এক ভাষার সঙ্গে অন্য ভাষার কোনও দ্বন্দ্ব নেই। তবে নিজের মাতৃভাষাটা সঠিকভাবে জানতে হবে, বলতে হবে, পড়তে হবে, শিখতে হবে, শ্রদ্ধাটাও থাকতে হবে- এমনই মন্তব্য করলেন অভিনেত্রী রাশিয়াদ রশিদ মিথিলা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা-দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি নিয়ে নিজের স্মৃতি ও দিনটির মূল্যবোধ নিয়ে কথা বলেছেন। সেখানেই অভিনেত্রী বলেন, আজকাল কথা বলতে গেলে ইংরাজি মিশে যায়। সেটাও শিক্ষা ব্যবস্থার কারণেই হয়েছে। কারণ অনেকেই ইংরাজি মাধ্যমে পড়েন। যেকারণে ছোটরা অনেকেই ইংরাজিটা স্বচ্ছন্দেই বলে। এই বিশ্বায়নের সময়ে ছোট থেকেই বাংলাদেশের শিশুরা ইংরাজিতে কথা বলছে, ছবি দেখছে, গান শুনছে। শুধু ইংরাজি কেন, অন্যভাষার সঙ্গেও পরিচিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন অনেকের কাছেই ভীষণ পরিচিত কোরিয়ান ব্যান্ডস, কোরিয়ান ড্রামা ভীষণ পরিচিত, এছাড়াও জাপানিস, ফ্রেঞ্জ, অ্যারাবিক, আর হিন্দি তো আছেই। ইংরাজিটা পৃথিবীর যেকোনও জায়গায় ব্যবহার করা যায়, তাই এটা এখন শেখানো হয়। আমার আসলে মনে হয়, এক ভাষার সঙ্গে অন্য ভাষার কোনও দ্বন্দ্ব নেই। তবে নিজের মাতৃভাষাটা সঠিকভাবে জানতে হবে, বলতে হবে, পড়তে হবে, শিখতে হবে, শ্রদ্ধাটাও থাকতে হবে।
নিজের উদ্যোগের কথা জানিয়ে মিথিলা বলেন, আমিও শিল্পী হিসাবে এখন একটা ছোট্ট উদ্যোগ নিয়েছি। শিশুদের জন্য বাংলায় গল্পের বই লিখতে শুরু করেছি। সেটা ৪ থেকে ৮ বছরের শিশুদের জন্য। আমি শিশুদের নিয়েই কাজ করি। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে আমার ৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। আর সেটা বাংলায়। কারণ, বাংলায় শিশুদের জন্য এখন আগের মতো ভালো বই পাওয়া যায় না। তাই বাংলাতেই লিখব ঠিক করি। একটা সিরিজ শুরু করেছি, 'আইরা ও আর মায়ের অভিযান' নামে।
আরও যুক্ত করে মিথিলা বলেন, যেটা দুটো সিরিজ বের হয়েছে। আমি এটা লিখেছি, কারণ আমার মেয়ে আইরা আর আমি একসঙ্গে প্রচুর ভ্রমণ করেছি। আমার কাজের জন্যই আফ্রিকায় যেতে হয়, বিভিন্ন দেশে যেতে হয়, সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই লিখছি, এছাড়াও আমি বাংলা নিয়েই থাকি, দুই বাংলাতেই অভিনয় করছি, বাংলায় গান লিখেছি, গেয়েছি, বাংলা আমার কাছে সবথেকে আগে। শিল্পী হিসাবে এবং মানুষ হিসাবেও নিজের বাংলা ভাষার জন্য এইটুকুই করার চেষ্টা করছি।
শৈশবের একুশে ফেব্রুয়ারি মনে করে অভিনেত্রী বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শহিদ মিনার আছে, সেখানে ছোট থেকেই এই দিনে বাবা আমায় নিয়ে যেতেন। ছোট ছিলাম, ভিড়ে দেখতে পেতাম না, বাবা কোলে তুলে, উপরে তুলে সেই শহিদ মিনারে মানুষজনের শ্রদ্ধা নিবেদন দেখাতেন। এরপর লাইন দিয়ে গিয়ে সেখানে ফুল দিতাম। পরে যখন বড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, তখন তো নিজেরাই এই দিনটির উদযাপন করেছি।
তিনি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি শোকের দিন, কারণ দিনটি বহু ভাষাশহিদের রক্তে ভেজা, তবে একই সঙ্গে এই দিনটি আমাদের গর্বের, এই দিনে আমাদের উৎসব হয়। এই দিনেই তো আমরা আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার ফিরে পেয়েছি, তবে বাংলাদেশ বহু আগে থেকে থাকলেও বাংলা ভাষা আন্দোলের পরই আসলে বাংলাদেশ আসল স্বীকৃতি পায়।