাঁচব না-মারা গেলেও আর স্বপনের ঘর করব না’ আমি মরে যাব”।’ বলে গৃহবধূর বাবা আরোও বলেন আমার মেয়ের সর্বনাশ করে দিয়েছে। জাহাঙ্গীরের বিচার চাই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলম ধনবাড়ী উপজেলার বানিয়াজান ইউনিয়নের বাঐজান গ্রামের খলিলুর রহমান ওরফে মুরগী খলিলের ছেলে। জাহাঙ্গীর আলমের বাবা মুরগী খলিল স্থানীয় ওয়ার্ড আয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদে রয়েছেন। স্বপন মিয়া পৌর শহরে শ্বশুরবাড়ীতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন।
এদিকে জাহাঙ্গীর সরকারি চাকরি করায় ও তার বাবা মুরগী খলিল স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময় কতিপয় মাতাব্বরা ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। এ নিয়েও চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
ওই গৃহবধূর স্বামী স্বপন মিয়া বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আমার পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই। জাহাঙ্গীর এখন পলাতক রয়েছে। ঘটনাটি আমি ধনবাড়ী থানায় গিয়ে পুলিশ ও পৌর মেয়র মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকল কে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও জাহাঙ্গীরকে পাওয়া যায়নি।
ধনবাড়ী পৌর মেয়র মুহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকল বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে হাসপাতালে ওই নারীকে দেখতে গিয়েছিলাম। ওই নারীর অবস্থা তেমন ভালো না। দ্রæত তার উন্নত চিকিৎসা করা প্রয়োজন।’
ধনবাড়ী থানার ওসি এইচএম জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভুক্তভোগী পরিবার মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছে। তারা লিখিত অভিযোগ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’