মানিকগঞ্জের সিংগাইরের রিফাতপুর গ্রামের এক বিশাল এলাকা জু্ড়ে রয়েছে তিন ফসলী জমি। এসব জমিতে প্রথমে চাষ হয় সরিষার, দ্বিতীয় দফায় চাষ হয় ইরি ধান এবং সর্বেশেষ চাষ হয় আমন ধান। আর সেজন্যই এসব জমিকে তিন ফসলী জমি নামকরণ করা হয়েছে।
তবে বর্তমানে কিছু ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে এসব জমির মাটি কেটে নিয়ে ইটভাটায় বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার মালেক নামের এক মাটি ব্যবসায়ী রাতের আধারে ফসলী জমি থেকে দেদারসে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করছে পাশ্ববর্তী ইটভাটাগুলোতে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করার জন্য কৃষিজমি, পাহাড় বা টিলা থেকে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে তা ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করতে পরবে না। কিন্তু এর প্রয়োগ না থাকায় ভাটার মালিকরা বেপরোয়া। তারা মানছে না এ আইন। এছাড়া অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধেও নেওয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। মানা হচ্ছে না নীতিমালা। দিন দিন তিন ফসলি জমির কেটে নেওয়া হচ্ছে মাটি।
অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়ে তিন ফসলী জমির মালিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, এই পুরো এলাকা জুড়ে বছরে তিন বার তিন রকমের ফসল উৎপাদন হয়। তবে ইদানীং মাটি ব্যবসায়ী মালেক তার সহযোগীদেরকে নিয়ে ফসলী জমির মাটি কেটে নিয়ে যায়। রাত ৯ টার থেকে ভোরবেলা পর্যন্ত চলে মাটি কাটার মহোৎসব। এরপর তা ইটভাটায় বিক্রি করে। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে অভিযোগ জানানো হয়।
লিখিত অভিযোগ জানানোর পর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জসিম উদ্দিন গত ৫ মার্চ রাতে এলাকায় অভিযান চালালে মাটি দস্যুরা মাটি কাটা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। তবে অভিযান শেষে তিনি চলে যাওয়ার পর আবারও মালেকের সহযোগীরা মাটি কাটা শুরু করে।
এ বিষয়ে কৃষক ফজল আলী ও তার ভাই আনোয়ার আলী বেপারী জানান, রিফাতপুরের চকে ৮০ শতাংশ জমিতে ইরি ধান আবাদ করেছেন তারা। পাশের জমি থেকে গভীর করে মাটি কেটে নেওয়ার ফলে তাদের ধানখেত এখন ভেঙে পড়ার উপক্রম।
তারা আরো জানান, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট (এসিল্যান্ড) আব্দুল মালেক নামে এক জনকে গত ২৬ জানুয়ারি আটক করে তিন মাসের জেল দেন। তবে এরপরও অবৈধভাবে মাটি কাটা বন্ধ হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জসিম উদ্দিন জানান, উপজেলার বেশকিছু জায়গা থেকে লিখিত অভিযোগ আসছে ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়ে। রিফাতপুর গ্রামের অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা অভিযানে যাই তবে আমাদের আসার বিষয়টি টের পেয়ে গেলে মাটি কাটা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। রাত ১-২ টা নাগাদ সেখানে অবস্থান করি তবে তাদের কোনো সন্ধান পাওয়ায় যায়নি। তবে আমি তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি। মাটি দস্যুদের ধরতে পারার সাথে সাথে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং মাটি কাটা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত অভিযান চলবে।
রিফাতপুরের মাটি কাটার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক দেবনাথ বলেন, মাটি কাঁটার ওখানে ভূমি অফিসার অভিযান পরিচালনা করেছেন তবে অভিযুক্তরা পালিয়ে গেছে বিধায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি্। তবে দ্রুত এ বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।