নিজস্ব প্রতিবেদক | আপডেট: বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২৮, ২০২১
পঞ্চগড়ের
আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের মেহের পাড়া গ্রামের মাছচাষি
দেলোয়ার হোসেনকে (৪০) বলতেই হয়
তিনি একজন গর্বিত স্বামী।
কেনইবা বলা হবে না?
যেখানে সতিনদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই
থাকে সেখানে তিন স্ত্রীকে নিয়ে
সুখের সংসার দেলোয়ার হোসেনের। শুধু তাই নয়,
এক স্ত্রীকে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সদস্য (মেম্বার) পদে প্রার্থী করতে
চান তিনি। এতে তাকে সহযোগিতা
করছেন মেজ ও ছোট
বউ।
দেলোয়ার
হোসেনের স্ত্রীরা হলেন-শাহিনা আক্তার
(৩২), আকলিমা বেগম (২৪) ও রত্না
বেগম (২১)। তিনজনই
গৃহিণী। তাদের মধ্যে দারুণ সম্পর্ক। কোনো ঝগড়া-ঝাটি
নেই। এদের মধ্যে বড়
বউ শাহিনা আক্তার এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। তাই
শাহিনা আক্তারকে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ইউনিয়নের
৪, ৫ ও ৬
নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাতে চান দেলোয়ার হোসেন।
এক
মেয়ে ও তিন ছেলেসহ
আটজনের সংসার দেলোয়ারের। সংসারের নানা জটিলতা তারা
কথা বলে সমাধান করেন।
সংসারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে শাহিনা আক্তারের জনপ্রিয়তার কারণে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করতে চান তিনি। তার
পাশে দাঁড়িয়ে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন স্বামীসহ বাকি দুই সতিন।
পারিবারিক সম্মিলিত সিদ্ধান্তে ঐক্যবদ্ধভাবে বড় বউ শাহিনা
আক্তারের জন্য দোয়া চেয়ে
দেলোয়ার তার তিন স্ত্রীকে
নিয়েই বিভিন্ন গ্রামের ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন।
স্বামীর সঙ্গে তিন সতিনের একসঙ্গে
হাসিখুশি চলার এমন ঘটনা
স্থানীয়ভাবে বিরল। বড় সতিনের জন্য
দুই সতিনের এই দোয়া আর
ভোট চাওয়া এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
চলমান
ইউপি নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে দেশের বিভিন্ন
ইউপির সঙ্গে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদেও নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী
২৮ নভেম্বর পঞ্চগড় সদর ও আটোয়ারী
উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ঘোষিত
তফসিল অনুযায়ী, চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী
সদস্য পদে ২ নভেম্বর
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ
তারিখ। মনোনয়নপত্র বাছাই ৪ নভেম্বর ও
প্রত্যাহারের শেষ সময় ১১
নভেম্বর। ভোটগ্রহণ হবে ২৮ নভেম্বর।
নির্বাচনে
আটোয়ারী উপজেলার ৪ নম্বর রাধানগর
ইউনিয়ন পরিষদে ৪, ৫ ও
৬ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান শাহিনা
আক্তার। তবে তিনি এখনো
মনোনয়নপত্র দাখিল না করলেও তফসিল
ঘোষণার পর থেকেই দুই
সতিন ও স্বামীকে নিয়ে
গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। দিনরাত ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে
দোয়া চাচ্ছেন।
ছোট
সতিন রত্না বেগম বলেন, আমরা
স্বামীসহ তিন সতিন মিলে
গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের একসঙ্গে প্রচারণা করতে দেখে অনেকেই
অবাক হচ্ছেন। আমাদের নিয়ে স্থানীয় ভোটাররা
ইতিবাচক আলোচনা করছেন। বড় আপা (বড়
সতিন) এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। আশা
করি তিনি নির্বাচনে জয়লাভ
করবেন।
মেজ
সতিন আকলিমা বেগম বলেন, আমার
স্বামী তিনটা বিয়ে করেছেন। তবে
আমরা একসঙ্গে সুখেই আছি। আমরা নিজেরা
আলোচনা করে বড় আপাকে
ভোটে দাঁড় করিয়েছি। তিনি
জয়লাভ করবেন আশা করি।
সংরক্ষিত
নারী সদস্য পদে প্রার্থী শাহিনা
বেগম বলেন, সুখে-দুঃখে আমরা
তিন সতিন একে অপরের
পাশে দাঁড়াই। এজন্য তারাও সব সময় আমার
পাশে থাকেন। আমি এলাকাতে বেশ
পরিচিত। মানুষের মাঝে নিজেকে আরও
পরিচিত করতে সবার কাছে
গিয়ে দোয়া চাচ্ছি। প্রচারণায়
এলাকার মানুষের অনেক সহযোগিতা পাচ্ছি।
আশা করি আমি জয়লাভ
করবো।
স্বামী
দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি খেটে খাওয়া
মানুষ। এখন মাছ চাষ
করে সংসার চালাই। ১৬ বছর আগে
প্রথম বিয়ে করি। এরপর
১৩ বছর আগে দ্বিতীয়
এবং প্রায় ছয় বছর আগে
তৃতীয় বিয়ে করি। বর্তমানে
তিন বউ ও চার
সন্তান নিয়ে সুখে-শান্তিতে
আছি।
তিনি
বলেন, আমি বিভিন্ন সময়
এলাকার মানুষদের নানা সমস্যায় এগিয়ে
গিয়েছি। জনসেবামূলক কাজে আমার স্ত্রীরাও
আমাকে সমর্থন দেন। আমার বড়
স্ত্রী এলাকায় বেশ পরিচিত এবং
জনপ্রিয়। তাই তাকে জনগণের
সমর্থন নিয়ে সংরক্ষিত নারী
সদস্য হিসেবে ভোটে দাঁড় করাতে
চাই। যাতে গরিব, দুঃখী
ও খেটে খাওয়া মানুষের
সেবা করা যায়। আশা
করি আমরা জয়ী হবো।