বিয়ের আসরে বধূ সেজে বসে আছেন কনে। অপেক্ষা বরের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃৎস্পন্দনের গতি যেন বাড়ছে কনে ও তার পরিবারের। তৈরি হচ্ছে আশঙ্কা। কারণ হদিস মিলছে না বরের। অপেক্ষা গড়াল ২ দিনে।
অবশেষে কনেপক্ষ বুঝতে পেরেছে প্রতারিত হয়েছেন তারা। রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঘটনাটি ঘটেছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায়। এতে কনে ও তারপরিবার খুবই ভেঙে পড়েছেন।
কনের মামা জানান, দুই পরিবারের দেখাশোনার পর বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়। ছেলের নাম হুসাইন। বর্তমানে বরিশাল লেবুখালী সেনানিবাসে কর্মরত। তিনি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী ওমর ফারুকের ছেলে। ছেলে ও তার পরিবারের সিদ্ধান্তেই গত রোববার বিয়ের দিন নির্ধারিত ছিল। দেনমোহর ধার্য হয় ৭৫ হাজার টাকা।
এর দুদিন আগে ছেলে ও তার পরিবারের সদস্যরা মেয়ের নাকের নথ পরিয়ে দিয়ে আসেন। রোববার ২০-২৫ জন বরযাত্রীসহ বর আসার কথা কনের বাড়িতে। সমস্ত আয়োজন করে প্রতীক্ষায় ছিল কনের পরিবার। শেষমেশ বিকেলে কনেপক্ষের লোকজন জানতে পারে গ্রামের একটি মেয়েকে অজানা উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছে বর হুসাইন।
তিনি আরও বলেন, বিয়েতে যদি মত নাই থাকে তাহলে ছেলে নিজ থেকেই আমার ভাগ্নিকে দুইবার কেন দেখতে আসল? এছাড়া শুনেছি ছেলে তার নিজ কর্মস্থলে উলটো মেয়ের পরিবার ও নিজের বাবার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বিবাহ দেয়ার অভিযোগ করেছে। এরপর আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, সম্প্রতি ছেলের বাবা বিদেশ থেকে বাড়িতে আসেন। বাবাকে সঙ্গে নিয়ে হুসাইন বিভিন্ন গ্রামে মেয়ে দেখতে শুরু করে। এক মাসে তারা ১৫ থেকে ১৮ স্থানে মেয়ে দেখেন। সব ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেনি। সে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
তিনি বলেন, আমার ভাগ্নি জীবন নিয়ে খেলা করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও লড়ব। যাবতীয় প্রমাণাদিসহ তার কর্মস্থলে যাবো। মেয়ের বাবা একজন অসহায় শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি তার শেষ সম্বল দুটি গাভী বিক্রি করে মেয়ের সুখের জন্য ছেলের দাবিকৃত মেয়ের সোনার গয়না ও হবু জামাইয়ের জন্য একটা পালসার মোটর সাইকেল দিতে রাজি হন। এ অবস্থায় কনে ও তার বাবা খুবই ভেঙে পড়েছেন। দুই থেকে তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি প্রতারকের বিচার দাবি করেছেন।
ফুলবাড়ি গ্রামের ইউপি সদস্য তোফায়েল আহমেদ লিটন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা মোটেও ঠিক হয়নি। জেনেছি কর্মস্থল থেকে বিয়ের অনুমতি ছিল না ছেলের। তারপরও পরিবারের সঙ্গে নিজেই দেখাশোনা করে বিয়ের দিন ঠিক করে এখন উধাও হওয়ায় ঘটনা মোটেও ঠিক হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে একটা মেয়ে ও তার পরিবারের কি পরিমাণ কষ্ট হয় সেটা আমরা বুঝি। কেন এমন হলো বিস্তারিত জানতে ছেলের পরিবারের সঙ্গে কথা বলব।