Can't found in the image content. জুতা ঘরের বাইরে রাখুন, বলছেন বিজ্ঞানীরা | ফ্রিডম বাংলা নিউজ
ফ্রিডম বাংলা নিউজ

বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪ |

EN

জুতা ঘরের বাইরে রাখুন, বলছেন বিজ্ঞানীরা

ফিচার ডেস্ক | আপডেট: শনিবার, মার্চ ১১, ২০২৩

জুতা ঘরের বাইরে রাখুন, বলছেন বিজ্ঞানীরা
বাংলাদেশে একসময় অনেক বাড়ির সদর দরজার ওপরে একটা লাইন স্টিকার হিসেবে আটকানো থাকত। 'জুতা বাইরে রাখুন'-এ লেখাটি দেখে কেউ আর ঘরের ভেতরে পাদুকাজোড়া নিয়ে প্রবেশ করার সাহস করতেন না।

ঘরে কার্পেট বিছানো থাকলে এমনিতেই বাইরের জুতা নিয়ে আর ঘরে ঢোকার অবকাশ থাকে না। কোনো কোনো বাড়িতে অলিখিত নিয়মই থাকে, জুতা নিয়ে ঘরে প্রবেশ করা যাবে না। কক্ষের ভেতের হাঁটাচলার জন্য আলাদা জুতার ব্যবস্থা রাখা হয় এসব বাড়িতে।

জুতা বাইরে রেখে এলে প্রথমত ঘর পরিস্কার থাকে। বাইরের জুতা পরে ঘরে প্রবেশ করে যাওয়ার জন্য অনেক সন্তানই মা-বাবার কাছে বকা খায়। দরজায় জুতা ত্যাগের আরেকটি সুফল হলো এতে করে বাইরে থেকে জুতায় করে নিয়ে আসা জীবাণুগুলো ঘরে প্রবেশ করে না।

তাহলে বিজ্ঞান কী বলছে এ বিষয়ে? বিজ্ঞানীদের মতে জুতা বাইরে রেখে ঘরে প্রবেশ করাটাই উত্তম। চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন আপনি 'জুতা বাইরে রাখবেন'।

আপনার বাড়িতে কী কী সংক্রামক থাকে?
ভাবছেন ঘরের ভেতর জুতা পরবো নাকি পরবো না- এ নিয়ে এত গবেষণা করার কী আছে। একজন মানুষ তার ৯০ ভাগ সময় ঘরেই কাটায়, তাই জুতার প্রশ্ন এতটাও ফেলনা নয়।

সচরাচর বাইরের পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বেশি থাকলেও ঘরের ভেতরের দূষণ নিয়েও বর্তমানে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।

আপনার ঘরের ভেতরে বাতাসের মধ্যে মানুষ ও পোষাপাখির দেহ থেকে আসা ধুলাবালির বাইরেও অন্য অনেক উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে অনেক দূষিত বস্তুই আসে বাইরে থেকে। আর এগুলো ঘরে প্রবেশ করার একটি প্রধান মাধ্যম হলো জুতার মাধ্যমে।

মানুষের জুতা ও ঘরের মেঝেতে থাকা কিছু মাইক্রোঅর্গানিজম হচ্ছে ঔষধ-প্রতিরোধী প্যাথোজেন। এসব জীবাণু দমন করা কিছুটা কঠিন। যেমন পিচের রাস্তায় এমন সব ক্যান্সারের ঝুঁকিপূর্ণ টক্সিন রয়েছে যা জুতায় আটকে যেতে পারে।

ঘরের ভেতরের জীবাণুরা
ডাস্টসেইফ নামের একটি প্রকল্পের আওতায় কয়েকজন বিজ্ঞানী ঘরের ভেতরে দূষিত পদার্থের উপস্থিতি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের অনুসন্ধানে ঘরের ভেতরে থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলোর একটি তালিকা পাওয়া গিয়েছে।

এ তালিকায় রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী জিন, যেগুলো ব্যাকটেরিয়াকে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষম করে তোলে। এছাড়া আছে জীবাণুনাশক হিসেবে ব্যবহার করা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, মাইক্রোপ্লাস্টিক, রেডিওঅ্যাকটিভ উপাদান, ও পারফ্লুওরিনেটেড কেমিক্যাল যা পিএফএএস নামেও পরিচিত। এ রাসায়নিক উপাদানটি শরীরে প্রবেশ করলে নষ্ট না হয়ে দীর্ঘসময় অবস্থান করতে পারে।

এ গবেষকদল বিশ্বের ৩৫টি দেশের ঘরের ভেতরে আর্সেনিক, ক্যাডিয়াম, সীসার মতো বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা নিরূপণ করার দিকেও বিশেষ নজর দিয়েছেন।

এ রাসায়নিক পদার্থগুলোর না আছে রং, না গন্ধ। তাই আপনি খুব সহজে বলতে পারবেন আর্সেনিক কী কেবল আপনার বাড়ির টিউবওয়েলে আছে নাকি আপনার শোয়ার ঘরেও প্রবেশ করে ফেলেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে এসব বাড়ির উঠানে যে ধরনের সীসা পাওয়া যায়, ঘরের ভেতরেও একই সীসার অস্তিত্ব রয়েছে। আর এ স্থানান্তরের সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে মানুষের জুতা ও বাড়ির পোষা প্রাণীর পা।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রকাশিত একটি নিবন্ধের দাবি অনুযায়ী, ঘরের ভেতরের জুতা অতটা খারাপও নয়। ওই নিবন্ধের লেখকের মতে, ই-কোলাই-এর মতো ভয়ংকর ব্যাকটেরিয়াও তো প্রায় সব জায়গায় ছড়িয়ে আছে। তাই জুতার তলা দিয়ে এ ব্যাকটেরিয়া ঘরে প্রবেশ করাটাই স্বাভাবিক।

তবে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া ভালোভাবে আক্রমণ করলে কিন্তু মানুষকে বেশ ভুগতে হয়। তার ওপর ই-কোলাই মানুষ ও প্রাণীর বিষ্ঠাতে পাওয়া যায়। তাই শুধু শুধু এ বিচ্ছিরি ব্যাকটেরিয়াটিকে জুতার তলা দিয়ে ঘরের ভেতরে নিয়ে আসবেন কেন! তার চেয়ে বরং জুতাজোড়া দরজার বাইরে খুলে রাখাই শ্রেয় নয়?

জুতা বাইরেই রাখুন তবে
এখানে হয়তো আরেকটি প্রশ্ন করা যায় যে জুতা ঘরের ভেতর না পরার ফলে কি কোনো ক্ষতি হতে পারে?

জুতা পরা থাকলে চেয়ারের পায়ার সাথে বা আলমারির কোনে হোঁচট খেলে হয়তো ব্যথাটা একটু কম পাবেন, কিন্তু পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে ঘরের ভেতর জুতা না আনার বিশেষ কোনো ক্ষতি নেই।

তবে এ লেখার শুরুতে যেমনটা বলা হয়েছিল, অনেক বাড়িতেই কেবল ঘরের ভেতর পরার জন্য আলাদা করে জুতা রাখা হয়। আপনার পক্ষে সম্ভব হলে আপনিও তা করতে পারেন। খুব বেশি দামি জুতা তো কেনার প্রয়োজন নেই। বিশেষত আজকাল অনেক কম দামেই এরকম 'ইন্ডোর শু' পাওয়া যায়।

তবে এক্ষেত্রে একটি ভাবনার বিষয় রয়েছে। ঘর বেশি পরিষ্কার করে ফেললে তথা সব জীবাণু মেরে ফেললে ঘরের ভেতর 'স্টেরিল হাউজ সিনড্রোম' তৈরি হয়। এর ফলে বাচ্চাদের অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে যায়। এটা সত্য কিছু ধুলাবালি বা জীবাণু শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় কারণ এগুলো দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে ও অ্যালার্জির ঝুঁকি কমায়।

কিন্তু সেজন্য আরও তো উপায় রয়েছে। বাইরে ঘুরে বেড়াতে পারেন, বাড়ি থেকে একটু দূরে হেঁটে আসতে পারেন। বাইরের দুনিয়া সত্যিই অনেক সুন্দর; এটা উপভোগ করতে কখনো ইতস্তত করবেন না।

কেবল ওই সুন্দর বাইরের অসুন্দর উপাদানগুলো পায়ে করে ঘরে নিয়ে আসবেন না যেন।

সূত্র: সিএনএন