প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ইলিশ শিকারিদের জেল-জরিমানা ও অস্থায়ী বাজার উচ্ছেদ করলেও থামেনি ইলিশ বিক্রি। নদী ও চরগুলোতে স্থায়ীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাম্প না থাকায় মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুরের জাজিরা, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং, ঢাকার দোহার, ফরিদপুরের সদরপুর অংশের পদ্মা নদী ও চরগুলোতে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মা ইলিশসহ ছোট-বড় ইলিশ।
কাশবনের ফাঁকে অস্থায়ী তাঁবু টাঙিয়ে চলছে ইলিশ কেনাবেঁচা। অনেক সময় সেই মাছ নদীর চরে রেখেই মুঠোফোনের মাধ্যমে নদীপারের প্রত্যন্ত বাজারে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা নানা উপায়ে পৌঁছাচ্ছেন প্রত্যন্ত এসব এলাকায়। নদীর পারে বসেছে অস্থায়ী তাঁবু টানিয়ে হাট-বাজার।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মা ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের নিষেধাজ্ঞাসহ বিশেষ অভিযান চলছে। ইলিশ নিধনে সরকারের নিষেধজ্ঞা বাস্তবায়নে অভিযানের শুরু থেকেই জেলার শিবচরের পদ্মা নদী ও সংলগ্ন চরগুলোতে প্রশাসনের ব্যাপক অভিযান চলছে। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে কয়েকটি হাট-বাজারের শতাধিক অস্থায়ী স্থাপনাও উচ্ছেদ করে। তবে নদী ও চরগুলোতে স্থায়ীভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী না থাকায় সুযোগ পেয়েই জেলেরা নদীতে নেমে পড়ছেন।
পদ্মাপাড়ের চর ঘুরে আরও জানা যায়, মাদারীপুরের শিবচর, শরীয়তপুরের জাজিরা, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং, ঢাকার দোহার, ফরিদপুরের সদরপুরসহ পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ জলরাশি ও চরগুলোতে প্রশাসন চলে গেলেই শুরু হচ্ছে ইলিশ নিধনের মহোৎসব। ধরা পড়া মাছগুলোর পেট ভরা ডিম। জাটকাও ধরা পড়ছে। ভাটি অঞ্চলে কোস্টগার্ড, নেভি ও নৌপুলিশ নদীতে সার্বক্ষণিক থাকায় উজানের এসব অঞ্চলের নদীতে এখন ইলিশের ছড়াছড়ি হওয়ায় জেলেরা নিধনযজ্ঞে নেমেছেন। চরের যে এলাকাগুলোতে সড়কযোগাযোগ নেই, সেখানেই বসছে বাজার।
সরেজমিনে গিয়ে আরও জানা যায়, কাশবনগুলোতে গড়ে তোলা হয়েছে জেলেদের আবাসস্থল ও অস্থায়ী আড়ত। অনেকে ইলিশের স্বাদ নিতে আসছেন পিকনিকে।
মা ও জাটকা ইলিশ সংরক্ষণে সরকারঘোষিত ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুমে নিধন বন্ধে সার্বক্ষণিক অভিযান ছাড়াও কোস্টগার্ড ও নেভি নদীতে স্থায়ীভাবে নিয়োগের দাবি ইলিশভোজি সাধারণ মানুষের। চলতি অভিযানে শিবচরেই প্রায় ২০০ জেলেকে এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কাশবনগুলোতে গড়ে তোলা হয়েছে জেলেদের আবাসস্থল ও অস্থায়ী আড়ত
এব্যাপারে জেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় আমাদের শিবচরের প্রশাসনে অনেক কড়াকড়ি থাকলেও মুন্সিগঞ্জ, জাজিরাসহ অন্য অঞ্চলে প্রশাসন ততটা কড়াকড়ি নেই। তাই আমরা ওই সব অঞ্চলে গিয়ে মাছ ধরে চরেই বিক্রি করি। শহরের কোনো হাট-বাজারে যাই না। এখানে অনেক ধরনের ক্রেতা আসে, আমরাও তাদের একটু কম মূল্যে মাছ দিয়ে থাকি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, ‘শুনেছি পদ্মার চর মাদবরচরের খাড়াকান্দি এলাকায় কম দামে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। তাই ট্রলারে ভেঙে ভেঙে এই চরে এসে কিছু মাছ কিনলাম। তবে মাছের দাম বেশি মনে হচ্ছে। যে পরিমাণে কম হওয়ার কথা, সেই পরিমাণে কম পাচ্ছি না। প্রশাসনেরও ভয় আছে। তবু মাছ কিনলাম।’
চরজানাজাতের স্থানীয় বাসিন্দা আল-আমিন শেখ বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের লোকজন নদীতে দিনে দুইবার নামমাত্র টহল দেয়। পাড়ে কেউ আসে না। চরগুলোতে অস্থায়ী বাজার বসিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইলিশের হাট বসে। নিষেধাজ্ঞার সময় নদীতে যদি স্থায়ীভাবে টহলের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে মা ইলিশ নিধন বন্ধ করা সম্ভব।’
এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত দফায় দফায় পদ্মায় অভিযান পরিচালনা করছি। জেলেদের জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। চরগুলোতে অভিযান চালিয়ে শতাধিক ইলিশ বিক্রির স্থাপনা উচ্ছেদও করা হয়েছে। তবে মা ইলিশ রক্ষায় স্থায়ীভাবে নদী ও চরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন। তাহলেই কার্যকর ব্যবস্থা হবে। না হলে সুযোগ বুঝে অসাধু মাছ শিকারিরা ইলিশ নিধন করবেই।’
এ ব্যাপারে শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিরাজ হোসাইন বলেন, ‘আমরা মাঝে মাঝেই অসাধু ইলিশ শিকারিদের ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করাচ্ছি। তবে জেলেরা কৌশলে সন্ধ্যা বা গভীর রাতে ইলিশ ধরে ক্রেতাদের কাছে কাশবনে বসেই বিক্রি করছে। আমাদের যাওয়ার আগেই তারা সরে যায়। ট্রলার বা স্পিডবোট নিয়ে গেলে তারা দূর থেকে দেখে পালিয়ে যায়। যে কারণে ওদের ধরার কোনো সুযোগ নেই। আমরা বিভিন্ন পয়েন্টে টহল দিচ্ছি ইলিশ ধরা রোধ করতে।’