ফ্রিডম বাংলা নিউজ

শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪ |

EN

৩ লাখ মুক্তিপনে ৩ যুবকের মুক্তি : গ্রাম পাহারা দল গঠন

টেকনাফে পাহাড়ি দূর্বৃত্তের কবল থেকে ছেলেকে রক্ষা করলো সাহসী বাবা

আমান উল্লাহ কবির, টেকনাফ প্রতিনিধি | আপডেট: রবিবার, মার্চ ২৬, ২০২৩

টেকনাফে পাহাড়ি দূর্বৃত্তের কবল থেকে ছেলেকে রক্ষা করলো সাহসী বাবা
 কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ি দূর্বৃত্তের কবল থেকে স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে রক্ষা করলো সাহসী বাবা। এছাড়া অপর এক অপহরনের ঘটনায় ৩ লাখ টাকা মুক্তিপনে ৩ যুবককে মুক্তি দিয়েছে দূর্বৃত্তরা।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়াস্থ ন্যাচার পার্ক এলাকায়। এসময় বাবা-ছেলে দূর্বৃত্তের কবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও তাদের এলোপাতাড়ি মারধরে দু'জনই আহত হয়েছে।

তারা হচ্ছে মৃত আবদুল খালেকের ছেলে মোহাম্মদ হোছন ও তার  ছেলে ১০ম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছাত্র আবদুল আজিজ।
গত ২৩ মার্চ দিনগত রাত ৯টারদিকে তার নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

মোহাম্মদ হোছন ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো মাগরিবের পর থেকে পড়ার টেবিলে স্কুলের পড়া শিখছিলো আব্দুল আজিজ। পড়া শেষ করে রাত ৯ টারদিকে প্রাকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির উঠানে বের হলে হঠাৎ মুখে কালো কাপড় পরা স্বশস্ত্র ৪-৫ জন দূর্বৃত্ত তাকে ধরে পেলে। এসময় তার চিৎকারে বাবা  হোছন ঘর থেকে দ্রত বের হলে তাকেও ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু সাহসী হোছন সু-কৌশলে দুই জন দূর্বৃত্তের লম্বা বন্ধুক ধরে টানদিলে ছেলে আজিকে ছেড়ে দেয় এবং আজিজ দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ে। এসময় অপর দূর্বৃত্তের বন্ধুকের আঘাতে আজিজের হাত ভেঙ্গে যায়। এদিকে দূর্বৃত্তের সাথে ধস্তাধস্তি ও তাদের বাড়ির সকলের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে দূর্বৃত্তের দল হোছনকে এলোপাতাড়ি মারধর করে এবং এক পর্যায়ে তাকে ফেলে পাহাড়ের দিকে চলে যায় দূর্বৃত্তরা।

এলাকাবাসীরা আরো জানায়, ১৫-২০ জনের দূর্বৃত্তের দল পাহাড়ে অবস্থান করছে দীর্ঘ দিন ধরে। সেখানে বেশিরভাগই রোহিঙ্গা। তাদের ভয়ে এলাকার মানুষ চরম আতংকে দিনাতিপাত করছে।

এদিকে গত ২২ মার্চ দমদমিয়া এলাকার ৩ জন যুবক ও ১৯ মার্চ জাদিমুড়াস্থ জুম্মাপাড়ার একজন কৃষক কে অপহরণ করেছে দূর্বৃত্তরা। তাদের মধ্যে কৃষক ছৈয়দ উল্লাহ ৫ দিন পর ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসে এবং দমদমিয়া এলাকার ৩ যুবক রিদুয়ান সবুজ, মোস্তফা ও রহমত উল্লাহকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকায় মুক্তিপনে রোববার বিকাল ৩ টারদিকে মুক্তি দেয়। মুক্তিপন নেওয়ার জন্য তাদেরকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের শরীরে মারধরের জখম রয়েছে। এর আগে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ চেয়েছি দূর্বৃত্তরা। এমনটি জানিয়েছেন তাদের পরিবার। এতে চরম উৎকন্ঠায় ও উদ্বিগ্ন রয়েছে পরিবারসহ এলাকাবাসী। 

অপরদিকে এখবর সোস্যাল মিডিয়ায় বেশ চাউর হলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। তাদের উদ্ধারে প্রশাসনের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

পবিত্র রমজান মাসে অপহরণ আতংকে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ায় (২৬ মার্চ) রোববার স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. আলী স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এসময় তিনি সম্মিলিত ভাবে দূর্বৃত্তের মোকাবেলা করার সাহস যোগান এবং রাতে পাহারা দেওয়ার জন্য ৪টি দলে বিভক্ত করে পাহারা দল গঠন করেন।

এব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী মেম্বার জানান, রোহিঙ্গা দূর্বৃত্ত পাশের পাহাড়ে অবস্থান করে শান্ত এলাকাকে অশান্ত করে তুলছে। যে কাউকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছে। তারা স্বশস্ত্র হওয়ায় ভয়ে রয়েছে এলাকাবাসী। তাদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চালানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবী জানান।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) নাছির উদ্দীন জানান, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উল্লেখ্য,  গত ১৬ মার্চ উপজেলার বাহারছড়ার ইউপির জাহাজপুরা এলাকা থেকে ৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। তারা হলেন,কলেজ শিক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিন (১৭), রশিদ আলম (২৬), জানে আলম, (৪৫),জাফর আলম (৪০),জাফরুলইসলাম (৩০),ফজল করিম (৩০) ও আরিফ উল্লাহ (৩০) । তারা সকলেই বাহারছড়া ইউপির পূর্ব মাঠ পাড়া এলাকার বাসিন্দা।
পৃথক মুক্তিপনের মাধ্যমে তারাও ফিরে আসে।