চ্যাটজিপিটির সাহায্যে লেখা প্রচুর গল্প জমা পড়ায় নিজেদের প্রকাশনায় গল্প জমা নেওয়ার কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে আমেরিকান ম্যাগাজিন ক্লার্কসওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) টুইটারে এক বিবৃতির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ও ফ্যান্টাসিভিত্তিক এই মাসিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক নিল ক্লার্ক।
হুগো অ্যাওয়ার্ডজয়ী এ ম্যাগাজিনের সম্পাদক তার বিবৃতিতে বলেন, "গল্প জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ আছে। সেটা কেন তা অনুমান করা খুব কঠিন নয়।" তার এ বিবৃতির জবাবে জনৈক টুইটার ব্যবহারকারী যখন তাকে পরামর্শ দেন, নিল চাইলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে লেখা গল্পগুলো চিহ্নিত করতে এআই টুল (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কোনো যন্ত্র) ব্যবহার করতে পারেন; তখন ক্লার্ক জবাব দেন- "এসব ডিটেকশন টুলের কোনোটাই আসলে তেমন নির্ভরযোগ্য না।"
২০২২ সালের শেষের দিকে, যখন ওপেনএআই'র চ্যাটজিপিটি টুল জনপ্রিয় হতে শুরু করে; তখন থেকে ক্লার্কসওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের কাছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে লেখা গল্প-উপন্যাস আসতে শুরু করে। বর্তমানে এটি চরম রূপ ধারণ করেছে জানিয়ে পাঁচদিন আগেই একটি ব্লগপোস্ট লিখেছিলেন নিল ক্লার্ক। এরপরেই ম্যাগাজিনের সর্বশেষ সিদ্ধান্তটি আসে।
ক্লার্কের প্রদত্ত ডেটা থেকে দেখা গেছে, ২০২২ সালের অক্টোবরের আগে ক্লার্কসওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনকে প্লেজারিজম বা এআই অথবা চ্যাটবট দিয়ে লেখা গল্প-প্রবন্ধ পাঠানোর দায়ে প্রতি মাসে ২৫ জনেরও কম লেখককে নিষিদ্ধ করতে হতো। কিন্তু ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৫০ জনে দাঁড়ায়।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে একই অভিযোগে নিষিদ্ধের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ১২০ জনে দাঁড়ায়। কিন্তু ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে, অর্থাৎ চলতি মাসে এক লাফে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয় ম্যাগাজিনটি।
অন্যান্য সম্পাদকদের সাথে কথা বলে নিল ক্লার্ক দেখেছেন, তার ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে এই নকল লেখা জমা দেওয়ার পরিমাণ অনেক বেশি। তার ভাষ্যে, "এসব লেখা ফিরিয়ে দেওয়া বা নিষিদ্ধ করা এতদিন খুব সহজ ছিল, কিন্তু এখন এটি যে হারে বাড়ছে তাতে নিয়মে পরিবর্তন আনা অত্যাবশ্যক। আর প্রযুক্তিও দিন দিন উন্নতই হচ্ছে, ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে এবং নকল লেখা চিহ্নিত করা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে।"
ক্লার্ক আরও যোগ করেন, তার ম্যাগাজিনের মতো যেসব প্রকাশনা আছে তাদের হয়তো লেখা জমা নেওয়ার ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ করতে হবে এবং শুধুমাত্র 'পরিচিত' লেখকদের কাছ থেকে লেখা গ্রহণ করতে হবে; কিংবা জমাদানকারীকে নিজের কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে যা দিয়ে তাকে চেনা যায়। কিন্তু এসবের কোনো উপায়ই নিল ক্লার্কের মনঃপূত হচ্ছে না।
তিনি বলেন, "এটা খুবই স্পষ্ট যে ব্যবসা টেকসই হবে না এবং এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে হয়তো তা নতুন ও আন্তর্জাতিক লেখকদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।"
নিল ক্লার্কের ব্লগপোস্টে অনেকেই তার সাথে সহমত প্রকাশ করলেও, কেউ কেউ আবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেওয়াকে সমর্থন করেছেন। জনৈক ব্যক্তি লেখেন, "আমার আইডিয়াগুলো চ্যাটজিপিটিকে দিতে পারা এবং সেগুলো গুছিয়ে আনা, আমার সঙ্গে গল্পের চরিত্র সেজে কথা বলা- এগুলো আমার খুবই দরকার ছিল। বলা যায়, এভাবে আমি পুরো একটা উপন্যাস তৈরি করেছি।"
কিন্তু একথা বলাই বাহুল্য যে- উপন্যাস 'তৈরি করা' আর উপন্যাস 'লেখা'র মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু বাস্তব আর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মধ্যে যখন সংঘর্ষ হয় তখন এমনটাই ঘটে!
সূত্র: ফাস্ট কোম্পানি