জায়গা জবর-দখল করতে মধ্যযুগীয় কায়দায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে গাছের সঙ্গে বেঁধে বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন চৌধুরীর (৭০) ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ উপজেলাজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন সাধারণ জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধারা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতনের ঘটনায় তার কন্যা মাজেদা বেগম বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর থানা পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। এ ঘটনায় সর্বত্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার সকালে উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মন্দাকিনী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন চৌধুরী উক্ত গ্রামের নজর মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়ির মৃত ফারুক আহমেদের পুত্র।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শাহিদুল আলম বলেন, ঘটনাটি আসলে খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি অবহিত হয়ে মঙ্গলবার বিকালে তাৎক্ষণিক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে আমি ঘটনাস্থলে যাই। নির্যাতনের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধার ভিটের সাথে লাগোয়া জায়গা দখল নিতে প্রতিপক্ষের লোকজন তার ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং তার জায়গায় নির্মিত পাকা দেয়ালটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে আইনানুগ সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন ইউএনও।
এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল আলম এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর ইউএনও মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দুষ্কৃতকারীদের কঠোর শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।
এ ধরনের নির্মম ঘটনা সংঘটিত হলেও স্থানীয় বিচারের আশায় এ মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাটি প্রকাশ করেনি। তবে ঘটনার এক সপ্তাহ পর মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে পড়লে উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসার পর নির্যাতিত ওই মুক্তিযোদ্ধার কন্যা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়ের করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমিন সবুজ। তিনি জানান, উপজেলা ফরহাদাবাদ এলাকায় এক মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতন করার ঘটনায় তার কন্যা মাজেদা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের মন্দাকিনী গ্রামের নজর মোহাম্মদ চৌধুরী বাড়ির মৃত তোফাজ্জল হোসেনের পুত্র লোকমান হাকিম (৫০), তার স্ত্রী নাহিদ সুলতানা (৪০) এবং তাদের সন্তান ইমরাজ হাকিম (২২) ও মিশকাত হাকিমকে (১৬)।
ঘটনার মূল ইন্ধনদাতা নাহিদ সুলতানাকে আটক করা হয়েছে; কিন্তু ঘটনার পর থেকে মামলার আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের এখনো পর্যন্ত আটক করা যায়নি। তবে তাদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি।